আপনার আমার তদন্তে ব্রিজের কিছু যাবে আসবে না- ইউএনও

টাকা লুটপাট, দুর্নীতি, কর্মচারীদের বেতন না দেয়া ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রকাশিত সংবাদে টনক নড়েছে সরকারের। গতকাল মঙ্গলবার আগৈলঝাড়া সরেজমিন তদন্তে আসেন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সরকারী নিরীক্ষক নুর মোহাম্মদ সহ ৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল।

ব্রিজের দুর্নীতির তদন্ত দলের প্রধান নুর মোহাম্মদের সাথে কথা বলছেন ইউএনওসকালে এনজিও ব্রিজের তথাকথিত উপজেলা কার্যালয়ে কিছু সময় অতিবাহিত করার পর আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর বিশ্বাসের সাথে প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করেন এসময় এনজিও ব্রিজের জেলা কো-অর্ডিনেটর মসলেহ উদ্দিন ও উপজেলা কো-অর্ডিনেটর কবির উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। প্রতিনিধি দলকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর বিশ্বাস প্রকল্প সম্পর্কে তার প্রতিক্রিয়ায় জানান প্রকল্পের প্রথম বছরের ৬মাস পর তিনি জানতে পেরেছেন তার উপজেলায় সরকারের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। তিনি প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে কাগজে  কলমে থাকলেও ব্রিজের  অনৈতিক কার্যক্রমের ফলে সরকারের এ প্রকল্পের সাথে যেসব ক্ষেত্রে তার সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা তা তারা করেনি। ৩৪ টি কেন্দ্র উপজেলায় থাকার কথা কিন্তু তা আছে কি নেই তা তিনি জানেন না। ইউএনও  আরও বলেন, তিনি নিজে কয়েকটি কেন্দ্র  দেখেছেন তবে তাতে সরকারের নিয়মনীতির কোথাও প্রতিফলন ঘটেনি। আসবাবপত্র, উপকরণ কোথাও সঠিক নিয়মে পাওয়া যায়নি। কেন্দ্র পরিচালনায় স্থানীয় পর্যায়ে কমিটি গঠণ ও তাদের নামে একটি ব্যাংক হিসাব খোলার কথা থাকলেও আগৈলঝাড়ায় তা করা হয়নি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন।

সরকারের সুন্দর এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত অর্থ সহায়তা থাকা সত্তেও উপজেলায় তা সঠিকভাবে বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা কোথায় তা ব্রিজ এনজিওর কর্মকর্তারাই ভাল  জানেন। জেলার দায়িত্বে থাকা সরকারী কর্মকর্তা (ব্যুরো) এ পর্যন্তু দেড় বছরে একটিবার প্রকল্পের খোঁজ নেননি তার কাছে। সরকারী অর্থ অপচয়ের এত বড় নজির তিনি এর আগে কখনো দেখেননি বলে প্রতিনিধি দলকে জানান। প্রতিনিধি দলের প্রধান নূর মোহাম্মদ সংবাদপত্রে প্রকল্পের অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের পর কোন তদন্ত করেছেন কিনা? এ প্রশ্নের উত্তরে ইউএনও দীপংকর বিশ্বাস বলেন, সংবাদপত্রে ব্রিজের খাতওয়ারী অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর নতুন করে আর তদন্তের দরকার হয়নি। কারণ তাদের কার্যক্রম সকলেরই জানা। এসময় তিনি প্রতিনিধি দলকে আরও বলেন, ব্রিজের উচ্চ পর্যায়ে এমন ব্যক্তিরা রয়েছেন যারা সরকারী অর্থ অপচয় করে পাড় পাবেন বলে তারা নিশ্চিত। তাই ইতোমধ্যেই এর নজিরও তারা রেখেছেন। “আপনার আমার তদন্তে ব্রিজের কিছু যাবে আসবে না।”

এসময় তিনি জেলা প্রশাসকের চাহিত তথ্য অনুযায়ী মন্ত্রনালয় ও জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেরিত তার মতামত সহ একটি লিখিত প্রতিবেদন (যা পূর্বেই পাঠানো হয়েছে) প্রতিনিধি দলকে দেখান। প্রতিনিধি দলের কাছে তিনি গত ২ ফেব্র“য়ারী বিজ্রের স্থানীয় প্রশিক্ষক সহায়ক সহায়িকাদের বিভিন্ন অভিযোগ সম্বলিত (৮১ জন স্বাক্ষরিত) একটি অভিযোগ পত্রের অনুলিপি প্রাপ্তির কথাও তুলে ধরেন। উল্লেখ্য, এনজিও ব্রিজের সহায়ক-সহায়িকারা ২ ফেব্রয়ারী ব্রিজের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও বৈষম্যর প্রতিকার চেয়ে সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে বিক্ষোভ সমাবেশ করে স্মারকলিপি দিয়েছিল। যা ৩ ফেব্রয়ারী বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল। আরও উল্লেখ্য, ব্রিজ এনজিও সরকারের এ প্রকল্পটি বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া, উজিরপুর, বাবুগঞ্জ, মুলাদী, হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ, বানারীপাড়া, বাকেরগঞ্জ ও বরিশাল সদর উপজেলাসহ ১০ টি উপজেলায় সরকারের এই শিক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছে।