গৌরনদীতে টেন্ডার দাখিলকে কেন্দ্র করে যুবলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে ২০ জন আহত – ছয়টি মটরসাইকেল ভাংচুর – বিক্ষোভ মিছিল – ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের উন্নয়ন প্রকল্পের টেন্ডার দাখিলকে কেন্দ্র করে বুধবার দুপুরে ও বিকেলে উপজেলা যুবলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে উভয়গ্রুপের কমপক্ষে ২০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। এসময় ছয়টি মটরসাইকেল, উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষ ও তিনটি দপ্তরের কক্ষের দরজা জানালা ও যুবলীগ অফিসে ভাংচুর করে ব্যাপক লুটপাট করা হয়। বিকেল ছয়টায় দিকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে মহাসড়কের মাহিলাড়া বাজারে বিক্ষোভ মিছিল বের করে গৌরনদীতে টেন্ডার দাখিলকে কেন্দ্র করে যুবলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে ২০ জন আহত - ছয়টি মটরসাইকেল ভাংচুর - বিক্ষোভ মিছিল - ব্যাপক পুলিশ মোতায়েনমহাসড়কে গাছের গুড়ি দিয়ে ব্যারিকেটের সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত থানা পুলিশের বাঁধার মুখে বিক্ষোভকারীরা পিছু হটে। যুবলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনায় পুরো উপজেলা জুড়ে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এনিয়ে যে কোন সময় বড়ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছেন এলাকাবাসী। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে উপজেলার গুরুতপূর্ণ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

স্থানীয় এলজিইডি অফিস, আহত ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল এলজিইডি বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের (এডিপি) ২০১১-২০১২ অর্থ বছরে গৌরনদী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের সড়ক নির্মানের জন্য নয়টি প্রকল্প গ্রহন করা হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৬৫ লাখ ৫’শ ৪৩ টাকার টেন্ডার আহবান করা হয়। ২৮ ফেব্রুয়ারি দরপত্র বিক্রির শেষদিন নির্ধারন করা হয়। আজ ২৯ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) ছিল দরপত্র দাখিলের শেষদিন। ৯টি প্রকল্পের বিপরীতে দরপত্র বিক্রির শেষদিন পর্যন্ত ৩১টি সিডিউল বিক্রি হয়।

ঠিকাদার ও ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু জানান, গৌরনদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ শাহ আলম খান ও গৌরনদী পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মোঃ হারিছুর রহমান হারিছ তাদের সমর্থকদের মাঝে কাজ বন্টন করে দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা পরিষদের জনৈক সদস্য জানান, বুধবার দুপর ১২ টায় উপজেলা পরিষদের সভা কক্ষে উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা শুরু হয়। সভায় উপস্থিত একাধিক সদস্যরা জানান, সভার শুরুতেই গৌরনদী উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য ও মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু কাজ বন্টন নিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ শাহ আলম খানের কাছে জানতে চান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাকবিতান্ডার একপর্যায়ে পিকলু উপজেলা চেয়ারম্যানকে গালিগালাজ করেন। উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য মোঃ জাকারিয়া বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যানকে লাঞ্চিত করায় আমি সভাকক্ষের বারান্দায় বসে এ ঘটনার প্রতিবাদ করি। এতে পিকলু ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ওপর হামলা চালিয়ে আহত করে। এ খবর মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পরলে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ আলম খান ও পৌর মেয়র হারিছুর রহমানের সমর্থক শতাধিক যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা উপজেলা পরিষদে হামলা চালায়। এ সময় বিক্ষুব্ধরা সভাকক্ষের চেয়ার, টেবিল, আসবাবপত্রসহ তিনটি দপ্তরে হামলা চালিয়ে দরজা জানালার গ্লাস ভাংচুর করে। পরিষদ চত্বরে পিকলুর সহদর সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক সলিল গুহ পিন্টু,  উপজেলা ছাত্রলীগের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক অভিজিত ভট্টাচার্য্য অভি ও ছাত্রলীগ কর্মী সঞ্জয় দাসকে মারধর করে গুরুতর আহত করা হয়। এরজের ধরে উভয়গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় পিকলু ও তার সমর্থক যুবলীগ কর্মী মুন্না, শাওন, মাহাবুব, লালু সরদার ও সবুজ শরীফের মটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়। পরবর্তীতে দুপুর ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় গৌরনদী বাসষ্টান্ডস্থ যুবলীগ কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে সাইনবোর্ড ভাংচুরসহ লুটপাট করা হয়। দফায় দফায় সংঘর্ষে ও পুলিশের লাঠিচার্জে উভয়গ্রুপের যুবলীগ কর্মী বাবু দেবনাথ, মেহেদী, মুন্না, বাবু তালুকদার, রুবেল, মনির, শাহজাহানসহ কমপক্ষে ১৭ জন আহত হয়।

গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আবুল কালাম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে পাশ্ববর্তী আগৈলঝাড়া ও উজিরপুর থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এনে উপজেলার গুরুতপূর্ণ এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে।

গৌরনদী উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য ও মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু অভিযোগ করে বলেন, আমরা সাধারন ঠিকাদাররা দরপত্রে অংশ নেয়ার জন্য সিডিউল ক্রয় করি। উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ আলম খান ও পৌর মেয়র হারিছুর রহমান স্থানীয় বিএনপির কতিপয় চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও তাদের সমর্থকদের মধ্যে কাজ বন্টন করে দেয়। এনিয়ে সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় কথার কাটাকাটি হয়েছে। এরজের ধরে প্রতিপক্ষের লোকজনে অপপ্রচার চালিয়ে আমার ভাইসহ আমার সমর্থকদের ওপর হামলা চালিয়ে ছয়টি মটরসাইকেল ও যুবলীগ কার্যালয় ভাংচুর করে লুটপাট করে।

গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সমন্বয় কমিটির সভায় উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ আলম খান ও ইউপি চেয়ারম্যান পিকলুর মধ্যে বাকবিতান্ডা জেরধরে কে বা কারা উপজেলা পরিষদে হামলা চালিয়েছে। গৌরনদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ শাহ আলম খান ও গৌরনদী পৌরসভার মেয়র ও যুবলীগের আহবায়ক মোঃ হারিছুর রহমান হারিছ বলেন, আমাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। পরবর্তীতে যা অবসান হয়েছে।

এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে মাহিলাড়া ইউনিয়নের চেয়াম্যান সৈকত গুহ পিকলুর নেতৃত্বে তার ২৫/৩০ জন সমর্থকেরা বুধবার সন্ধ্যা সাতটায় গৌরনদী উপজেলার আশোকাঠী ফিলিংশ ষ্টেশন নগদ ২৫ হাজার টাকা, বকেয়ার হিসাবের খাতা ও প্রায় দশ হাজার টাকা মূলের তৈল লুট করে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফিলিং ষ্টেশনের স্বত্তাধীকারি আলহাজ্ব মোঃ আলাউদ্দিন ভূঁইয়া অভিযোগ করেন, ফিলিংশ ষ্টেশনের ম্যানেজার মোঃ নুরুল হক ও সহকারী খোকন দাসকে মারধর করে ষ্টেশন থেকে বের করে দেয়। পরবর্তীতে হামলাকারীরা উল্লেখিত মালামাল লুটপাট করে ফিলিংশ ষ্টেশনে তালা ঝুঁলিয়ে দেয়। থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।