আলোচিত নাদিয়া হত্যা মামলা – সু-বিচার নিয়ে শঙ্কিত পরিবার

চতুর্থ স্ত্রীকে হত্যা করে লাশগুমের সময় রাজধানী ঢাকায় পুলিশের হাতে গ্রেফতারের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটি কোন পথে ধাবিত হচ্ছে। শেষমেষ খুনিসহ অপর আসামিরা কি পার পেয়ে যাবে এরকম শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বাদী ও তার ম্বজনরা।

হত্যার শিকার কামরুন নাহার নাদিয়ার ভাই সুজন সেলফোনে বলেন, মামলা দায়েরের পর থেকে হাজারীবাগ থানা পুলিশ বিতর্কিত ভূমিকা পালন করছে। গ্রেফতারকালে পিস্তল, পার্সপোর্টসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার করলেও সেসব বিষয় মামলার সিজার লিস্টে উল্লেখ করা হয়নি। সেখানকার পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকায় মামলাটি ডিবিতে প্রেরণ করা হয়।

নাদিয়ার খালাতো ভাই তুহিন সেলফোনে বলেন, মামলার অপর ২ আসামিকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এরা হলো- নুরজাহান বেগম ও সোহেল রানা। ঘাতক রেজাউলের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী নেয়াও সম্ভব হয়নি। জবানবন্দী নিতে পুলিশ ঘাতককে আদালতে নিলে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যাওয়ার ভান করে। এসব কারণে নাদিয়ার পরিবার ও স্বজনরা মামলাটির সু-বিচার নিয়ে শঙ্কিত রয়েছে।

বর্তমানের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফজলুর রহমান জানান, মামলার তদন্ত কার্যক্রম যথাযথভাবেই চলছে।

উল্লেখ্য, গৌরনদী উপজেলার টরকী বন্দরের ফিরোজ মিয়ার কাপড়ের দোকানের মধ্যে বসে প্রকাশ্যে দিবালোকে ২০০৩ সালের ১ এপ্রিল সন্ত্রাসী রেজাউল সিকদার তার পিতা বার্থী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাবুল শিকদারকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহত হাবুল সিকদারের দ্বিতীয় স্ত্রী লিনা রহমান বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সন্ত্রাসী রেজাউল সিকদারের বড়ভাই সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ায় রহস্যজনক কারণে আলোচিত হাবুল সিকদারের হত্যা মামলাটি নিস্পত্তি হয়ে যায়। পিতৃহত্যার মামলা থেকে  রেহাই পেয়ে রেজাউল আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

ঢাকায় বসবাসের সুবাধে রেজাউলের পরিচয় হয় বনানী ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি কলেজের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ও বরিশালের কাউনিয়া এলাকার ধনাঢ্য ব্যক্তি মরহুম এড. রিয়াজ উদ্দিনের কন্যা কামরুন নাহার নাদিয়ার সাথে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রেজাউল তার পূর্বের তিনটি বিয়ের কথা গোপন রেখে ছয় মাস পূর্বে নাদিয়াকে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে তারা রায়েরবাজারের ৯১ হাতেমবাগের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলেন। এরই মধ্যে নাদিয়া দু’মাসের অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়েন। বিয়ের পর থেকেই নাদিয়ার পিতার অঢেল সম্পত্তির ওপর রেজাউলের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। হত্যার মাসখানেক আগে রেজাউল তার সহযোগীদের নিয়ে নাদিয়ার পিতার কাউনিয়া এলাকার একটি বিশাল পুকুর দখল করে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করে। এনিয়ে নাদিয়ার সাথে রেজাউলের দাম্পত্য কলহ  দেখা দেয়। এ ঘটনার জের ধরে গত রোববার সন্ধ্যায় উভয়ের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে রেজাউল তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। নিহত নাদিয়ার লাশ গুমের জন্য  রেজাউল ২৪ এপ্রিল রাতে নিজস্ব প্রাইভেটকারে গৌরনদীর উদ্দেশে রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার শাহাবাগ থানা পুলিশ রাত সাড়ে ৮টার দিকে লাশবাহী প্রাইভেটকারসহ ঘাতক রেজাউলকে গ্রেফতার করে।