রহস্যজনকভাবে জামিনে খুনী রেজাউল – নাদিয়া হত্যা মামলার বাদিকে হত্যার হুমকি

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বহুল আলোচিত চতুর্থ স্ত্রী অন্তঃস্বত্তা নাদিয়াকে হত্যা করে লাশগুমের সময় ঢাকায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলো বরিশালের গৌরনদীর চাঞ্চল্যকর পিতৃ হত্যাকারী সন্ত্রাসী সিকদার সফিকুর রহমান রেজাউল। দীর্ঘ আট মাস কারাভোগের পর আইনের ফাঁক ফোকর কাটিয়ে জামিনে বেরিয়ে আসে খুনী রেজাউল। জামিনে বেরিয়েই আলোচিত নাদিয়া হত্যা মামলার বাদিকে মামলা প্রত্যাহার করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি প্রদান অব্যাহত রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খুনী রেজাউল ও তার ক্যাডার বাহিনীর অব্যাহত হুমকির মুখে মামলার বাদি এবং হত্যভাগ্য নাদিয়ার ভাই শরীফ আহম্মেদ শাহ্রিয়া সিরাজী সুজন এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বোনের হত্যাকারীর ফাঁসির দাবিতে তিনি (সুজন) রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সংবাদকর্মীদের সহযোগীতা কামনা করেছেন।

বরিশালের কাউনিয়া এলাকার আইনজীবি মরহুম এ্যাডভোকেট রিয়াজ উদ্দিনের পুত্র শরীফ আহম্মেদ শাহ্রিয়া সিরাজী সুজনের দেয়া অভিযোগে জানা গেছে, ঢাকায় বসবাসের সুবাধে তার বোন বনানী ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভাসিটি কলেজের আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী কামরুন নাহার নাদিয়ার সাথে পরিচয় হয় একই জেলার গৌরনদী পৌর এলাকার টরকী বন্দরের বাসিন্দা সিকদার সফিকুর রহমান রেজাউলের। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। রেজাউল তার পূর্বের তিনটি বিয়ের কথা গোপন রেখে ২০১০ সনের নবেম্বর মাসে নাদিয়াকে বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকে তারা রায়েরবাজারের ৯১ হাতেমবাগের একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে আসছিলো। এরইমধ্যে নাদিয়া দু’মাসের অন্তঃস্বত্তা হয়ে পরে। বিয়ের পর থেকেই তার (নাদিয়ার) পিতার অঢেল সম্পত্তির ওপর রেজাউলের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। হত্যার একমাস পূর্বে রেজাউল তার সহযোগীদের নিয়ে নাদিয়ার পিতার কাউনিয়া এলাকার একটি বিশাল পুকুর দখল করে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করে। এনিয়ে নাদিয়ার সাথে রেজাউলের দাম্পত্য কলহ দেখা দেয়। এ ঘটনার জের ধরে গত ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা হয়। একপর্যায়ে রেজাউল নাদিয়াকে শ্বাসরোদ্ধ করে হত্যা করে। পরবর্তীতে নিহত নাদিয়ার লাশ গুমের জন্য রেজাউল ওইদিন রাতে নিজস্ব প্রাইভেটকারযোগে গৌরনদীর উদ্দেশে রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ঢাকার শাহবাগ থানা পুলিশ (২৪ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে লাশবাহী প্রাইভেটকারসহ খুনী সিকদার রেজাউলকে গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় সুজন বাদি হয়ে হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। গত ১৬ অক্টোবর গোয়েন্দা বিভাগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ফজলুর রহমান দীর্ঘ ৬ মাস তদন্ত শেষে আলোচিত এ মামলায় ঘাতক রেজাউল তার মা নুরজাহান বেগম ও ভাই সিকদার সাইফুর রহমান সোহেলকে অভিযুক্ত করে সিএমএম আদালতে মামলার চাজর্শীট দাখিল করেন। তদন্ত চলাকালীন নিহত নাদিয়ার লাশ বহনকারী প্রাইভেটকার চালক রবিউল ইসলামসহ তিনজন স্বাক্ষী ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন। গত ১৪ নবেম্বর ও ২০ ডিসেম্বর ওই মামলায় আসামি পক্ষের লোকজন জামিন আবেদন করলে প্রথম অতিরিক্ত সিএমএম আদালত-২’র বিচারক শহিদুল ইসলাম জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে পলাতক আসামি সোহেল ও নুরজাহানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন। এছাড়াও বিচারক আগামি বছরের ১৯ জানুয়ারি সিএমএম আদালত থেকে আলোচিত মামলাটি ট্রায়ালের জন্য মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠনোর নির্দেশ প্রদান করেন।

অভিযোগে আরো জানা গেছে, এরইমধ্যে গত ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক এস.এম আমিনুল ইসলাম আলোচিত মামলাটির শুনানী চলাকালীন সময়ে গ্রেফতারকৃত আসামি খুনী রেজাউল সিকদারের জামিন মঞ্জুরের আদেশ প্রদান না করে রহস্যজনক ভাবে আদালতের কার্যক্রম শেষে সন্ধ্যার পর খুনীর রেজাউলের জামিন মঞ্জুর করেন। বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হলেও ওইদিন রাতেই খুনী রেজাউল কারাগার থেকে বেড়িয়ে আসে। এরপর থেকেই আলোচিত নাদিয়া হত্যা মামলাটি উত্তোলনের জন্য বাদি সুজনকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছে। হুমকির ঘটনায় সুজন থানায় সাধারন ডায়েরীও করেছেন।

কান্নাজড়িত কন্ঠে সুজন বলেন, আমি একজন আইনজীবির এতিম সন্তান এবং উল্লেখিত নাদিয়া হত্যা মামলার বাদি হিসেবে দেশের সর্ব্বোচ্চ আইন সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ, উক্ত মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে একজন নারী হত্যাকারী খুনী রেজাউলের ফাঁসির দাবি করছি। অন্যথায় দেশের আইন ও বিচার বিভাগের প্রতি কেবল আমি নয়, আমার মতো আরো অসংখ্য ভুক্তভোগীরা আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে।

উল্লেখ্য, গৌরনদী উপজেলার টরকী বন্দরের ফিরোজ মিয়ার কাপড়ের দোকানের মধ্যে বসে প্রকাশ্যে দিবালোকে ২০০৩ সনের ১ এপ্রিল সন্ত্রাসী রেজাউল সিকদার তার পিতা বার্থী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ওরফে হাবুল শিকদারকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছিলো। ওই ঘটনায় নিহত হাবুল সিকদারের দ্বিতীয় স্ত্রী লিনা রহমান বাদি হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছিলেন। সন্ত্রাসী রেজাউল সিকদারের বড়ভাই সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ায় রহস্যজনক কারনে আলোচিত হাবুল সিকদারের হত্যা মামলাটি নিস্পত্তি হয়ে যায়। পিতৃহত্যার মামলা থেকে রেহাই পেয়ে রেজাউল বেপরোয়া হয়ে ওঠে।