রাষ্ট্রপতির সংলাপ এখন তত্ত্বাবধায়কমুখী

খোন্দকার কাওছার হোসেন : নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতির সংলাপ এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পূণ:প্র্রবর্তনের আলোচনার দিকে মোড় নিচ্ছে। ইতোমধ্যে এ সংলাপে অংশ নেয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনা ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৪দলীয় জোটের সংলাপে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত ও সংলাপে তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু প্রকাশ হয়ে পড়ায় বিষয়টি এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে।

নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে রাষ্ট্রপতি সংলাপ আয়োজন করলে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এ নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করে। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, এটা রাষ্ট্রপতির কাজ নয়। রাষ্ট্রপতিকে বিতর্কিত করতেই প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে এ কাজ করাচ্ছেন। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে, আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিন। এরপর নির্বাচন কমিশন গঠন করুন। তাদের এমন নেতিবাচক মনোভাবের কারণে অনেকেই ধারণা করেছিলেন রাষ্ট্রপতির সংলাপে হয়তো যাবেনা বিএনপিসহ ৪ দলীয় জোট।

গত সোমবার রাতে ৪দলীয় জোটের সভায় অনেকটা নাটকীয়ভাবে সংলাপে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। যা রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই বিবেচনা করেছে জোট।

জোটের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথমদিকে এ সংলাপের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারনা পোষন করলেও তারা তাদের স্টাটেজি পরিবর্তন করেছে। সংলাপকে তারা একটা সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করছে।

তাদের মতে, সংলাপে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুকে পূণ:প্রতিষ্ঠা করার জোড় দাবি জানাবেন। রাষ্ট্রপতিকে এ ইস্যূতে ভুমিকা রাখার আহ্বান জানাবেন। রাষ্ট্রপতি উদ্যোগ নিলে তত্তা¡ধায়ক সরকার পদ্ধতি ফিরিয়ে আনতে আওয়ামী লীগ হয়তো রাজি হতে পারে। যদি রাষ্ট্রপতি উদ্যোগ না নেন বা আওয়ামী লীগ রাজি না হয় তাতেও ক্ষতি নেই জোটের।

তখন এ দাবিতে হরতালসহ নানামুখী আন্দোলন করা তাদের জন্য সহজ হবে। তারা জনগণকে সহজেই বোঝাতে পারবেন সরকার তাদের কোনো দাবিই আমলে নিচ্ছে না এমনকি রাষ্ট্রপতিও তাদের কোনো কথা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন না।

এমন পরিস্থিতিতে তাদের বিরুদ্ধে জনগণের যে অভিযোগ বিরোধী দল সংসদে যায়না, কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়না, অহেতুক আন্দোলন করে তা ও আর ধোপে টিকবেনা। জনগণকে তাদের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা সহজ হবে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে আন্দোলন নিয়ে দীর্ঘদিন রাজপথে রয়েছি, সেই আন্দোলনের অংশ হিসেবেই এবার আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে যাবো। রাষ্ট্রপতির কাছে জনগণের ন্যায়সঙ্গত দাবিতে কথা বলবো।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠান ও নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে আমাদের দাবির বিষয়গুলো রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরবো। তার সঙ্গে কথা বলবো।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টিই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্বশর্ত। তাই এ বিষয়টিই এখন মূখ্য।

তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিএনপি আগামী নির্বাচনে যাবে না, সে বিষয়টি রাষ্ট্রপতিকে জানিয়ে আসবো।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল না হলে শুধু ইসি নিয়োগ করে সমস্যার সমাধান হবে না বলে রাষ্ট্রপতিকে মত দিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় বঙ্গভবনে এলডিপি সভাপতি ড. কর্ণেল অলি আহমদ রাষ্ট্রপতিকে তার দলের এ মতামত জানান।  
সংলাপের প্রথমদিন  জাতীয় পার্টি (এরশাদ) নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগে একটি বিধিমালা প্রণয়ন করে তা অনুসরণের প্রস্তাব দিয়েছে। জাসদ সাংবিধানিক পদের ব্যক্তিদের নিয়ে সার্স কমিটি গঠন করার প্রস্তাব দেয়।

দ্বিতীয় দিনের সংলাপে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি বলেছে, নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগে সংবিধান অনুযায়ী একটি আইন করা উচিৎ। আর জাতীয় পার্টি (জেপি) বলেছে, ইসি নিয়োগের বর্তমান পদ্ধতি অকার্যকর নয়; তবে নতুন আইন হলেও তাদের আপত্তি নেই।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সংবিধান অনুযায়ী আইন করার প্রস্তাব দিয়েছে বলেছে, ঐকমত্যে পৌঁছাতে প্রয়োজনে রাষ্ট্রপতির সংলাপের পর দলগুলোর সঙ্গে সরকারের অনানুষ্ঠানিক সংলাপ হতে পারে।

চারদলীয় জোটের শরিক ইসলামী ঐক্যজোট আগামী ১ জানুয়ারি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) ২ জানুয়ারি, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ১১ জানুয়ারি সংলাপে অংশ নেবে। তাদের কাছে ইতোমধ্যে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছেছে। তবে জামাতে ইসলামী সংলাপের কোনো আমন্ত্রণ পায়নি বলে জানান দলের মহানগর ইউনিটের সহকারী সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুল।

সংলাপে বিএনপির সুরে সুর মিলিয়ে ইসলামী ঐক্যজোট ও বিজেপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পূণঃবহালের দাবি জোরালো ভাবে জানাবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাদের দাবি পূরণ না হলে তারা আগামী নির্বাচনে অংশ নিবেনা তাও রাষ্ট্রপতিকে জানিয়ে আসবে। তাদের মতে,নির্বাচন কমিশন গঠনের সঙ্গে সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি ফিরিয়ে আনা এখন মূল দাবি।