প্রকৃতির অনন্য দান মৌলভীবাজারের মাধবপুর লেক

এটি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। প্রকৃতির অনন্য দানমৌলভীবাজারের মাধবপুর লেকসরু রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করতে হয় লেকে। মাধবপুর টি-এস্টেট এর অধীনে প্রবেশদ্বার। কিছুটা হেটে যেতে হয় বলে প্রথমেই কেউ-ই লেকের সন্ধান পাবেন না। নানা কৌতূহল। ডানে বামে তাকালে শুধু চা বাগান আর তার মাঝে সবুজের সমারোহ। নাম জানা আর অজানা অনেক রকম গাছ-গাছালি। কোনটা আবার আকাশচুম্বী। আঁকাবাঁকা গাছগুলো দেখতে বেশ চমৎকার। নিমিষেই আগত পর্যটকের চোখ জুড়িয়ে যাবে। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার বিস্তৃত এই লেক। ছোট-বড় টিলা ঘেরা লেকটির রয়েছে নিজস্ব স্বকীয়তা। নয়নাভিরাম লেকের চারপাশ। লেকের টলমল পানি দেখে স্নানপ্রিয়রা স্নান করতে ভুল করেন না। পানিতে ফুটে রঙ বেরঙের ফুল। বেগুনি শাপলা দেখলে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের কথাই মনে করিয়ে দেয়। আর বেগুনি শাপলা লেকের বহু বছর ধরে ফুটছে। যা লেকের একটি বৈশিষ্ট্য। টিলায় উঠে লেকের চারপাশ দেখার আনন্দও কম নয়। সবুজ ঘন টিলাগুলোর মাঝ দিয়ে একেঁবেঁকে গেছে লেকটি। শীতের দুপুরে নরম রোদের আলোর ঝলকানিতে টিলাগুলোর আনাচে কানাচের সরু পথগুলো জ্বলে ওঠে। আর এ লেকের টিলার উপরে উঠে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড় দেখা যায়। এখান থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে ভারতের সীমানা। সীমান্তে রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ। সবমিলেয়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের প্রকৃতির সাথে গভীর মেশার এক অপূর্ব স্থান। বদ্ধ লেকটি গরমের দিনে শুধু চা বাগানের তৃষ্ণা মেটায় না, আগত পর্যটকদেরও প্রকৃতির কাছে আসতে বলে। চা বাগানের মেঠো পথে হাঁটতে কারোই অপছন্দ হওয়ার কথা নয়। চা বাগানের সাথে নিজেকে স্মৃতির ফ্রেমে রাখার জন্য একটু চেষ্টা করতে পারেন। সবুজ চা বাগানে বসে সময় কাটাতে পারেন। সেক্ষেত্রে গল্প করার সঙ্গী থাকা চাই। পথের পাশে লাগানো আছে হরেক রকম বনৌষধি গাছ। আমলকি, হরিতকি, বহেরাসহ আরও অনেক। পিকনিকের স্পট হিসেবেও রয়েছে এর খ্যাতি। দেশের নানা প্রান্ত থেকেই প্রতিদিনই আসছে দলবেধে। লেকে প্রবেশে কোন রকম অর্থ ব্যয় করতে হয় না।

একটু সতর্কতা : টিলার উপর সাবধানে উঠতে হবে। যারা জীবনে প্রথমবারের মতো এরকম টিলায় উঠবেন খেয়াল রাখবেন পা যেন পিছলে না যায়। একটু অসতর্কতার জন্য আপনার ভ্রমণ আনন্দদায়ক নাও হতে পারে। তাই একটু সাবধান থাকা চাই। কখনও একাকী জঙ্গলের ভেতরে প্রবেশ করবেন না। কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে পিকনিক করতে কোন বাধা নেই। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাটাতে পারবেন এ নয়নাভিরাম লেকে। সাধারণত ছুটির দিনে এখানে পর্যটকদের ভিড় লক্ষ করা যায়। তাছাড়া প্রতিদিনই দেশি-বিদেশি পর্যটকরা আসেন।

যেভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল যেতে পারেন ট্রেনে। জয়ন্তিকা, উপবনে অথবা পারাবতে। বাসে আসারও সুযোগ রয়েছে। শ্রীমঙ্গল নেমে বাসে মাধবপুর টি-এস্টেট। শ্রীমঙ্গল থেকে মাইক্রোবাসেও যেতে পারেন।

থাকার স্থান : শ্রীমঙ্গল অথবা কমলগঞ্জ উপজেলায় কয়েকটি ভাল মানের হোটেল রয়েছে। থাকার মানভেদে ভাড়াও কমবেশি রয়েছে। তবে মাধবপুর টি-এস্টেটের আশেপাশে কোন খাবার হোটেল নেই। তাই সঙ্গে প্যাকেটে খাবার নিয়ে যেতে পারলেই ভালো হয়। অন্যথায় কয়েক কিলোমিটার দূরে ভানুগাছে গিয়ে খেতে হবে।


লেখক : সংবাদকর্মী ও শিক্ষার্থী ইংরেজি বিভাগ (৪র্থ বর্ষ ২য় সেমিস্টার) শাবিপ্রবি, সিলেট।