শাহীন হাসান, বরিশাল ॥ নানাবিধ ঝই-ঝামেলার মধ্য দিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিসিসি মেয়র শওকত হোসেন হিরন। ৫বছর মেয়াদি বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে নগর পিতার দায়িত্ব পালনে দেখতে দেখতে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে ৩বছর পার করে রীতিমত তিনি যেমনি ক্লান্ত তেমনি স্পৃহাময়। কোন অঘটনের খবরে বিসিসি মেয়রের উপস্থিতি বিগত দিনের মেয়রদের তুলনায় সত্যিই লক্ষনীয়। তদুপরি আওয়ামিলীগের অভ্যন্তরীন ক্রোন্দলের জটিলতা অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সাথে মোকাবেলা করে বেস ভালই আছেন তিনি। কিন্তু নগর পিতার ক্ষমতা পাওয়ার পর জনগনের প্রত্যাশা পূরনে তিনি কতটুকু প্রশংসা বা বদনাম কুরিয়েছেন এ হিসাব এতটাই জটিল যার ফলাফল নির্ভর করে তার ভবিষ্যৎ প্রাপ্তিতার উপর। ভাল মন্দ মিলানো এই নেতা ২০০৮ সালের ৪ আগষ্ট বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে আনেন যা বরিশার আওয়ামিলীগের জন্য অকল্পনীয়। সেই থেকে দায়িত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করে তিনি এখন সর্বমহলে এতটাই আলোচিত যা বিগত সময়ে কোন মেয়র অর্জন করতে সক্ষম হয়নি।
সর্বশেষ ২৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আব্দুর রাজ্জাকের জানাযার নামাযে অংশ গ্রহন ও শ্রদ্ধঞ্জলী অর্পন একরকম পিলে চমক দিয়েছে অভ্যন্তরীন আ’লীগের প্রতিপক্ষদের। এর বাইরে বাকের গঞ্চের সেজুতি থেকে শুরু করে আলোচিত হত্যা শিক্ষক মুক্তিযোদ্ধা জিন্নাত আলীর পরিবারের পাশে দাড়ান মেয়র হিরনকে প্রশংসিত করেছে। বেশীরভাগ আলোচিত হত্যা কান্ডে তার এতটাই ভূমিকা যে নিহতের পরিবারগুলোর কাছে তিনি রীতিমত ভগবান খেতাব পেয়েছেন। তবে বিচ্ছিন্ন ২/৪টি বির্তকিত কর্মকান্ডর দায়ে তাকে অনেকটা বদনামের ভাগি হতে হয়েছে জোরপূর্বক।
মেয়র হিরন ক্ষমতায় আসার পর সবথেকে বেশী বির্তকিত হয়েছেন নথুল্লাবাদ বাসস্টান্ড থেকে শ্রমিক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেনকে উচ্ছেদর মাধ্যমে। পাশাপাশি রয়েছে আস্থাভাজন ব্যক্তিদের দিয়ে টেন্ডারবাজী করানোর অভিযোগ। যা কিনা এক প্রকার আহার কেরে নিয়েছে অসংখ্য সাধারন ঠিকাদার পরিবারদের। যার মোটা অংকের ভাগা পরোক্ষভাবে তিনিও পেয়েছেন। অবশ্য পরে কৌশল পাল্টে গুছ পার্টি তৈরী করা হয়। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, মেয়রের আস্থাভাজন মামুন,অরুন, দ্বিপুর টেন্ডারবাজীর কারনে বদনাম কুরাতে হয়েছে বিসিসি মেয়র হিরনকে।
উল্লেখ করা যেতে পারে ১১ ফেব্র“য়ারী দুপুরে যুবলীগের মেজবাউদ্দীন দীপু ও আলাল ওরফে টাক আলালসহ ৬/৭ জন টেন্ডারবাজ তাদের নির্দেশের বাইরে কাজ যাওয়ার অপরাধে গণপূর্ত’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোশারেফ হোসেনকে গালিগালাজ পূবৃক চেয়ার থেকে টেন হিচরে মাটিতে ফেলে বেধম প্রহারের ঘটনা। পা.উ.বোর একটি সূত্র জানিয়েছে, মামুন-অরুন- দ্বিপু কর্তৃক গত ২১ মার্চ বিকেলে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিন কোটি টাকার কাজটিও ভাগিয়ে নেয়া হয়েছে মেয়র হিরনের পরোক্ষ নির্দেশে। সূত্রটি আরো জানায়, ১১ মার্চ ঠিকাদার মামুন ও আবুয়াল হোসেন অরুনের তোপের মুখে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৪ গ্র“পের দেড় কোটি টাকা কাজের লটারী প্রক্রিয়া স্থগিত করতে বাধ্য হয়েছিলেন নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আরিফ হোসেন।
অপরদিকে নগরবাসীর উন্নয়নের জন্য মেয়র হিরন অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান থেকে শুরু করে শহরের সোভা বর্ধন , রাস্তা প্রশস্তকরন, নগরবাসীর চিত্ত বিনোদনর জন্য মেয়র নাইট, মেয়র বাইট সহ যাত্রী ভোগান্তি দূরিকরনের লক্ষে সিটি বাস সার্ভিস, ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা ও মাহিন্দ্রর সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে যথারিতী নগরবাসির কাছে বেশ আলোচিত ও প্রশংসিত হয়েছেন তিনি, যা নিজ চোখে অবলোকন করে প্রশংসা করেছেন খোদ প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিসিসির উচ্ছেদ অভিযানের ক্ষেত্রে একটি সূত্র জানায়, উচ্ছেদ অভিযানে মেয়র হিরন তার আপন বোনের ক্ষেত্রেও স্বজনপ্রীতি করেনি। বোনের লাগোয়া বাড়ির দেয়াল ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন।
অবৈধ দখলদারদের কারনে পুরান বাজারের ঐতিহ্য অনেকটা বিলীন হয়ে যাচ্ছিল। সেই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে সিটি কর্পোরেশন। মেয়র হিরন সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে সড়ক গুলো বর্ধিতকরনের কাজ এখনও চলমান রেখেছে। এর পূর্বে বান্দরোডের অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে সম্পত্তি উদ্ধার করেছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। সেখানে অবৈধভাবে গড়ে ওঠে একুশ দোকান উচ্ছেদ করছে বিসিসি। তা ছাড়া নদী খাল রক্ষায় সেচ্চার থাকার আহবান জানান হয়েছে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে বরিশাল নদী-খাল রক্ষা আন্দোলন কমিটিকেও। এর বাইরে কাউয়ার চর নদী পারাপার টোল ভারা মওকুফকেও মেয়র হিরনের প্রশংসনীয় আরেকটি কাজ বলে মন্তব্য করছেন এই রুটে নদী পারাপারের যাত্রীরা।
উল্লেখ্য, আফতাব-হিরনের প্রকাশ্য লড়াই শুরু হয় মূলত এ্যড শওকত হোসেন হিরন বিসিসি ময়ের পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর-পরই। হিরনের পূর্বে হাসানাতের সবথেকে আস্থাভাজন পাত্র ছিলেন শ্রমিক লীগের সভাপতি আফতাব হোসাইন। আফতাব মেয়র হিরনকে মানতে পারে নি মেয়র হিসেবে। শুরু হয় মনস্তাত্ত্বিক লড়াই। আফতাব-র্হিনের লড়াইর মধ্যদিয়ে অভ্যন্তরীন প্রতিপক্ষ দমনের শেষ খেলাটা দেখেছে বরিশালবাসী।
চলতি বছরের ২৭জানুয়ারী এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র নিয়ে মেয়র হিরন ও আফতাব হোসেন পরস্পরকে ঘায়েল করতে হার্ডলাইনে যান। শিক্ষার্থী কর্তৃক মানববন্ধন করানোর অভিযোগ এনে তৎসময়ে আফতাব হুঙ্কার দিয়ে বলেছেন মেয়র হিরনকে সাত দিনের মধ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। নচেৎ বরিশালের সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। শুরু হয় প্রকাশ্য লড়াই। গত ১ ফেব্র“য়ারী দুপুরে নির্বার্হী ম্যাজিষ্টেট কামরুজ্জামান এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী পরিচালক জহিরুল ইসলাম নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে ফিটনেসবিহীন ও অবৈধ যানবাহন আটকিয়ে জরিমানা আদায় করার সময় জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক শাহ আলম জরিমানা কম করার অনুরোধ করলে ভ্রাম্যমান আদালতের আদেশে পুলিশ শ্রমিক নেতা শাহ আলমকে মারধর করলে ঘটনায় শ্রমিক-পুলিশ সংর্ঘষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে ৩ পুলিশ সদস্যসহ, সাংবাদিক, শ্রমিক সহ আহত হয় অর্ধশত।
নথুল্লাবাদ বাসটার্মিনালে শ্রমিক-পুলিশের রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের পরই কথা উঠে পুলিশের উপর হামলা চালাতে জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আফতাব হোসেন প্রকাশ্য ইন্ধন দিয়েছেন। তিনি শ্রমিকদের ক্ষেপিয়ে তোলায় এরকম রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষ ঘটেছে। সংর্ঘষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। এর মধ্যে একটি দ্রুত বিচার আইন ও অপরটি পুলিশ সংক্রান্ত আইনে মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দুটিতে শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সাধারন সম্পাদকসহ দু’শতাধিক জনকে আসামী করা হয়। মামলা জটিলতা কাটিয়ে আফতাব মটর সাইকেল বহর নিয়ে বরিশাল আসছিলেন, খবর পেয়েই সুযোটি সৎ ব্যাবহার করেন বিসিসি মেয়র হিরন। তার নির্দেশে পুলিশি বাধায় বরিশাল উঠতে পারেনি আফতাব। ফিরে যেতে হয়েছে ঢাকায়। ওই দিন বিকেল থেকেই মেয়র হিরন সমর্থকরা বাস টার্মিনাল এলাকায় অবস্থান নিয়ে আফতাব বিরোধী মিছিল সমাবেশ করে তারা আফতাব মুক্ত টার্মিনালের দাবী তোলেন। তারপর মেয়র পন্থি কর্তৃক বাসস্টান্ড দখল এবং আফতাব শূন্য নথুল্লাবাদ বাস স্টান্ড।