কৃষকদের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয় তদন্ত কমিটি

মোঃ নাসির উদ্দিন আকন ৫ দিন মজুর ও কৃষকের নামে তাদের অজান্তে ঋৃন তুলে নিজেই তা আত্মসাত করেছে। ঋন পরিশোধ না করায় ঋন খেলাপী হিসেবে ওই সব কৃষকদের নামে সার্টিফিকেট মামলা রুজু হলে তারা তাদের নামে ঋন বরাদ্বের বিষয়টি জানতে পারেন। এ নিয়ে গত ২২ জুলাই দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ‘পুলিশ মোরে বিছরায় ক্যা?’ শিরোনানে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে গৌরনদী ও ব্যাংক পাড়ায় আলোচনার ঝড় উঠে। গত রোববার (৩১ জুলাই) ব্যাংকের তদন্ত কমিটি অভিযোগের সত্যতা পেলেও তারা অভিযুক্ত নাসিরের পক্ষাবলম্বন করেন বলে ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। তদন্ত কমিটি ও স্থানীয় শাখার কর্মকর্তারা সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে বলে দিন মজুর কৃষকরা  অভিযোগ করেন ।  

দিন মজুর, কৃষক , ব্যাংক কর্মকর্তা , তদন্ত দলের সদস্যদের সাথে কথা বলে ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪ সালে অগ্রনী ব্যাংক গৌরনদী শাখার ঋন অফিসার মোঃ নাসির উদ্দিন আকন গৌরনদী উপজেলার গোবর্দ্ধন গ্রামের পিতা মৃত আছির উদ্দিন হাওলাদারের পুত্র মোঃ হোসেন আলী (৫৪), দক্ষিন গোবর্দ্ধন গ্রামের আবুল মোল্লার পুত্র নুর মহাম্মদ (৪৫) মৃত কদম আলী খানের পুত্র আকবর আলী, কালকিনি উপজেলার রমজানপুর গ্রামের মোঃ সেলিম ও শাওড়া গ্রামের মোঃ ইব্রাহিম সিকদারের নাম ও ছবি ব্যাবহার করে ৯৬ হাজার কৃষি ঋন উত্তোলন করে নিজেই তা আত্মসাত করেন। মোঃ হোসেন আলী, আকবর আলী, মোঃ ইব্রাহিম ,নর মহাম্মদের, মোঃ সেলিম  জানান, বর্তমানে তাদের নামে সুদ আসলে দ্বিগুন হয়েছে। যাহা পরিশোধ না করায় তার বিরুদ্বে সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা দায়ের হলে তারা  বিষয়টি জানার পর  নাসির উদ্দিনকে টাকা পরিশোধ করতে বললে নাসির টাকা পরিশোধ না করে তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে হুমকি দেয়।

এ নিয়ে গত ২২ জুলাই দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় ‘পুলিশ মোরে বিছরায় ক্যা?’ শিরোনানে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের গত ২৩ জুলাই নাসির উদ্দিন অভিযোগকারীদের বাড়িতে গিয়ে তাদের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়ার চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়। দঃ নাঠে রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ শওকত হোসেন জানান, স্বাক্ষর নিতে এসে নাসির কৃষকদের দ্বারা লাঞ্চিত হন। ২৪ জুলাই অগ্রনী ব্যাংক গৌরনদী শাখার ব্যাবস্থাপক মোঃ মাহাবুব আলম তাদেরকে (দিনমজুর ও কৃষক) ৩১ জুলাই তদন্ত কমিটির সামনে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ সম্বলিত চিঠি দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গৌরনদী অগ্রনী ব্যাংকের জনৈক কর্মকর্তা জানান, পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর ঋন অফিসার মোঃ নাসির উদ্দিন আকন গত ২৬ জুলাই ঋনের আসল পরিশোধ করে দেন। এবং তদন্ত কমিটির পরামর্শে ৩১ জুলাই ঋনের বিপরীতে সুদের সমুদয় টাকা পরিশোধ করে দেন নাসির উদ্দিন আকন। কৃষক   মোঃ হোসেন আলী, আকবর আলী অভিযোগ করেন, তদন্ত কমিটির কর্মকর্তা ও স্থানীয় শাখার কর্মকর্তারা তাদের কাছ থেকে নাসিরের বিরুদ্বে কোন অভিযোগ নেই লিখে দেয়ার জন্য বলে।  না দিলে অনেক ক্ষতি হবে বলে তাদের জানান। এক পর্যায়ে তাদের কাছ থেকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেন বলে তারা জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গৌরনদী অগ্রনী ব্যাংকের জনৈক কর্মকর্তা জানান,  স্বাক্ষর নেয়া ওই সাদা কাগজে গৌরনদী অগ্রনী ব্যাংকের বর্তমান ঋন অফিসার মোঃ আকবর হোসেন, নাসির উদ্দিন আকনের বিরুদ্বে কোন অভিযোগ নেই এবং তারা নিজেরা ঋন নিয়ে নিজেরাই পরিশোধ করেছেন ষ্টেটম্যান লিখে তদন্ত কমিটির কাছে জমা দেন।

কৃষকরা  অভিযোগ করেন, তদন্ত কমিটি নাসির উদ্দিন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাজ করেছে। তদন্ত কমিটির সামনে অগ্রনী ব্যাংক শেখের হাট শাখায় বর্তমানে কর্মরত, তৎকালীন গৌরনদী অগ্রনী ব্যাংকের ঋন অফিসার মোঃ নাসির উদ্দিন আকনের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিন বলেন, সত্য কথা বললে মায় মার খায়, না বললে বাপে কান্দি খায়। তখন পরিস্থিতির জন্য আমাকে এ কাজ করতে হয়েছিল। সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে গৌরনদী অগ্রনী ব্যাংকের ম্যানেজার মোঃ মাহাবুব আলম বলেন , এ কথা  সঠিক নয়।  তদন্ত টিমের সদস্য অগ্রনী ব্যাংক বরিশাল আঞ্চলিক শাখার এসপিও খান গোলাম মোহাম্মদ ও এসও হাসান ইকবালের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, তদন্ত শেষে রিপোর্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠনো হবে উর্ধতন কর্তৃপক্ষই ব্যাবস্থা নিবেন। সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে এসপিও খান গোলাম মোহাম্মদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নই।