আগৈলঝাড়ার ঐতিহাসিক ১৮ হাত লম্বা মাজার

জবসেন গ্রামে অবস্থিত নরপর্বত জংশের খানের ঐতিহাসিক ১৮ হাত লম্বা মাজার। আজব এ মাজারটি দেখতে আজো দেশের বিভিন্নস্থান থেকে প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীরা ভীড় করছেন। এছাড়াও নরপর্বত জংশের খানের কল্পকাহিনী আজো গৌরনদী ও আগৈলঝাড়াবাসীর মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। ঐতিহাসিক এ মাজারটি রক্ষনা বেক্ষন করা হলে দশনার্থীদের আরো আকৃষ্ট করা যেতে পারে।

গৌরনদী-পয়সারহাট সড়কের পাশ্ববর্তী আগৈলঝাড়ার জবসেন গ্রাম। ওই গ্রামের আব্দুল কাদের পাইক (৭৫) জানান, জংশের খানের নামানুসারে গ্রামটির নাম হয়েছে জবসেন। জবসেন গ্রামের আহম্মেদ জালালের বাড়িতে জংশের খানের সু-বিশাল (১৮ হাত লম্বা) মাজার। হঠাৎ করে যেকোন ব্যক্তিই জংশের খানের কবরস্থানটি দেখলে চমকে যাবেন, তেমনি হতভাগ হবেন নরপর্বত জংশের খানের কল্পকাহিনী শুনলে।

সূত্রমতে, জংশের খানের বাড়ি ছিলো উত্তরাঞ্চলে। প্রায় ৫’শ বছর আগে তিনি (নরপর্বত জংশের খান) ৭টি খুন করে নিজ এলাকা ছেড়ে পায়ে হেটে চলে আসেন তৎকালীন গৌরনদী ও বর্তমান আগৈলঝাড়ায়। নিজ এলাকা ছেড়ে আসার সময় তিনি একটি ধানের ডোলার মধ্যে করে স্ত্রী, ছেলে-মেয়েসহ বিভিন্ন মালামাল মাথায় করে এনেছিলেন। এখানে আসার পর জংশের খান গৈলার এক জমিদার বাড়িতে পাইক-পেয়াদার চাকুরি নেন। ফলশ্র“তিতে তার বংশের খান খেতাব পাল্টে পাইক হয়। বর্তমানে ওই বাড়ির ১৪ পুরুষ চলছে। সূত্রে আরো জানা গেছে, জংশের খানের ৪ পুত্রের নামানুসারে ওই বংশের আসাদ্দি, বুদাই, মঙ্গল ও গাজী নামের ৪টি গোত্রের সৃষ্টি হয়েছে। জবসেন গ্রামের শতকরা ৯০ ভাগ লোকই পাইক বংশের। এরা সবাই জংশের খানের বংশধর বলে দাবি করেন। ওই গ্রামের মিজান পাইক জানান, ব্রিটিশ আমলে জবসেন গ্রামের জোনাব আলী পাইক নামের তার (জংশের খানের) এক ভক্ত জংশের খানের কবরস্থানটি সর্বপ্রথম পাকা করেন। কতিথ মতে, কবরস্থান নির্মানের পর জোনাব আলী রাতে ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে দেখেন জংশের খান তাকে বলেছেন-“তুমি আমার হাঁটুর ওপর ওয়াল তৈরি করেছো। এতে আমি ব্যাথা পাচ্ছি। দ্রুত ওয়াল ভেঙ্গে ফেলো” জোনাব আলী পাইক স্বপ্ন দেখার পর কবরের ওয়াল ভেঙ্গে ১৮ হাত লম্বা একটি কবরস্থান তৈরি করেন। এরপর থেকে জংশের খান একজন খুনি হলেও এলাকার লোকজন তাকে পীর মোর্শেদ বলে মনে করতে থাকেন। ফলে প্রতিবছরের ২৫ জৈষ্ঠ এলাকাবাসি তার মাজারের পাশে ওরশ মাহফিল করে আসছেন। যুগ যুগ অতিক্রান্ত হওয়ায় জংশের খানের মাজারের চুনকাম খসে পরেছে। সম্প্রতি এলাকাবাসি মাজারটি সংস্কারের কাজ করেছেন।

ঐতিহাসিক এ মাজারটি দেখার জন্য প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্নস্থান থেকে দশনার্থীরা ভীড় করছেন জবসেন গ্রামে। আবার অনেকেই রোগমুক্তির আশায় মাজারে টাকা-পয়সাসহ বিভিন্ন মালামাল দান করছেন। এলাকাবাসি মনে করছেন, ঐতিহাসিক এ মাজারটি রক্ষনা বেক্ষন করা হলে দশনার্থীদের আরো আকৃষ্ট করা যেতে পারে।