আশায় বুক বাঁধছেন দক্ষিনাঞ্চলের মানুষ

করেছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। এবারের এ রদ বদলে বরিশালের ভাগ্য খুলবে বলে আশা করছেন সবাই। অবশ্য এ স্বপ্নের পেছনে যথেষ্ট যুক্তিও রয়েছে। ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন থেকে শুরু করে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে মহাজোট সরকারের প্রতি অকুন্ঠ সমর্থন দেখিয়েছেন বরিশাল বিভাগের জনসাধারন। কিন্তু তার বিনিময়ে গত দু’বছরে প্রাপ্তির পরিমান খুবই সামান্য। উন্নয়ন প্রশ্নেও পিছিয়ে আছে দক্ষিণাঞ্চলের জনগন। নির্বাচনের আগে দেয়া প্রতিশ্র“তি পর্যন্ত রক্ষা করেনি কেউ। আর এসব কারনেই এ অবহেলিত জনপদের জনসাধারন মন্ত্রীসভায় রদবদলের সম্ভাবনায় নিজেদের দাবিকে অগ্রগন্য বলে মনে করছেন।

ওয়ান ইলেভেনের পরবর্তী অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দক্ষিণাঞ্চলের ২১ টি আসনের মধ্যে ১৯টিতেই জয়লাভ করে মহাজোট। কিন্তু সরকার গঠনের সময় হতাশ হয় দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। একজন প্রতিমন্ত্রী ছাড়া আর কিছুই জোটেনি তাদের ভাগ্যে। পরবর্তীতে কলাপাড়ার সংসদ সদস্য মাহাবুবুর রহমানকে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী এবং বাউফলের সাংসদ আ.স.ম ফিরোজকে হুইপ করা হলেও পিছিয়ে থাকে বিভাগের অন্য ৫ টি জেলা। অথচ এ ৫ টি জেলায়ই ছিলেন তোফায়েল আহম্মেদ-এমপি, আমির হোসেন আমু-এমপি, জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার-এমপি এবং বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও চৌকস রাজনীতিবিদ এডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস-এমপিসহ আরো বেশ কয়েকজন দক্ষ রাজনীতিবিদ। এদের মধ্যে অধিকাংশরাই একাধিকবার পালন করেছেন পূর্নমন্ত্রীর দায়িত্ব। কিন্তু তা স্বত্বেও বঞ্চিত থাকতে হয় বরিশালের মানুষকে। এরপর গত দু’বছরে কোন রকম রদবদল হয়নি মহাজোটের মন্ত্রীসভায়। মাঝে কয়েকবার যোজন-বিয়োজনের কথা শোনা গেলেও তা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়নি। এবার প্রায় নিশ্চিত মন্ত্রী পরিষদের রদবদল হচ্ছে।

নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রে পাওয়া তথ্যানুযায়ী রদবদলে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন হতে পারে, যুক্ত হতে পারে নবীন এবং প্রবীন দু’একজনের নাম। সংস্কারপন্থী হওয়ায় শুরু থেকেই দলে কোনঠাসা হয়েছিলেন সংসদ সদস্য আমীর হোসেন আমু এবং তোফায়েল আহমেদ। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্যের পদ থেকে পর্যন্ত বাদ দেয়া হয় তাদের। ক্ষমতার একবছর পরই অবশ্য ঘটে এ অবস্থার পরিবর্তন। আওয়ামীলীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য করা হয় দু’জনকে। নীতি নির্ধারন প্রশ্নেও দেয়া হয় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এর পাশাপাশি উপ-নির্বাচন এবং পৌর নির্বাচনে দারুন দক্ষতা দেখান এ রাজনৈতিকরা। দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে জয়ী করেন দলীয় প্রার্থীদের। এ বিবেচনায় মন্ত্রী সভায় আসার উজ্জল সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে তাদের। কেন্দ্রীয় নানা ফোরামেও আলোচিত হচ্ছে বিষয়টি। সংসদ সদস্য না হওয়ার কারনে মন্ত্রী সভায় আসতে না পারলেও মন্ত্রী পদমর্যাদায় উপদেষ্টার পদ পেতে পারেন দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নের রূপকার, মাটি ও মানুষের নেতা, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এবং জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইপ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের চীফ হুইপ থাকাকালীন সময় তিনি (হাসানাত) গোটা দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক উন্নয়ন মূলক কাজ করেন। এবারের পৌর নির্বাচনে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিটি পৌরসভার মেঠোপথ ঘুরে মহাজোট মনোনীত মেয়র প্রার্থীদের বিজয়ী করার লক্ষে ব্যাপক গণসংযোগ, পথসভা ও উঠান বৈঠকে অংশগ্রহন করে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সাথে মিশে গেছেন। তার আপ্রান চেষ্টায় বরিশালের ৫টি পৌরসভায়ই মহাজোট মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ পৌর নির্বাচনে প্রমান করে দিয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামীলীগের একমাত্র কান্ডারীই হচ্ছেন তিনি।

উল্লেখিত দু’জন ছাড়াও আরো কয়েকজনকে মন্ত্রীসভায় ঠাঁই দেয়ার অনুরোধ করেছেন দক্ষিনাঞ্চলের জনসাধারন। সেক্ষেত্রে যাদের নাম আলোচিত হচ্ছে তারা হলেন বরিশালে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার-এমপি, ভোলার আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব-এমপি, পিরোজপুরের এম.এ আউয়াল-এমপি এবং বরগুনায় ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু-এমপি। নির্বাচিত হওয়ার পর চরফ্যাশন-মনাপুরা তথা পুরো ভোলা জেলায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন জ্যাকব। এলাকায়ও রয়েছে তার ব্যাপক জনসর্মথন। বিগত আওয়ামীলীগ শাসনামলের উপমন্ত্রী বরগুনার এমপি শম্ভু একজন দক্ষ পার্লামেন্টারিয়ান। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েও জামায়াত নেতা দেলোয়ার হোসেন সাইদীর মতো ভোট যুদ্ধের শক্ত পাল্লাকে পরাজিত করেছেন এম.এ আউয়াল। এছাড়া মহাজোটের অংশিদার জাতীয় পার্টির মহাসচিব হওয়ার পাশাপাশি রুহুল আমিন হাওলাদারের রয়েছে একাধিকবার মন্ত্রনালয় সামলানোর অভিজ্ঞতা।

এ ব্যাপারে বরিশাল নাগরিক পরিষদের সাধারন সম্পাদক মিন্টু বসু বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে বরিশাল বিভাগের ১৯টি পৌরসভার ১৮টিতেই বিজয়ী হয়েছে আওয়ামীলীগ সমর্থিত মহাজোট মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং উপজেলা নির্বাচনেও একইভাবে মহাজোটকে সমর্থন দিয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের জনগন। জাতীয় নির্বাচনের পর এই অঞ্চলের যে তিনজনকে প্রতিমন্ত্রী এবং হুইপ করা হয়েছে তাদের সবার বাড়ি হচ্ছে পটুয়াখালীতে। এমনকি বরিশাল সদরে পর্যন্ত কোন মন্ত্রী পায়নি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। স্বাধীনতা পরবর্তী কোন সরকারের আমলে এমন ঘটনা ঘটেনি। বিগত জোট সরকারের সময়েও এই অঞ্চলে ছিলেন ৮ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী। অথচ এবার সবকটি নির্বাচনে অকুন্ঠ সমর্থন দেয়ার পরেও বঞ্চিত হয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ।