প্রভাবশালী এক লীগ নেতার বিরুদ্ধে অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ

সহ-সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ কামাল ফকিরের বিরুদ্ধে জমি অধিগ্রহনের  টাকা উত্তোলনের সময় জমির মালিকদের কাছে থেকে  প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে হাটের টলঘর, রাস্তার ইট ও সরকারি গাছ কেটে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীরা ইউএনও অফিসসহ ৯টি দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন।

সরেজমিনে এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশাল জোনের পরিচালন ও সংরক্ষণ বিভাগের অধীনে ২০০৯ সালে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ভূরঘাটা বাসষ্ট্যান্ড থেকে বাদুরতলা পর্যন্ত  প্রায় ২ কিলোমিটার ভেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহন করে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ভেড়িবাঁধ নির্মাণ করার জন্য ভূরঘাটা খালের  দক্ষিন পাড়ে  ১ কোটি ৩৭  লাখ টাকার জমি অধিগ্রহন করে। ২০১০ সালে জমির মালিকদের জমির মূল্য পরিশোধ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ভূরঘাটা গ্রামের এসএম মুনজুর এলাহী  জানান, ভূমি অধিগ্রহনের জন্য জমির ১০/১৫ জন মালিককের সমন্বয় এক একটি গ্র“প করে ২০ টি গ্র“প তৈরি করা হয়। এ সব গ্র“পের সদস্যদের সনাক্ত করার জন্য স্থানীয় তৎকালীণ ইউপি সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা  কামাল ফকিরকে দায়িত্ব দেয়া হয়। সে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে শতকরা ২৫ টাকা কমিশন নিয়ে কামাল কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন।  তিনি জমি অধিগ্রহন বাবদ ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা পেলে সেই টাকা থেকে কামাল মেম্বার ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা জোর পূর্বক নিয়ে যায়। একই গ্রামের মৃত জব্বার হাওলাদারের স্ত্রী পারুল বেগম জানান, তার  জমির অধিগ্রহনের টাকা উত্তোলনের সময় কামাল মেম্বার তার সাথে ইসলামী ব্যাংক টরকী শাখায় যান।  টাকা উত্তোলনের পর ব্যাংকে বসেই জোরপূর্বক কামাল অফিস খরচের কথা বলে ৬৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। ইউনুস সরদার জানান, তার ৯১ শতাংশ জমি অধিগ্রহনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড  ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। কাগজপত্রে কামাল ফকিরের  স্বাক্ষর ছাড়া জমি অধিগ্রহনেরর বরাদ্দকৃত টাকা কেউ উত্তোলনে করতে পারেনি। তাই বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করে কামালকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। স্থানীয় রিপন হাওলাদার, মাজেদ আকন, হালান আকন, জলিল সরদারসহ কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, একই ভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা হাতিয়ে নেয় তৎকালীন ইউপি সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ কামাল ফকির। টাকা  দিতে অপরাগতা প্রকাশ করলে অনেকেই লাঞ্ছিত হয়েছেন। হারুন বেপারী জানান,  গত বছর ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ভেড়ি বাঁধ নির্মাণের সময় খাঞ্জাপুর বাজার থেকে পোস্ট অফিস পর্যন্ত আঁধা কিলোমিটার রাস্তার ইট তুলে কামাল ফকির তার বাড়ি নিয়ে ঘরের ভিটি পাকা করেন।
এ ছাড়া ভূরঘাটা পান হাটের জরাজীর্ন ২টি টলঘর ও একটি পোস্ট অফিস ঘর  ভেঙ্গে কামাল নিয়ে যায়। এর কিছুদিন পর প্রকাশ্য দিবালোকে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের পাশে সরকারি মেহগনি গাছের বড় ২টি ডাল ও অর্ধলক্ষাধিক টাকা মূল্যের  ভূরঘাটা পান হাটের বিশাল আকৃতির দুইটি রেন্ট্রি গাছ কেটে নিয়ে যায়। স¯প্রতি ভূরঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি বিশাল  রেন্ট্রি গাছ কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির প্রভাব খাটিয়ে ৬২ হাজার টাকা বিক্রি করে তা আত্মসাত করেন। তার অপকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে কৃষি অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী কাসেম সরদার, সমাজসেবক শাহ্জাহান সরদার, মান্নান হাওলাদারসহ অনেককে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। এ ছাড়া মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেন চুন্নু মজুমদার, ছোট হাওলাদারকে।

উল্লেখিত অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি সদস্য কামাল ফকির বলেন, একটি কুচক্রী মহল আমাকে সমাজে হেয়পতিপন্ন করার জন্য এ সব অপবাদ রটাচ্ছেন। এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, তদন্ত সাপেক্ষে  আইন গত ব্যবস্থা নেয়া হবে।