নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বরিশালের উজিরপুর উপজেলার জল্লা ইউনিয়নের কুড়ালিয়া গ্রামে অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীদের হাতে কলেজ ছাত্র ও ব্যবসায়ী হত্যার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সকালে স্থানীয়রা কুড়ালিয়া পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাসহ চার পুলিশকে আহত করেছে। এসময় আত্মরক্ষার্থে পুলিশ বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে বিক্ষোভ মিছিলে গুলিবর্ষন করে। এলাকাবাসি ও পুলিশের হামলা ও পাল্টা হামলায় পুলিশ কর্মকর্তাসহ চারজন ও ১৬ জন গ্রামবাসী আহত হয়। গুরুতর আহতদের বরিশাল শেবাচিম ও উজিরপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে ওই এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী, আহত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার ভোরে স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা কুড়ালিয়া পুলিশ ক্যাম্প সংলগ্ন রাস্তার ওপর থেকে কুড়ালিয়া বাজারের মুদি ব্যবসায়ী ও বরিশাল অমৃত লাল দে কলেজের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র স্বপন সমদ্দারকে (২৫) মুর্মুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে। স্বপন কুড়ালিয়া গ্রামের হরলাল সমদ্দারের পুত্র। স্থানীয়রা স্বপনকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে সে (স্বপন) মারা যায়। স্থানীয় অরুন ও বরুন সমদ্দারসহ একাধিক ব্যক্তিরা জানান, প্রাথমিকভাবে গ্রামবাসী ধারনা করেন পুলিশ প্রহরায় স্বপন গুরুতর আহত হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে ওইদিন সকাল সাড়ে নয়টার দিকে হাজার-হাজার গ্রামবাসী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে কুড়ালিয়া পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালায়। এসময় ক্যাম্পে থাকা পুলিশ সদস্যরাও আত্মরক্ষার্থে জনতার ওপর ২১ রাউন্ড গুলি বর্ষন করে। পুলিশের গুলিবর্ষনে শিশুসহ ১৬ জন গ্রামবাসী আহত হয়। গুরুতর আহত কমলা রানী (৪০), দেবাশীষ (৯), সুশান্ত বাড়ৈকে (৩৫) বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও পরেশ রায় (১৪), শংকর রায় (১৫), শুশান্ত বাড়ৈ (৩৫), শুব্রত বাড়ৈ (১৫), আলো রায় (৪০), স্বজল অধিকারী (১১), মালতী রায় (৬৪), বকুল বেগমকে (৫০) উজিরপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জনতার ছোড়া ইটপাটকেলের আঘাতে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ দেলোয়ার হোসেন, হাবিলদার নাসির উদ্দিন, কনষ্টবল সোহেল, ইউনুস আলী ও রাসেল আহত হয়েছে।
খবর পেয়ে উজিরপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন। ওইদিন দুপুরে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকা সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মোতালেব হোসেন, বরিশাল সদর সার্কেল এএসপি রবিউল ইসলামসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। একইদিন বিকেলে বরিশালের ভারপ্রাপ্ত ডিআইজি ভানু লাল দাস ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটন করে দোষী ব্যক্তিদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিয়েছেন। এদিকে স্বপন হত্যার সাথে জড়িত থাকার সন্দেহে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে স্থানীয় অমল চন্দ্র মন্ডল নামের এক ব্যবসায়ীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
নিহত স্বপনের ভাই তপন সমদ্দার জানান, তার ভাই (স্বপনকে) পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তপন সমদ্দার বাদি হয়ে মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। স্বপন সমাদ্দারের পিতা হরলাল সমাদ্দার বলেন, তার পুত্র স্বপন সোমবার রাতে কুড়ালিয়া বাজারের মুদি দোকানে ঘুমিয়েছিলো। উজিরপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামিম শেখ জানান, মঙ্গলবার ভোরে কয়েকজন মাছ ব্যবসায়ী পুলিশ ক্যাম্প অতিক্রমকালে অজ্ঞান অবস্থায় স্বপন সমদ্দারকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে। পরে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা স্বপনকে উদ্ধার করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে নেয়ার পথে স্বপন মারা যায়।
উজিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি সুকুমার রায় বলেন, গ্রামবাসী কিছু না বুঝেই পুলিশ ক্যাম্পে হামলা চালিয়ে ভাংচুর শুরু করে। এসময় ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা তাদের নিভৃত করার চেষ্ঠা করলে বিক্ষুব্ধরা ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশ ২১ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করেছে। তিনি আরো বলেন, নিহত স্বপনের লাশের ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের শান্ত রাখতে ওই এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েত করা হয়েছে।
সংবাদ: "খোকন আহম্মেদ হীরা, কুড়ালিয়া (উজিরপুর) থেকে ফিরে"