বাংলাদেশ (টিসিবি)র নিয়োগকৃত ডিলাররা পন্য উত্তোলন করে ন্যায্য মূল্যে বিক্রি না করে কালো বাজারে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে সরকারের এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গৌরনদীর সাধারন ভোক্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রনে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গত ২১ জুলাই ৫টি পন্য নিয়ে গৌরনদীতে কার্যক্রম শুরু করে। এতে গৌরনদী পৌর এলাকায় টরকী বন্দরে মেসার্স শিশির কুন্ড, গৌরনদী বন্দরে মেসার্স এভারেস্ট ট্রেডিং, বার্থী ইউনিয়নে মেসার্স সরদার এন্টারপ্রাইজ, বাটাজোর ইউনিয়নে মেসার্স আনন্দ লাল সমদ্দার, নলচিড়া ইউনিয়নে মেসার্স খান ষ্টোর, চাঁদশী ইউনিয়নে মেসার্স অয়ন এন্টাপ্রাইজকে ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়। প্রত্যেক ডিলারকে বিক্রির জন্য ১ শত ২ টাকা লিটার দরে সয়াবিন তৈল, ৫৮ টাকা কেজি দরে মসুরির ডাল, ৫৮ টাকা কেজি দরে চিনি, ৫৮ টাকা কেজি দরে ছোলা, ৭০ টাকা কেজি দরে জাহেদী সাহের খেজুর এবং ৫৫ টাকা কেজি দরে খায়ের খেজুর বিক্রির জন্য নির্দেশ দেয়া হয়। বরিশাল টিসিবি ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে, গত ২৭ জুলাই গৌরনদী পৌর এলাকায় টরকী বন্দরে মেসার্স শিশির কুন্ড, গৌরনদী বন্দরে মেসার্স এভারেস্ট ট্রেডিং নামের প্রতিষ্ঠান দুটি উলে¬খিত ৫টি পন্য উত্তোলন করেন। প্রতিটি ডিলার ২ মেট্রিক টন চিনি, ১ হাজার ২শ লিটার সয়াবিন তৈল ৫শ কেজি মসুরির ডাল, ৫শ’কেজি ছোলা, ২শ’ ৫০কেজি জাহেদী সাহের খেজুর, ২শ ৫০ কেজি খায়ের খেজুর উত্তোলন করেন। গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গৌরনদী বন্দরে গিয়ে কোথাও টিসিবির পন্য বিক্রয়ের ডিলারের দোকান খুজে পাওয়া যায়নি। এ সময় গৌরনদী বন্দর ব্যবসায়ী সমিতির কার্যকরী কমিটির সদস্য মো. আলতাফ হোসেন, পরিমল চন্দ্র ঘোষসহ একাধিক ব্যাবসায়ী জানায়, গৌরনদী বন্দর এলাকায় এ বছর টিসিবির পন্য বিক্রির কোন দোকান খোলা হয়নি বা কোন পন্য বিক্রি হচ্ছে না।
দিয়াশুর গ্রামের আবুল কালাম, উত্তর পালরদী গ্রামের সোহরাব হোসেন, দক্ষিন বিজয়পুরের আঃ সাত্তার মিয়াসহ একাধিক ব্যাক্তি বলেন, “মোরা রোজার লাইগ্যা সরকারের দেওয়া অল্প পয়সায় (টিসিবির) মাল কেনার লাইগ্যা হগোল জায়গায় ঘুইররা কোন দোকানের খোজ পাইলাম না। মোগে গরীবের লাইগ্যা সরকার এই দোকান চালু করলেও হেইয়া মোগে না দিয়া নেতারা বেলাকে বেছে বলে হুনছি। মোরা কোন মাল পাই না। টরকী বন্দরের সার ব্যবসায়ী শিশির কুন্ড টিসিবির ডিলার। সরেজমিনে সেখানে গিয়ে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিশির কুন্ড একজন সার ব্যবসায়ী এটা এলাকার সবাই জানে। কিন্তু সে টিসিবির ডিলার বিষয়টি কেউই জানেন না। বা কোন মাল বিক্রি করেন না। স্থনীয়রা জানান, ডিলার শিশির কুন্ড টিসিবির পন্য উত্তোলন করে তা কালো বাজারে বিক্রি করে দেন।
অভিযোগের ব্যপারে ডিলার শিশির কুন্ডের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। মো. মতিউর রহমান, মো, দেলোয়ার হোসেনসহ অনেকেই জানান, পন্যগুলোর বিক্রি মূল্য বর্তমান বাজার দরের চেয়ে অনেক কম হওয়ায় ডিলাররা অধিক মুনাফার আশায় পন্যগুলো কালো বাজারে বিক্রি করে দেয়। গৌরনদী বন্দর, টরকী বন্দর, মাহিলাড়া, আশোকাঠীসহ বিভিন্ন হাট বাজারে গিয়ে ব্যাবসায়ীদের কাছে জিজ্ঞাসা করে দেখা যায়, ১শত ২০ টাকা লিটার দরে সয়াবিন তৈল, ৯৫ টাকা কেজি দরে মসুরির ডাল, ৭০ টাকা কেজি দরে চিনি, ৭৫ টাকা কেজি দরে ছোলা, ১শ ৫ টাকা কেজি দরে জাহেদী সাহের খেজুর এবং ৯০ টাকা কেজি দরে খায়ের খেজুর বিক্রি হচ্ছে। ব্যাবসায়ীরা জানান, বাজার মূল্য ও টিসিবির নির্ধরিত মূল্যের মধ্যে বিরাট তফাত থাকায় টিসিবির অসাধু ডিলাররা পন্য কালো বাজারে বিক্রি করে থাকে। বিক্রি মেসার্স এভারেস্ট ট্রেডিং এর মালিক মো. আবু সাঈদ নান্টুর কাছে অভিযোগ প্রসংঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চলতি বছর আমি কোন মাল উত্তোলন করিনি। পন্য উত্তোলন প্রসংঙ্গে বরিশাল টিসিবি ক্যাম্পের অফিস প্রধান মো. ইসমাইল মজুমদার বলেন, গত ২৭ জুলাই মেসার্স এভারেস্ট ট্রেডিং নামে পন্য উত্তোলন করা হয়েছে।
গৌরনদীর কোথায়ও ডিলাররা পন্য বিক্রি করছে না প্রসংঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পন্য সরবারহের দায়িত্ব আমার, তদারকির দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের। এ ব্যপারে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, টিসিবির কার্যক্রম তদারকির জন্য অচিরেই একজন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হবে।