শাবিতে শহীদ দিবস পালিত

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবস পালিত হয়। দিবসের কর্মসূচির মধ্যে ছিল আলোক সজ্জিত শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ, সেমিনার, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

ভাইস চ্যান্সেরর প্রফেসর ড. মো. সালেহ উদ্দিন দিবসের প্রথম প্রহরে ১২-০১ মিনিটে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে সকাল ১১টায় মিনি অডিটরিয়ামে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও অমর একশে স্মরণে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভাইস চ্যানেন্সলর প্রফেসর ড. মোঃ সালেহ উদ্দিন বলেন-মাতৃভাষা হিসেবে সর্বক্ষেত্রে বাংলাকে গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষ করে পাঠদানের ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদেরক বুঝানোর জন্য বাংলার ব্যবহার করতে হবে । তাহলে যে কোন বিষয় তাদের কাছে সহজে বোধগম্য হবে।  তবে কোনক্রমেই আমরা অন্য ভাষাকে অবজ্ঞা করা যাবে না। বিশেষ করে ভাল বাংলা জানার পাশাপাশি ইংরেজিতেও আমাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। কারণ জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় ইংরেজি অনেক সমৃদ্ধ এবং বিশ্বের বিভিন্ন পন্ডিৎ ব্যক্তি এ ভাষাতে বই পত্র লিখেছেন। তবে জোর করে ইংরেজি শেখানোর ফলে আমাদের নতুন প্রজন্মের অনেকেই বাংলা ও ইরেজি এ দু’টি ভাষার কোনটিই সঠিকভাবে আত্মস্থ করতে করতে পারে না।

কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মোঃ প্রফেসর ড. ইলিয়াস উদ্দীন বিশ্বাসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় ‘ভাষা আন্দোলন, বাংলা ভাষা এবং আজকের বাংলাদেশ : ফিরে দেখা’ শীর্ষক প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস বলেন- আজকের শিক্ষার্থীরা বাংলা ভাষায় দুর্বলতাকে দুর্বলতা মনে করে না, বরং ইংরেজি ভাষায় দুর্বলতাকে বিরাট প্রতিবন্ধকতা মনে করে। বর্তমান সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের তরুণ-তরুণীদের জন্য এই প্রবণতা অত্যন্ত স্বাভাবিক বলেই মনে হয়। তবে এক্ষেত্রে সুষ্ঠু নীতি ও পরিকল্পনার অভাবে আমাদের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায়-ই কাঁচা থেকে যাচ্ছে। ভাষা আন্দোলন, বাংলা ভাষা এবং বাঙ্গালি সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে হলে এবং বাংলাদেশকে একটি আধুনিক, উন্নত, জ্ঞানভিত্তিক উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে উন্নীত করতে হলে বাংলা ভাষার পাশাপাশি আমাদেরকে অবশ্যই ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করতে হবে। ভাষা আন্দোলনের মূল চেতনাই হলো বাংলাদেশকে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক, উদার, সমতাভিত্তিক একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলা।

প্রবন্ধের  আলোচক ও বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক  ড. শরদিন্দু ভট্টাচার্য্য বলেন-বাংলা ভাষাকে মর্যাদা দিতে হলে অবশ্যই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সকল ক্ষেত্রে বাংলা চালু করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন হলে বিশ্বের বিভিন্ন আবিষ্কার বাংলায় অনুবাদ করতে হবে। তাহলে বাংলা চর্চার পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে তা বোধগম্য হবে।

তিনি সংবিধানে বাংলার সাথে দেশের অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর ভাষাকেতও স্বীকৃতি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।
প্রবন্ধের প্যানেল আলোচক ও পলিটিক্যাল স্টাডিস বিভাগের প্রভাষক মোঃ এমদাদুল হক বলেন-বাংলা একটি সমৃদ্ধ ভাষা। এ ভাষাকে প্রকাশ করতে অন্য ভাষার কোন সাহায্য নিতে হয় না। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যই এ ভাষার শ্রীবৃদ্ধি করেছে।

বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও এর উন্ন্য়নের যারা অবদান রেখেছেন তাদের প্রতি তিনি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
প্রবন্ধকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহীদ  দিবস উদযাপন কমিটির আহবায়ক  সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. মোঃ ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস বলেন-১৯৫২ সালের একুশে ফেব্র“য়ারির ঘটনায় আমরা শোকাভিভূত হয়েছিলাম। কিন্তু সে শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে আমরা এ দেশের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আজ এই দিবস আন্তর্জাতিকভাবে মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পেয়েছে। এটা ভেবে আমাদের আনন্দ হয় এবং গর্ববোধ করি। তাই আমাদের একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশকে সমৃদ্ধিশালী করে গড়ে তুলতে হবে।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন-সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আ.ক.ম. মাহবুবুজ্জামান, রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. এস এম সাইফুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ড. মোঃ আব্দুল গনি। সেমিনার অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ব্যবসা প্রশাসন বিভাগের প্রভাষক  জনাব তাহসীনা হক সিমু।

এর আগে সকাল ১১টায় প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করেন। প্রতিযোগিতায় ‘ক’ গ্র“পে এস এম রাগিব রেজওয়ান শান, –প্রথম,  রাওফুর রাইসা, দ্বিতীয় এবং নাবিহা আজাদ রাইসা তৃতীয় স্থান অর্জন করে। ‘খ’ গ্র“পে  আহমেদ সাফওয়ান, প্রথম, ঈপ্সিতা মালিহা রহমান, দ্বিতীয় এবং সায়েম মাহবুব তৃতীয় হয়। ‘গ’ গ্র“পে প্রথম হয় নাজনীন আহমেদ এবং সৈয়দ শাহরিয়ার আলম প্রত্যয় ও আসপিয়া রুহামা যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অর্জন করে। সোমবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়।