চোর আতংকে রাত জেগে পান বরজ পাহারা ॥ পানের বাজারে আগুন

উপজেলার অধিকাংশ পানের বরজের পান পাতা ঝড়ে গেছে। কিছু কিছু এলাকার পান বরজের চারিপার্শ্বে পলিথিন দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় পান চাষীরা তাদের বরজের পান কিছুটা হলেও রক্ষা করেছে। বর্তমানে এসব উপজেলার হাট-বাজারে পানের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে গত এক সপ্তাহ থেকে বিভিন্ন এলাকার পান বরজের সংঘবদ্ধ চোরেরা পান চুরি শুরু করেছে। উপায়অন্তুর না পেয়ে চাষীরা গত দু’তিনদিন থেকে তাদের বরজের পান চুরির আতংকে রাত জেগে পান বরজ পাহারা দিচ্ছেন।

গৌরনদী উপজেলার ভীমেরপাড় গ্রামের পান চাষী হেলাল সরদার জানান, গত ৯ ফেব্রয়ারি রাত সাড়ে দশটার দিকে একটি সংঘবদ্ধ চক্র তার পান বরজের পান চুরির সময় তিনি এলাকাসিদের নিয়ে চোরদের ধাওয়া করেন। একপর্যায়ে দৌড়ি চোরেরা পালিয়ে গেলেও তিনি তার পান বরজ থেকে বিপুল পরিমান ছেড়া পান উদ্ধার করেছেন। এরপর থেকেই তিনি চোর আতংকে পান বরজে রাত জেগে পাহারা বসিয়েছেন। একইভাবে জানালেন বাঘার গ্রামের বিপুল শিউলী, সুভাষ শিউলীসহ অনেকেই। উপজেলার পশ্চিম সাওড়া গ্রামের পান চাষী সুকন্ঠ সোম জানান, চোর আতংকে তিনি গত দু’দিন ধরে তার আড়াই’শ পান বরজে পাহারা বসিয়েছেন। শীতের মৌসুম শুরুর হওয়ার পর পরই বৈরি আবহাওয়া ও ঘণ কুয়াশার কবল থেকে তিনি তার পান বরজ রক্ষার জন্য বরজের চারিপার্শ্বে পলিথিন দিয়ে মুড়ে দিয়েছিলেন। ফলে তিনি তার বরজের পান রক্ষা করতে পেরেছেন। গত এক সপ্তাহে তিনি তার বরজের প্রায় ৫০ হাজার টাকার পান বিক্রি করেছেন। এখনো তার বরজে যে পরিমান পান আছে তাও প্রায় ২০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। একই গ্রামের পান চাষী কমল দাসের ৬’শ পান বরজ থেকে প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকার পান বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান। দক্ষিণ বাউরগাতি গ্রামের পান চাষী সবুজ খান জানান, ঘনকুয়াশায় তার দেড়’শ পান বরজের পান পাতা ঝড়ে গেছে। পলিথিন দিয়ে বিকল্প ব্যবস্থায় অপর বরজের দুই’শ পান বরজ রক্ষা করতে তার প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ঘণ কুয়াশায় অধিকাংশ পান বরজের পান ঝড়ে যাওয়ার পর হঠাৎ করে বাজারে পানের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দু’দিনে তিনি প্রায় ৩০ হাজার টাকার পান বিক্রি করেছেন। আরো প্রায় ৪০ হাজার টাকার পান বিক্রি করতে পারবেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বর্তমানে বাজারে পানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর পরই তাদের এলাকার কয়েকটি পান বরজ থেকে পান চুরির ঘটনা ঘটেছে। ফলে তার পান বরজ থেকে পান পাতা চুরি হওয়ার আশংকায় তিনি গত তিনদিন ধরে শ্রমিক নিয়ে রাত জেগে পান বরজ পাহার দিচ্ছেন। একইভাবে চোর আতংকে রাত জেগে পান বরজ পাহারা দিচ্ছেন উপজেলার পিঙ্গলাকাঠী, বাটাজোর, চন্দ্রহার, সরিকল, মাহিলাড়া, বাঘার, রামসিদ্ধি, বাউরগাতি, খাঞ্জাপুর ও টরকী। আগৈলঝাড়ার বাকাল, রাজিহার, টেমারসহ বিভিন্ন এলাকার পান চাষীরা। পূর্বে এখানে প্রতি বিরা পান ২০ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি করা হলেও বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়।

এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সিরাজুল ইসলাম সিরাজের সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, গৌরনদী উপজেলার সাড়ে সাত’শ হেক্টর জমিতে দীর্ঘদিন থেকে পান চাষ হয়ে আসছে। এ সব এলাকার পান লঞ্চ ও ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করা হয়। এ বছর অনাবৃষ্টি, বৈরি আবহাওয়া ও ঘণ কুয়াশায় উপজেলার অধিকাংশ পানচাষীদের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে। তাদের এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।