মইন-মাসুদ আবার সক্রিয় – প্রবল বেগে ধেয়ে আসছে ১/১১

একজন দূত দৌড় বেড়াচ্ছেন ঢাকা-ওয়াশিংটন-নিউইয়র্ক-ক্যানবেরা। হঠাৎ করেই বাংলাদেশের রাজপথ আবার উত্তপ্ত। তত্বাবধায়ক বাতিল, বিএনপি প্রধানের এক পুত্রের জেল আরেক পুত্র ২১ আগষ্টের মামলায় অভিযুক্ত, বিরোধী দলের চীফ হুইপকে পিটিয়ে আহত – সরকার বিধংসী ভুমিকায়। সরগরম মিডিয়া ও স‍ুশীল সমাজ। আর এরই মাঝে মাঠে নেমে গেছে “ওয়ান ইলেভেনের” পুরোনো ঘটক-অনুঘটকরা। মিটিং হয়েছে আমেরিকায়, হবে অষ্ট্রেলিয়ায়। দুই দলের তালিকাভুক্তরা সতর্কতার সাথে পা ফেলছেন।

 

 ২৯ জুন ওয়াশিংটন ফোবানায় অংশ নেয়ার উছিলায় দেশ ছাড়েন বিএনপির এক ত্যাজ্য নেতা। ছাত্র মৈত্রী থেকে আসা এই নেতা ১/১১র অন্যতম অনুঘটকদের একজন ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী মহলের খুব বিশ্বস্ত। এই নেতা গত দু’বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও ঢাকায় সুশাসন নিয়ে অন্তত দু’টি সেমিনার যোগ দেন। তিনি জহির উদ্দিন স্বপন। ওয়াশিংটনে ৪ দিনের অবস্থানকালে ১/১১র পুরোনো মুরব্বীদের সাথে কয়েকটি বৈঠক করেন তিনি। ফোনে কথা বলেন লস এঞ্জেলসবাসী ১/১১র কুশীলব ব্রিগেডিয়ার চৌধুরী ফজলুল বারীর সাথে। কিছু দিন আগে থেকে জেনারেল মইন ক্যান্সারের চিকিৎসার অজুহাতে নিউইয়র্কে অবস্থান করতে থাকেন। গত রবিবার স্বপন নিউইয়র্কে  আসেন। উঠেন ডাঃ মাসুদের লংআইল্যান্ডের বাসায়। এই ডাঃ মাসুদ ছিলেন জেনারেল মইনের  “জাগো বাংলাদেশ” আমেরিকা চ্যাপ্টারের আহবায়ক।  নিউইয়র্কে এসেই মঙ্গলবার রাতে জেনারেল মইনের সাথে গুরুত্বপূর্ন মিটিং করেন মামা শ্বশুড়ের বাসায়। ৭ দিন থাকার পরিকল্পনা দ্রুততার সাথে  বদলে সিডনির টিকেট নিয়ে জেএফকে ছাড়েন বৃহস্পতিবার। উদ্দেশ্য, অষ্ট্রেলিয়ায় রাষ্ট্রদূত জেনারেল মাসুদের সাথে বৈঠক।  

গত ৩ জুলাই দাখিল করা একুশে আগষ্ট গ্রেনেড মামলার চার্জশীটে জেনারেল এটিএম আমিন ও লেঃ কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়র্দারকে অন্তর্ভুক্ত করায় এরা দু’জন আবার সক্রিয় হয়ে ওঠেন। আমিন এবং জোয়ার্দার দু’জনেই এখন দুবাইতে। সেখানে আমেরিকান ফ‍ার্মে নিরাপত্তা বিষয়ক কনসালটেন্সি করেন ডঃ আমিন। ২০০৮ এর নির্বাচনের আগে ব্রিগেডিয়ার আমিন শেখ হাসিনার সাথে জেনারেল মইনের সমঝোতার বিষয়টি সফলভাবে সম্পন্ন করেন, এবং সরকার গঠনের পরে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি নেতাদের সকল গোপন নথিপত্র ডিজিএফআই থেকে শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করে অনুগত হন। কিন্তু গ্রেনেড হামল‍া মামলায় তাকে অভিযুক্ত করার পরে আবার সকল হিসাব বদলে যায়। একদিকে আওয়ামীলীগের ওবায়দুল কাদের- মান্নাদের সুশীল বক্তব্য, রাজ্জাক-তোফায়েলদের সতর্ক অবস্থান, অন্যদিকে বিএনপির মেজর হাফিজ-আলতাফ চৌধুরীদের রহস্যজনক আটক দেখিয়ে পুরোনো পাপ মোচনের সুযোগ দেয়া- সবই একটি প্রক্রিয়ার অংশ। অন্যদিকে এ বছরে মে মাসের শেষ দিকে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার আমেরিকা সফর করেন। ঐ সময়ে ব্রিগেডিয়ার বারীর সাথে খালেদার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস ও প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেলের এক গুরুত্বপূর্ন গোপন বৈঠক হয়, যা বারীর ছোট ভাই বিএনপি নেতা নোমানীর সূত্রে অনেকেই জ্ঞাত। একদিকে এই দুই ব্যক্তি তারেক জিয়ার লোক, অন্যদিকে ১/১১ সরকারের আস্থাভাজন হিসাবে বিশেষ এসাইনমেন্ট বাস্তবায়নে কাজ করে চলছেন নিরলস।

গেলো সপ্তাহে থাইল্যান্ডের সাধারন নির্বাচনে থাকসিনের পার্টির বিপুল বিজয়ে ১/১১র কুশীলবরা শঙ্কিত হয়ে ওঠে। বিএনপির নেতৃত্ব বিলীন করার জন্য ওয়ান ইলেভেন সরকারের নেয়া প্রক্রিয়াটি চলমান থাকলেও বর্তমান সরকার এ নিয়ে কার্যকর সফল হতে পারে নি। বরং প্রতিকুল পরিবেশের মধ্যেও  স্থানীয় নির্বাচনগুলিতে বিএনপির জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। যে কোনো সময়ে জাতীয় নির্বাচন হলে থাইল্যান্ডের মত ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আর সেক্ষেত্রে, ১/১১র সাথে জড়িত সকলকে হয়ত ফাঁসির রায় মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হবে, আর আত্মীয় স্বজনদেরও দেশে থাক‍া কঠিন হয়ে পড়বে।

 ২৯ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনেমোহন সিং মন্তব্য করেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট যে কোনো সময় বদলে যেতে পারে। এ বক্তব্য নিয়ে দেশের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনা উঠলে বক্তব্যটি ফিরিয়ে নেয়া হয। কিন্তু মনমোহন সিং যা বলেছেন, তা ছিলো গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া ধারনা। মনমোহনের বার্তাটি ছিলো একটি সতর্ক সংকেত। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ক্রমশঃ উত্তপ্ত ও সহিংস হয়ে উঠছে। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিতভাবেই তা ঘটছে। সরকারের মন্ত্রী-নেতাদের দুর্র্নীতির ফাইল মোটা হচ্ছে, যেমনভাবে তৈরী হয়েছিলো ২০০৫-৬ সালে। এ নিয়ে সরকার কিছুটা আঁচ করতে পেরে সম্প্রতি গোয়েন্দা সংস্থার কমান্ডে পরিবর্তন আনেন। বসানো হয় শেখ হাসিনার সামান্য দূর সম্পর্কের চাচাতো ভাই মেজর জেনারেল শেখ মামুন খালেদকে। মাঠের গুরুত্বপূর্ন কমান্ডে আরো পরিবর্তন দেখা যেতে পারে অচিরেই।

১/১১ ঘটকদের বদ্ধমূল ধারনা, জেনারেল মইনের সাথে ভারত বিট্রে করেছে। আর দু’বছরের শাসনকালকে জায়েজ না করে শেখ হাসিনাও কথা রাখেননি। বরং তিনি ৫ম ও ৭ম সংশোধনী অবৈধ আখ্যা দিয়ে উচ্চ আদালত থেকে রায় এনেছেন। কাজেই ভবিষ্যতে সমুহ বিপদের আশঙ্কা। এ থেকে উত্তরনের জন্য যা করার এবারে নিজেদেরকেই করতে হবে। আর তা হবে, ভারতকে বাদ দিয়েই। তবে ঘটনাটি রক্তপাতহীন নাও হতে পারে। সেপ্টেম্বরে মনমোহনের সফরে গুরুত্বপূর্ণ কিছু চুক্তি সই হয়ে গেলে এ পরিকল্পনা জটিলতার মধ্যে পড়ে যেতে পারে, এমন ভাবনা থেকে সবকিছু এগিয়ে আনছে সংশ্লিষ্টরা। তৈরী হচ্ছে মাঠ। সরকার নির্যাতন বাড়াবে আরো, বিরোধী দলের কর্মসূচি সহিংস হবে। আগুন জ্বলবে, ল‍াশ পড়বে। আর এর মাঝখানে এক রাতে ঘটে যাবে সেই ঘটনাটি। সমস্ত উত্তাপ নেমে আসবে কঠিন শীতলতায়।