বরিশালে যুবলীগ নেতা নিজামের চাঁদাবাজীর স্টাইল!

ও সিটি কর্পোরেশনের ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নব্য আ’লীগার আকতারুজ্জামান হিরু এবার ধার্যকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে এক ব্যাক্তির ক্রয়কৃত সম্পত্তি দখলে রাখতে ভাড়াটিয়াদের দিয়ে লুটপাটের মামলা করিয়েছে। বুধবার দুপুরে বরিশাল আদালতে ভাড়াটিয়া কাশেম মামলাটি দায়ের করেন। মামলার আসামীরা হলেন বিক্রেতা ডাঃ হুমায়ুন কবির, ক্রেতা আমিনুল ইসলাম মুন্সী ও লুৎফর রহমান। মহাজোট নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর হুশিয়ারী ঘোষনার পরও যুবলীগ নেতা আর কাউন্সিলরের প্রকাশ্য দখল সন্ত্রাসের নতুন স্টাইলে বিস্মিত নগরীর সচেতন মহল। ক্ষোভ প্রকাশ করছেন খোদ আ’লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। এতসবের পরও তার লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। বিতর্কিত এই যুবলীগ নেতার দৌরাত্ম বন্ধে আ’লীগের হাইকমান্ডসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তপে কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

এর আগে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও বিসিসি মেয়র শওকত হোসেন হিরনের নাম ভাঙ্গিয়ে বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দেয়ার হোতারা ক্রয়কৃত ব্যাক্তির নিকট ৫ লাখ টাকা নতুবা সম্পত্তি দাবী করায় নগরীতে নানা শ্রেনী পেশার মানুষের মুখে আলোচনার শিরোনাম হয় নিজাম-হিরুর চাঁদাবাজী ও দখলদ্বারিত্বের বিষয়টি। এরও আগে কোটি টাকার টেন্ডারের ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে কয়েক  যুবলীগ নেতা ক্ষিপ্ত হয়ে রাজধানী ঢাকায় নিজামুল ইসলাম নিজামকে মারধর করে।

ক্রয়কৃত সম্পত্তির স্বত্তাধিকারী আমিনুল ইসলাম মুন্সী(তুহিন) জানান দীর্ঘ ৮ মাস আগে সম্পত্তি ক্রয় করেছি। কিন্তু সম্পত্তি দখলে নিতে দিচ্ছে না যুবলীগ নেতা নিজামুল ইসলাম নিজাম ও আকতারুজ্জামান হিরু। তাদের সাফ কথা ধার্যকৃত চাঁদার টাকা না দিলে কোনভাবেই সম্পত্তি দখলে যেতে দেবে না। এই দুই নেতার ইন্ধনে ভাড়াটিয়ারাও ভবন ছেড়ে যাচ্ছে না। একই সঙ্গে ভাড়া টাকাও দিচ্ছে না। সম্পত্তির স্বত্তাধিকারী আরো বলেন সম্পত্তি কেনার পর ভাড়াটিয়াদের ভবন ছেড়ে চলে যেতে বলা হয়। সর্বশেষ ভবন ছেড়ে যেতে বরিশাল কোতোয়ালী মডেল থানায় সাধারন ডায়রীসহ ভাড়াটিয়াদের উকিল নোটিশ দেয়া হয়েছে। এরপরও তারা যাচ্ছে না। এ কারনে ভবনের নিচ তলায় দুটি দোকান তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। এতে নিজাম-হিরু ক্ষিপ্ত হয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সন্ত্রাসী কর্তৃক তালা ভেঙ্গে ভাড়াটিয়াদের দোকানে বসিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি নিজাম হিরু ইন্ধনে ভাড়াটিয়া দিয়ে লুটপাটের মামলা করিয়েছে। এ ঘটনায় নিজাম ও হিরুর বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার আদালতে চাঁদাবাজী মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন সম্পত্তির মালিক আমিনুল ইসলাম।

কাউন্সিলর আকতারুজ্জামান হিরু জানান সম্পত্তি তো জোর জবরদস্তি করে দখলে নিতে পারবে না। এটা স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মাধ্যমে আলোচনা স্বাপেক্ষে ভাড়াটিয়াদের চলে যাবার সময় সীমা নির্ধারন করে দখলে নিবে। কিন্তু সম্পত্তির স্বত্তাধিকারী কোন আলোচনা ছাড়াই ভাড়াটিয়াদের তুলে দিতে দোকানে তালা ঝুলিয়ে রাখে। এভাবে তো দখলে নেয়া সম্ভব নয়। ভাড়াটিয়াদের ইন্ধন দেয়া প্রসঙ্গে কাউন্সিলর হিরু বলেন ভাড়াটিয়াদের কেন ইন্ধন দিব। যার সম্পত্তি সে আলোচনার মাধ্যমে দিনক্ষন নির্ধারন করে ভাড়াটিয়াদের চলে যেতে বলবে। চাঁদাদাবী প্রসঙ্গে বলেন সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয়ে তার এলাকায় কোন চাঁদাবাজী কিংবা চাঁদাদাবীর কোন ঘটনা ঘটছে না। আর এতে আমার সম্পূক্ততা থাকার তো কোন প্রশ্নই আসে না। সম্পত্তির বিক্রেতা ডাঃ হুমায়ুন কবির বলেন এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী ও বিসিসি মেয়রের নাম ভাঙ্গিয়ে নিজামুল ইসলাম নিজাম তাকে বলছে নগরীর কোন বিষয়ে আমার সিদ্ধান্তের বাইরে প্রতিমন্ত্রী নানক ও মেয়র হিরনও সিদ্ধান্ত নেয় না। সুতারং আমি যেটা বলব সেটা করতে হবে। এজন্য ক্রেতা কর্তৃক কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা তাদেরকে দিলেই ভবনে বসবাসরত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের লোকজনদেরকে সরিয়ে দেয়া হবে। তাদেরকে চাঁদার টাকা না দেয়ার কারনে সম্পত্তি ভাড়াটিয়া ও সন্ত্রাসী কর্তৃক দখলে রেখেছে।

এদিকে যুবলীগ নেতা নিজামুল ইসলাম নিজাম জানান কয়েক দিন আগে কাউন্সিলর হিরুর অফিসে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে এক বৈঠক হয়েছে। তবে কারো নিকট কোন চাঁদার টাকা দাবী করা হয়নি বলে জানান। তিনি আরো বলেছেন গত পাঁচ বছরে তার এলাকায় কোন সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় হয়নি আর চাঁদাবাজী বা চাঁদাদাবীরও কোন প্রশ্ন আসে না। অথচ নিজামের মিথ্যাচারে চাঁদাবাজী বা চাঁদাদাবীর বিষয়টি ফুটে উঠেছে। কারন ওই এলাকায় বিগত পাঁচ বছরে বেশ কয়েকটি সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয় হয়েছে। প্রতিটি সম্পত্তির ক্রয় বিক্রয়ে নিজামের বিরুদ্ধে চাঁদা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে রেফকো কোম্পানীর সম্পত্তি বিক্রিতেও তিনি এক ব্যাক্তিকে সম্পত্তি কিনে দেয়ার কথা বলে উৎকোচ গ্রহন করে। পরবর্তীতে সেই সম্পত্তি অন্য জনের নিকট থেকে বেশি উৎকোচ নিয়ে রেফকো কর্তৃক তাকে কিনে দিয়েছে। এছাড়া নিজামের অত্যচারে অতিষ্ঠ হয়ে এক ইলেকট্রনিক্স ব্যবসায়ী ফকির বাড়ি রোডের নিজ সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করছেন। তিনি জাসদ, জাতীয় পার্টি শেষে বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে আ’লীগে যোগদান করে। অভিযোগ রয়েছে অন্য দলে থাকাবস্থায় তিনি তৎকালীন সময়ে সহযোগীদের নিয়ে কালিবাড়ি রোডের সরস্মতী স্কুলের সামনে আ’লীগের নৌকা প্রতীক প্রকাশ্য পুড়িয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত গত বছরের ১১ অক্টোবর ডাঃ হুমায়ুন কবির নগরীর ফকির বাড়ি রোডের ০.০৭ শতাংশ জমি চরকাউয়া এলাকার মৃত্যু এছাহাক আলীর পুত্র আমিনুল ইসলাম মুন্সীর নিকট বিক্রি করেন। সম্পত্তিতে তিন তলা ভবন রয়েছে। যার নিচ তলায় দুটি ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সম্পত্তি বিক্রির সময় চুক্তিতে বলা হয় দাতা ভাড়াটিয়া তুলে দিয়ে সম্পত্তি গৃহীতাকে বুঝিয়ে দিবে। চুক্তিনুযায়ী দাতা হুমায়ুন কবির ভাড়াটিয়াদের ভবন ত্যাগ করতে তিন মাসের সময়সীমা বেধে দেয়। কিন্তু সম্পত্তি বিক্রির নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রম হলেও ভাড়াটিয়ারা ভবন ত্যাগ করছেন না। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নগরীর পৌর সুপার মার্কেটের অফিসে এক বৈঠকে বসে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ক্রেতা আমিনুল ইসলাম মুন্সী, বিক্রেতা হুমায়ুন কবির, যুবলীগ নেতা নিজামুল ইসলাম নিজাম ও কাউন্সিলর আকতারুজ্জামান হিরু, কালীবাড়ি রোডের ব্যবসায়ী মাহেদুর রহমান সুমন। বৈঠকে নিজাম ও হিরু বলেছে এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক ও বিসিসি মেয়র শওকত হোসেন হিরনও আমাকে না জিজ্ঞাসা করে এই এলাকার জমি ক্রয় বিক্রয়ের কোন সিদ্ধান্ত নেন না। তিনি বলেন জমি’র ক্রেতাকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। নির্ধারিত টাকা না দেয়া পর্যন্ত জমির দখল নিতে দেয়া হবে না।