শিকারের মহোৎসব চলছে। হাঙ্গরের শুঁটকি লাভজনক হওয়ায় কুয়াকাটা শুঁটকি পল্লীতে অন্যান্য মাছের পরিবর্তে হাঙ্গরের শুঁটকির জন্য করা হয়েছে অতিরিক্ত মাছা। হাঙ্গরের শিকারের এ ভয়াবহতা দেখে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা পর্যটকরা দেখে আতকে উঠছেন। অথচ হাঙ্গর শিকার বন্ধে নেয়া হয়নি কোনো আইনি পদক্ষেপ।
শুঁটকি পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, গোটা শুঁটকি পল্লীর শুঁটকির মাছায় ৮ থেকে ৯ ইঞ্চি সাইজের হাজার হাজার হাঙ্গরের বাচ্চা কেটে মাছায় শুকানো হচ্ছে। গত এক মাস ধরে সাগরে লাখ লাখ হাঙ্গর ধরা পড়ায় জেলেরা অন্য মাছ শিকারের পরিবর্তে শুধু হাঙ্গর শিকার করছে। প্রতিটি মাছ ধরা ট্রলারে প্রতিদিন ৭ শত থেকে প্রায় ৩ হাজার পর্যন্ত হাঙ্গর শিকার করছে। সাগরে মাছ ধরায় নিযুক্ত খুটা জেলেরাও হাঙ্গরের বাচ্চা শিকার করে শুঁটকি পল্লীতে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছে। প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত শুঁটকি পল্লীতে হাঙ্গর বিক্রি করা হচ্ছে। এরপর সারা রাত ধরে চলে হাঙ্গর কেটে মাচায় শুকানোর প্রক্রিয়া। হাঙ্গর শুঁটকি করতে ৪/৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগে বলে সংশ্লিষ্ট শুঁটকি শ্রমিকরা জানান। সাগর থেকে মাছ শিকার করে আসা নাম বিহীন একটি ট্রলারের জেলে মো. সোলায়মান মিয়া জানায়, সাগরে হাঙ্গরের বাচ্চা ছাড়া তেমন কোনো মাছ পাওয়া যায় না। তাই হাঙ্গর ধরে এনে শুঁটকির জন্য বিক্রি করা হচ্ছে।
জেলে আব্বাস মিয়াসহ একাধিক জেলে জানায়, হাঙ্গর শিকারের জন্য তারা বিভিন্ন প্রকারের জাল ব্যবহার করে। সাধারণত শীতকালেই বেশি হাঙ্গর ধরা পড়ে। প্রচণ্ড শৈত্য প্রবাহ ও ঘনকুয়াশা পড়লে সমুদ্রের তলদেশে পানির তাপমাত্রা কমে গেলে হাঙ্গর ঝাঁক বেঁধে পানির উপরিভাগে চলে আসে খাদ্যের সন্ধানে। তখন বিশেষ এক ধরনের জাল দিয়ে হাঙ্গর ধরা হয়। ২০/২২ কিলোমিটার গভীর সমুদ্রে জোয়ারের সময় বেশি পরিমাণ হাঙ্গর ধরা পড়ে। হাঙ্গর সাগর থেকে উত্তোলনের পর প্রায় ৫/৬ ঘণ্টা জীবিত থাকে। তবে ছোট হাঙ্গর শিকারের পর ৩/৪ ঘণ্টার মধ্যে মারা যায়। তাই জেলেরা গভীর সমুদ্র থেকে ট্রলার চালিয়ে উপকূলে আসতে পচে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকায় তারা হাঙ্গর শিকারের জন্য বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। অন্য মাছের মতো অতিরিক্ত বরফেরও দরকার হয় না ।
শুঁটকি ব্যবসায়ী নুরুল হক বলেন, ছোট ১শ’ পিছ হাঙ্গর ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকায় ক্রয় করছে। এদের সাইজ এতই ছোট যে প্রতি কেজিতে ১৫/২০টি হাঙ্গর লাগছে। আর বড় হাঙ্গর ক্রয় করছে মণ হিসেবে। প্রতি মণ বড় হাঙ্গর ৬/৭ হাজার টাকায় ক্রয় করা হচ্ছে। এ হাঙ্গর শুঁটকি করে প্রতি মণ ৮/১০ হাজার টাকায় তারা বিক্রি করছেন চট্রগ্রাম ও ঢাকার শুঁটকি ব্যবসায়ীদের কাছে।
একাধিক শুঁটকি ব্যবসায়ী জানায়, হাঙ্গরের কান, দাত, পাখনা ও তেল আলাদা বিক্রি করা হয়। হাঙ্গরের কান প্রতি মণ ২২/২৪ হাজার টাকা, তেল প্রতি মণ ৬ হাজার টাকা ও দাঁত প্রতি মণ ৭/৮শ’ টাকায় বিক্রি হয়।
কুয়াকাটায় ভ্রমণে আসা একাধিক পর্যটকদের প্রশ্ন-হাঙ্গরের শুঁটকি বাঙালিরা না খেলে কাদের জন্য এতো ছোট হাঙ্গর ধরে শুঁটকি করা হচ্ছে? বর্তমানে যে পরিমাণে হাঙ্গর ধরা পড়ছে তাতে সাগরে জলজ সম্পদে এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, হাঙ্গর শিকার বন্ধে এখনও কোনো আইন না থাকায় তারা হাঙ্গর শিকার রোধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না। তবে হাঙ্গর শিকার রোধে শিগগিরই একটি নীতিমালা চূড়ান্ত হচ্ছে বলে তারা জানান। কলাপাড়া কোস্টগার্ডের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার আমিনুল ইসলাম বলেন, হাঙ্গর শিকার বন্ধে তাদের কোনো নির্দেশনা না থাকায় এ ব্যাপারে তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছে না। যদি উপর থেকে কোন নির্দেশ আসে তা হলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।