কৃমি – বাংলাদেশের জলবায়ুর পরিপ্রেক্ষিতে খুবই সাধারণ একটি সমস্যার নাম

কৃমি (worm) বাংলাদেশের জলবায়ুর পরিপ্রেক্ষিতে খুবই সাধারণ একটি সমস্যার নাম। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চল এবং শহরের বঞ্চিত-দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শিশুদের মাঝে এর প্রকোপ বিস্তর। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন, আপনি এবং আপনার পরিবার এর ঝুঁকি থেকে মুক্ত। কিন্তু আরেকবার ভেবে দেখুন!

– আপনার বাড়িতে যে কাজের লোক রান্না করছে, ঘর গোছাচ্ছে, সে কই থাকে? সেটাও যদি না হয়,
– আপনি কি দিনের মধ্যে একবারও বাইরে যাচ্ছেন না?
– আপনি কি আরেকজনের সংস্পর্শে আসছেন না?
– আপনি কি হাত দিয়ে টাকা ধরছেন না?
যদি আপনার একটি উত্তরও হাঁ হয়ে থাকে, আপনি তবে কৃমির আক্রমণের শিকার হবার ঝুঁকিতে আছেন, যা শরীরের জন্য খারাপ, শিশুদের জন্য ভয়ংকর, অস্বস্তিকর এবং লজ্জাজনক।

কারণঃ

– সবচে’ সাধারণ কারণটি হচ্ছে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব। আপনি হয়তো জানেন, কিন্তু আপনি যদি কাজের লোককে না শেখান, সে জানবে না।
– আপনি যদি নিয়মিত গোসল না করেন।
– নখ বড় করে পরিস্কার না রাখলে।
– পায়খানা-প্রস্রাবের পরে দুই হাত সাবান দিয়ে ধৌত না করলে।
– অপরিস্কার অন্তর্বাস, চাদর, কাপড়, তোয়ালে না ধুয়ে বহুবার ব্যবহার করলে।
– একই তোয়ালে, চাদর অনেকে ব্যবহার করলে।
– খাবার আগে সাবান দিয়ে হাত না ধুলে।
– শাক সবজি ভাল করে ধুয়ে রান্না না করলে।
– মাংস ভাল করে সিদ্ধ না করে খেলে।
– কমোড নিয়মিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিস্কার না করলে।
– নিয়মিত বাসন ধোয়ার স্পঞ্জ পরিবর্তন না করলে।
– দীর্ঘদিন ধরে একই টুথব্রাশ ব্যবহার করলে।
– বাইরের খোলা খাবারের কথা বাদই দিলাম ইত্যাদি।

লক্ষণঃ

– কৃমির আক্রমণে অনেকসময় বাহ্যিক কোনো লক্ষণ দেখা না-ও যেতে পারে। তারপরেও যেসব দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে –
– পেট ফুলে যাওয়া কিন্তু ওজন হ্রাস হওয়া।
– গূহ্যদ্বার এবং যৌনাঙ্গের আশেপাশে প্রচুর চুলকানো, বিশেষত রাতের বেলায়, যখন স্ত্রীকৃমি ডিম পাড়ে।
– ক্ষুধা কমে যাওয়া।
– নিদ্রাহীনতায় ভোগা। বার বার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া।
– বাজে রকম অস্বস্তিবোধ করা।
– পেট ব্যথা ইত্যাদি।

চিকিৎসাঃ

উপরে উল্লেখিত কারণগুলো দেখুন। তাহলেই আপনার চিকিৎসার উত্তর পেয়ে যাবেন। কৃমির আক্রমণের পরে অন্তত ছয় (৬) সপ্তাহ কঠোরভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা মেনে চলবেন। মনে রাখবেন, ঘরের একজনও যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে বাকি সবারও আক্রান্ত হবার সমূহ সম্ভাবনা আছে।
– নখ ছোট রাখুন। যদি হালফ্যাশানের কারণে নখ বড় রাখতে চান, তবে নখের অন্তর্ভাগ পরিস্কারের ব্যাপারে অতিরিক্ত সতর্ক থাকুন।

– পরিবারের সবাই একই তোয়ালে ব্যবহার করবেন না। আলাদা আলাদা তোয়ালে এবং চাদর ব্যবহার করুন। অনেক সময় অনেক বাসায়, এমন কি কম্যুনিটি সেন্টার ইত্যাদি স্থানে দেখা যায়, বেসিনের পাশে তোয়ালে থাকে, যাতে সবাই হাত ও মুখ মোছে। এটা মাত্রারও অতিরিক্ত অস্বাস্থ্যকর। ব্যবহার করবেন না।

– বাইরে গেলে অবশ্যই সাথে একটি বোতলে করে ফুটানো খাবার পানি রাখুন। ফিল্টারের পানিতেও ইদানীং ভেজাল থাকে।

– আমরা বাঙালি। ফুচকা, চটপটি সহ বাইরের নানা খাবার আমাদের কাছে উৎসবের মতন। শত নিষেধ সত্ত্বেও এগুলো খাওয়া বন্ধ করা সম্ভব নয়। সেজন্য মাসে অন্তত একবার রুটিন করে পরিবারের সবাই মিলে কৃমিনাশক ট্যাবলেট খান।

আপনার বাসায় যাদের নিয়মিত যাতায়াত (কাজের লোক, ড্রাইভার ইত্যাদি) তাদের ও তাদের পরিবারের জন্যও ট্যাবলেট কিনে দিন। এই ট্যাবলেটের দাম খুব বেশি নয়।

মনে রাখবেন! এটা আপনার নিজের পরিবারের সুরক্ষার জন্যেই ইনভেস্টমেন্ট। নিকটস্থ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিয়ে কৃমিনাশক ট্যাবলেট মাসে একের অধিকবারও খেতে পারেন। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেবেন।

****মনে রাখবেন! আপনি যদি অন্তঃসত্ত্বা মা হয়ে থাকেন/ আপনার শিশুটি যদি এখনো বুকের দুধপান করে, অথবা আপনার শিশুটি যদি অনুর্ধ্ব তিনমাস বয়স্ক হয়ে থাকে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কৃমিনাশক ট্যাবলেট খাওয়া নিষেধ!

পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। নিজে সচেতন থাকুন, আরেকজনকে সচেতন করুন।

আপনাদের সুস্বাস্থ্য কামনায়,

স্বাস্থ্যকথন টীম