গোপন মুচলেকা দিলে – হাসান হাফিজ

কইছি ভোটের ঘূর্ণিহাওয়ায় MAL MUHITটালমাটাল হয়ে উঠেছে গ্রামবাংলা। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনের জ্বরে দেশগেরাম গরম, মাতোয়ালা। টাইগাররা শেষতক ঘূর্ণিবলের জাদু দেখাতে পারেনি হাজার চেষ্টা করেও। টাইগার এখন ক্যাট! ভাগ্য অনুকূল ছিল না। মাঝপথে ছিটকে পড়তে হয়েছে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর থেকে। ১৬ কোটি মানুষের (বর্তমানে নয়া আদমশুমারিতে সংখ্যা কততে গিয়ে ঠেকবে আল্লা মালুম!)

আফসোসের সীমা পরিসীমা নাই। শুধুই কি ভাগ্য? সাকিব বাহিনীর তাকত, যোগ্যতা, আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি নিশ্চয়ই ছিল। নাকি আমরা শনির দশা বলেই পার পাওয়ার চেষ্টা করব? হতভাগা বাংলাদেশীদের সান্ত্বনা খুঁজতে হবে সেই মোক্ষম বাক্য থেকে। বাক্যটি হচ্ছে ফেইলিওর ইজ দ্য পিলার অব সাকসেস। বিজয় মহান, বিজয়ের সংগ্রাম মহত্তর। মারা গেলেও চোখটা কিন্তু বেঁচে গেছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৫৮ রানে অল আউট হওয়ার রেকর্ড টাইগাররা ভাঙতে পারেনি। ভাগ্যিস! আরও ২০ রান বেড়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। এটাও তো একটা দারুণ অগ্রগতি, নাকি?

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে রামচন্দ্রপুর ইউপি নির্বাচনে সদস্য পদে লড়ছেন দুই ভিখিরি। ভিক্ষা করেই দিন গুজরান করেন তারা। দু’জনেরই সংসার চলে ভিক্ষার আয়ে(!)। এটাকে আয় বলা বিধিসম্মত কিনা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বলতে পারবে। ভিক্ষা ও ভোটপ্রার্থীদের এখন কাজ বেড়েছে। পেটের জন্যে ভিক্ষা, নির্বাচনের জন্যে ভোট ভিক্ষা চাইতে হয়। যুত্সই স্লোগানও তারা বের করে নিয়েছেন বুদ্ধি খাটিয়ে। ভিখিরি হলেও তাদের মাথায় বুদ্ধি ভালো। যথেষ্ট সেয়ানা না হলে কি তারা এই যুদ্ধে নামতেন? তারা বেশ ভালো বুঝে গেছেন, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, দাপট, আরাম-আয়েশের জন্যে রাজনীতি হচ্ছে বড় ধরনের অস্ত্র। তারা কোনোমতে নির্বাচিত হতে পারলেই হলো। শনৈঃ শনৈঃ উন্নতির দিকে ধাবমান হতে পারবেন।

তাদের স্লোগানে রহস্য ও চমক আছে। স্লোগানটা হলো ‘ভোটের মাঠে আমরা সবাই ভিক্ষুক’। কথা ঠিক। ভোট এক ধরনের সমাজতান্ত্রিক সমতা এনে দেয় বৈকি! হোক তা সাময়িক। জনসেবা করার জন্য এই দু’জনের যে খায়েশ প্রকট হয়ে উঠেছে, শেষমেশ তা পূরণ হবে কিনা খোদাতায়ালা জানেন। সংবাদে তাদের খায়েশের নেপথ্য কাহিনীর একটা ইঙ্গিত রয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, তাদের প্রার্থী হওয়ার কারণে এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক চাঞ্চল্যের। এলাকাবাসী কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে সংবাদদাতা জানাচ্ছেন : অতীতে চেয়ারম্যান-মেম্বার যারা হয়েছেন, তারা নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নেই মনোযোগী ছিলেন বেশি (তাই তো হবে, আপনি বাঁচলে বাপের নাম)। এলাকার উন্নয়ন নাকি মেম্বার চেয়ারম্যান সাহেবদের কাছে কখনোই মর্যাদা, গুরুত্ব পায়নি। তাদের ওপর রাগ-ঝাল মেটানোর জন্যে এবার নতুন কিসিমের প্রার্থী মাঠে নামিয়েছেন তারা। কবির ভাষায় বলতে হয়, দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ।

এই খবরের পরিপ্রেক্ষিতে সুশীল সমাজের কতিপয় বৃদ্ধিজীবী বিশ্লেষককে একটি জরুরি দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তা হলো : এই যে ভিখিরি দাঁড়ালো নির্বাচনে, এতে বর্তমান ও ভবিষ্যত্ রাজনীতিতে কী প্রভাব পড়তে পারে, তার একটি সমীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন। সুশীল সমাজের মন্তব্য আমরা যথাসময়েই পেয়েছি। বিদেশী অনুদানের মোটা অঙ্কের টাকা এখাতে খরচা করতে হয়েছে অবশ্য। এই সেক্টরে ফরেন কারেন্সি বেশ আসে কিনা! বঙ্গদেশে কোনো তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার নিয়ম নাই। ঐতিহ্যও নাই। সেই প্রথা বা নিয়ম ভেঙে আমরা এই রিপোর্ট জনসমক্ষে হাজির করছি।

১ম সুশীল : অর্থমন্ত্রী বলেছেন, মন্ত্রী এমপিদের সম্পত্তির হিসাব শীঘ্রই জমা দিতে হবে। তবে সেসব পাবলিকের কাছে প্রকাশ করা হবে কিনা, তিনি সে ব্যাপারে ঝেড়ে কাশেননি। খোলাসা করে কিছু বলেননি। হাটে হাঁড়ি তিনি ভাঙতে চান না বলেই আপাতদৃষ্টে আমাদের মনে হচ্ছে। আমাদের এই দুই ভিখিরি প্রার্থীর বেলায় কিন্তু অমনটা খাটবে না। কারণ, ভোটের আগেই পিচ্চি বুড়ো তথা সর্বস্তরের লোকজন জানে তাদের হাঁড়ির খবর। তারা যে সারা বছর ভিক্ষা করে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের পেট চালায়, জনগণ তা বিলক্ষণ জানেন। পাবলিক এটাও জানে যে, সর্বহারার শৃঙ্খল ছাড়া আর কিছু নেই হারাবার।

২য় সুশীল : প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করে এইসব অন্ত্যজ শ্রেণীর ভিক্ষুকদের নির্বাচনে অংশ নেয়া নিষিদ্ধ করা হোক। এখন তো সংসদে ক্ষমতাসীন মহাজোটের ব্রুট মেজরিটি রয়েছে। তারা চাইলে দিনকে রাত, রাতকে দিন করতে পারেন। এক তুড়িতেই এই সংশোধনী করে ফেলা যায়। আমি সেই সুপারিশই করছি। ৩য় সুশীল : জিতলে সরকারি দলে যোগ দিতে হবে, গোপনে এই রকম মুচলেকা প্রদান করলে তাদের নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া যায়। রাজি না হলে, ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের নিরস্ত করে রাখাটাই উত্তম কাজ হবে।

৪র্থ সুশীল : ওরা চোর ছ্যাঁচ্চড় না। পেটের দায়ে ভিক্ষা করে খায়। ওরা নির্বাচনে জিততে পারলে হয়তো সততার পরিচয় দিলেও দিতে পারে। ৫ম সুশীল : এই ভিখিরি দাঁড় করানোর পেছনে নিশ্চয়ই বিরোধী দল কিংবা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের লোকদের কারসাজি বা হাত রয়েছে। তারা সরকারের ভাবমূর্তি নস্যাতের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।

৬ষ্ঠ সুশীল : ওরা যেহেতু হাড় হাভাতে, ওরা জিতলে সর্বনাশ। সবকিছু লুটেপুটে নেবে। চেটেপুটে খাবে। সুতরাং রিমান্ড টিমান্ডের দরকার নেই। ডাইরেক্ট অ্যাকশন। রাত ফর্সা হওয়ার আগেই নির্জন কোথাও নিয়ে গিয়ে ক্রস… ক্রস… ক্রস….! খেল খতম।

 

হাসান হাফিজ

লেখক : হাসান হাফিজ
সূত্র: প্রিয় ডট কম