সদর হাসপাতালে ব্যান্ডেজ কৌশল!

শাহীন হাসান, বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বরিশাল নগরীর সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগে কতিপয় ব্রাদারদের অবৈধ ব্যান্ডেজ বাণিজ্য জমে উঠেছে। নেই কোন প্রশাসনিক পদক্ষেপ। ভোগান্তিতে রোগীরা। উপরি কামাইয়ের রমরমা প্রক্রিয়াটি গড়ে উঠেছে ইএমওদের নিয়মিত অনুপস্থিতির কারণে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, রোগীদেরকে জিম্মি করে মাসে প্রায় ৬৩ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতিষ্ঠানটির ভর্তি রেজিস্টার সূত্রে, প্রতিদিন গড়ে ৩০ জন রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসে জরুরি বিভাগে। এর মধ্যে মারামারি, দুর্ঘটনা এবং পারিবারিক কলহে আহত রোগী বেশি। ১০ জন রোগী স্থানীয় এবং বিভিন্ন পরিচিতি থাকা এবং ৫ জন রোগী দুস্থ ও অসহায় হওয়ার কারণে সমালোচনার ভয়ে কর্তব্যরত ব্রাদাররা একপ্রকার বাধ্য হয়েই ফ্রি করে থাকে। আরো ১০ জনের ছোট-খাটো কাটা ছেড়া হওয়াতে ড্রেসিং এবং অল্পমাত্র ব্যান্ডেজ নিয়েই চলে যায়। কিন্তু বাকি ৫ জন রোগী নগরীর বাহিরে ও দূরবর্তী হওয়াতে গড়ে ২/৩শ’ টাকা দিয়েই চিকিৎসাসেবা পেতে হয়। এ হিসেবে সরাসরি রোগীদের পকেট থেকে দৈনিক প্রায় ২ হাজার, মাসে ৩০ হাজার এবং বছরে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় উক্ত ব্রাদাররা।

সরেজমিনে ও বিভিন্ন অভিযোগ সূত্রে জানা যায, চরকাউয়া দিনার এলাকা থেকে ৬৫ বছরের আলমগীর হাওলাদার পড়ে গিয়ে পায়ের গোড়ালিতে আঘাত পেয়ে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এসে ওয়ার্ডবয় এবং কর্তব্যরত ব্রাদারকে ৮শ’ টাকা দিয়ে চিকিৎসা সেবা পেতে হয়েছে। নগরীর কাউনিয়া এলাকায় রিকশা চালক জাহাঙ্গীর এসেছিলেন তার স্ত্রী (আছমার) কেটে যাওয়া ডান হাত ও মাথার জখমের চিকিৎসা সেবা পেতে। কিন্তু তাকেও ৫শ’ টাকা দিতে হয়েছে। আরো জানা যায়, রোগীরা টাকা দিতে না চাইলে ডিউটিতে থাকা ব্রাদাররা বলেন, এখানে হবে না শেবাচিমে নিয়ে যান। ডাক্তার নেই। যখন নির্দিষ্ট ওয়ার্ডবয়দের মাধ্যমে বলা হয় টাকা দেবো তখন তারা চিকিৎসাসেবা দিতে রাজি হয়। সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কিছু সময় সতর্ক দৃষ্টি দিলে এরকম দুর্নীতির চিত্র নিজ চোখেই দেখা যায়। বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, এখন প্রত্যেকের বেতন গড়ে ২০ হাজার টাকার মধ্যে আর যারা একটু সিনিয়র তাদের বেতন তো ৩০ হাজারের মতো।

ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা নাম গোপন রাখার শর্তে বলেন, এ টাকায় নিশ্চয়ই কষ্ট হওয়ার কথা নয়। তারপরও প্রতিদিন যারা ডিউটিতে থাকেন তারা প্রত্যেকে পকেট ভারী করে বাসায় যায়। জরুরি বিভাগের ব্রাদার ইনচার্জসহ অন্যান্যদের সাথে কথা বললে তারা বিষয়টির কোন সদুত্তর না দিয়ে হেসে কৌশলে এড়িয়ে যান। তবে তারা সাফাই গেয়ে নিজেদের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, এখানে যেসব ভাঙ্গা-চুড়া বা অন্যান্য যেসব রোগী আসে তা যদি বাহিরের কোন ডাক্তার যেমন পিযুস কিংবা আজিজ রহিমকে দিয়ে চিকিৎসা করায় তাহলে হাজার হাজার টাকা লেগে যাবে। কিন্তু আমরা অল্প টাকায় করে দেই। তাতে রোগী সুস্থও হয়। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ডা. আব্দুর রশিদ বিষয়টি খতিয়ে দেখবো বলেন। আরএমও ডা. শামসু উদ্দিন বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় ইএমও কম। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে জরুরি বিভাগে অর্থনৈতিক জালিয়াতি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।