বরিশালবাসী শিশু সুকান্ত হত্যার বিচার চায়

বাসায় বসে ঘাতকদের নির্মম বুলেটে নিহত কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক চীফ হুইপ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ৬ বছরের শিশু পুত্র সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাতের হত্যা মামলাটি পূণরুজ্জীবিত করার জন্য ফুঁসে উঠেছে বরিশালবাসী। আজ রবিবার বিকেলে ১৫ আগস্ট পালনের জন্য অনুষ্ঠিত জরুরি সভার মাধ্যমে বরিশালের গৌরনদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দ এ দাবি করেন। সভায় বক্তারা একই সাথে চাপাপড়া সাবেক মন্ত্রী ও কৃষক কুলের নয়ন মনি শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের হত্যা মামলাটিও পূণরুজ্জীবিত করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে স্থানীয় কার্যালয়ে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ আলাউদ্দিন বালীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন ডেপুটি কমান্ডার মোঃ মনিরুল হক, সহকারি কমান্ডার সাংগঠনিক আনোয়ার হোসেন, সহকারি কমান্ডার পূর্ণবাসন, সমাজ কল্যাণ ও শহীদ যুদ্ধাহত আব্দুল হক ঘরামী, সহকারি কমান্ডার অর্থ হাবিলদার আঃ রাজ্জাক, সহকারি কমান্ডার ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক সুবেদার মেজর (অবঃ) মোঃ মোস্তফা, সহকারি কমান্ডার মোঃ সামচুল হক, কার্যকরী সদস্য মেজবা উদ্দিন আকন, সোহরাব উদ্দিন রাঢ়ী, গোলাম মোস্তফা ভূইয়া, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এইচ.এম নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

একান্ত সাক্ষাতকারে শহীদ সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাতের মা ও কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী শাহানারা আব্দুল্লাহ বলেন, “আমার সুকান্ত বাবু ছিলো অসম্ভব আমার ভক্ত। আমি যখন যা তাকে বলতাম ও সবই তা মেনে নিতো। বয়সে ছোট হলেও শিশু সুলভ চপলতা বা চঞ্চলতা ছিলো না ওর মধ্যে। ৩৫ বছর পর বাবুর কথা আজও বারবার তখনই মনে পড়ে, যখন দেখি অন্যসব সন্তানেরা মায়ের কথা শোনে না; কিন্তু আমার বাবুই কেবল আমার কথা শুনতো। ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ যারা ইতিহাসের নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন তাদের মধ্যে বরিশালের ছয়জনের মধ্যে একজন হচ্ছে-সুকান্ত বাবু ওরফে বাবু সেরনিয়াবাত।

বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি ও সাবেক মন্ত্রী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের পুত্র বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক চীফ হুইফ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর বড় পুত্র সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাত। শাহানারা আব্দুল্লাহ আরো বলেন, সেই ভয়াল কালো রাতের একটি কথাই এখনো আমাকে পীড়া দেয়, ঘাতকরা যখন অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে আমাদের পরিবারের সবাইকে বাড়ির দোতালা থেকে নিচতলায় নিয়ে আসে, তখন বাবুকেও হেঁটে আসতে হয় নিচে। এরপর আমাদের সারিবদ্ধ করে দাঁড় করানো হয় নিচতলার ড্রয়িং রুমে। এমন সময় সুকান্ত বাবু আমার কোলে ওঠার আবদার করে কান্নাজুড়ে দেয়। কিন্তু ঘাতকের বন্দুকের সামনে আর তাকে কোলে নিতে পারিনি। হঠাৎ করে ঘাতকেরা গুলি ছুঁড়তে থাকলে আমার অনেকেই মাটিতে শুয়ে পড়ি। ঘাতকেরা চলে যাওয়ার পর শহীদ সেরনিয়াবাতের মৃতদেহের নিচেই চাপা পড়া বাবুর লাশ খুঁজে পাওয়া যায়। অবুঝ বাবুর পিতা-মাতা ঘাতকদের বুলেটের মুখ থেকে ফিরে এলেও তাদের আদরের সন্তান বাবু আর ফিরে আসতে পারেনি।

সেই ভয়াল কালো রাতে তৎকালীন পানিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের মিন্টু রোডের বাড়িতে বরিশালের ছয়জন নারী-পুরুষ নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন। তারা হলেন-সাবেক মন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি কৃষককুলের নয়নমনি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ভাইয়ের ছেলে সাংবাদিক শহীদ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতী সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাত, বরিশালের ক্রিডেন্স শিল্পগোষ্ঠির সদস্য আব্দুর নঈম খান রিন্টু। আহত হয়েছিলেন নয়জন। তারা হলেন-বেগম আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, শাহানারা আব্দুল্লাহ, বিউটি সেরনিয়াবাত, হেনা সেরনিয়াবাত, আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ, রফিকুল ইসলাম, খ.ম জিল্লুর রহমান, ললিত দাস ও সৈয়দ মাহমুদ।