কাউন্সিলরের পুত্রের অত্যাচারে পাঁচ গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ

পুত্র সাদ্দাম খানের অত্যাচারে ৫ গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। একের পর এক অন্যায় ও অপরাধ করে পিতার বদৌলতে পার পেয়ে যাওয়ায় সাদ্দামের অত্যাচারের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ১৭ বছরের তরুন সাদ্দাম খানের অধীনে রয়েছে ১৫/২০ জনের একটি ক্ষুদে সন্ত্রাসী বাহিনী। ওই বাহিনীর হাত থেকে রেহাই পায়নি এলাকার প্রবীন ব্যক্তিরাও। এলাকায় ক্ষুর বাহিনী নামেই ওই ক্ষুদে সন্ত্রাসী বাহিনীর পরিচিতি। অভিযোগ রয়েছে ওইসব ক্ষুদে সন্ত্রাসীরা বর্তমানে তাদের অভিভাবকদেরও তোয়াক্কা করে না। ভুক্তভোগী এলাকাবাসি ক্ষুদে সন্ত্রাসী সাদ্দাম ও তার ক্ষুর বাহিনীর হাত থেকে রেহাই পেতে প্রসাশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ ফেব্র“য়ারি সাদ্দাম খান ও তার ক্ষুদে সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার স্বীকার হয়েছেন পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম মোর্শেদ পান্না মিয়া। পান্না মিয়া অভিযোগ করেন, গত তিনবছর ধরে গেরাকুল বেগম আখতারুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতা ও পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান চলাকালে সাদ্দাম খান ও তার দলবল বিশৃংখলা সৃষ্টি করে আসছে। গত বছর স্কুলের এক শিক্ষার্থীকে উত্যক্ত করার জেরধরে স্কুলের অন্যান্য ছাত্রদের সাথে সাদ্দাম খান ও তার দলবলের বাকবিতন্ডা বাঁধে। একপর্যায়ে সাদ্দাম তার দলবল নিয়ে স্কুলের অনুষ্ঠানে হামলা চালায়। এসময় পান্না মিয়াসহ স্কুল পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দরা ধাওয়া করে সাদ্দাম খানকে আটক করে। পরবর্তীতে তার পিতা বাবুল খানকে খবর দিয়ে তার কাছে সাদ্দামকে সোর্পদ করা হয়। গত ২০ ফেব্র“য়ারি গেরাকুল বেগম আখতারুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া-সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতার পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান ছিলো। ওইদিন পূর্বের আটকের ঘটনার জেরধরে সাদ্দাম ও তার ১০/১২ জন সহযোগীরা সাবেক কাউন্সিলর পান্না মিয়ার গেরাকুল মিয়াবাড়ির ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। হামলাকারীরা পান্না মিয়াকে ক্ষুর দিয়ে এলোপাথারী ভাবে কুপিয়ে মারাত্মক জখম করে ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান ভাংচুরসহ নগদ অর্থ ও মূল্যবান মালামাল লুট করে নেয়। পরবর্তীতে ওই ক্ষুদে সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বিতীয় দফায় স্কুলের অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত পান্না মিয়ার পুত্র সেতু মিয়ার ওপর হামলা চালায়। এসময় সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হয় কমপক্ষে ৯ জন। হামলার কারনে স্কুলের পুরো অনুষ্ঠান পন্ড হয়ে যায়।

এরপূর্বে সাদ্দাম খানের নেতৃত্বে উপজেলার লেবুতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতার অনুষ্ঠানে হামলা করা হয়। ওইসময় লেবুতলী গ্রামের লোকজন সাদ্দামকে আটক করে গণধোলাই দিয়েছিলো। গত বছর দূর্গা পূজার সময় বেজহার বৈড়াগী বাড়ির সার্বজননী মন্দিরে হামলা চালিয়েছিলো সাদ্দাম ও তার সহযোগীরা। প্রভাব বিস্তারের জন্য হাপানিয়া গ্রামবাসীর ওপর একাধিকবার হামলা করেছে ক্ষুদে সন্ত্রাসী সাদ্দাম। এছাড়াও সম্প্রতি অনুষ্ঠিতব্য পৌর নির্বাচনের সময় কাসেমাবাদ গ্রামের হারুন সিকদারের পুত্র সুজন সিকদারকে মারধর, কাছেমাবাদ মাদ্রাসা থেকে বাৎসরিক ওয়াজ মাহফিল শুনে রাতে বাড়ি ফেরার পথে গেরাকুল গ্রামের বছির আকনের ওপর হামলা চালিয়ে অমানুষিক নির্যাতন, পৌর নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে ৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মোঃ আলাউদ্দিন বেপারীর ওপর হামলাসহ সাদ্দাম ও তার ক্ষুদে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে এলাকায় রয়েছে ভুড়ি ভুড়ি অভিযোগ। পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামীলীগ নেতার পুত্র বলে ভুক্তভোগী এলাকাবাসি ক্ষুদে সন্ত্রাসী সাদ্দাম খানের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। তারা সাদ্দাম ও তার ক্ষুর বাহিনীর হাত থেকে রেহাই পেতে প্রসাশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

এ ব্যাপারে গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম-পিপিএম’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সাদ্দাম খানের বিরুদ্ধে মৌখিক ভাবে অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেলেও এখনো কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। লিখিত অভিযোগ ছাড়াই সাবেক কাউন্সিলর পান্না মিয়ার ওপর হামলার পর থেকে সাদ্দাম ও তার সহযোগীদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের জোড় প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।