“পাখা পল্লীর শিল্পীরা এখন মহাব্যস্ত”

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ “ওরে ও তালের পাখা শীত কালেতে দ্যাওনা দেখা….গ্রীষ্ণকালে প্রানের সখা/ তোমার হাত পাখার বাতাসে….প্রাণ জুড়িয়ে আসে” গ্রীষ্ণের মাসেই মনে পড়ে এসব গানের কথা। গত এক মাস ধরে কর্মব্যস্ততা শুরু হয়ে গেছে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার চাঁদশী এলাকার পাখা পল্লীতে। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় এখানকার তালপাখা সরবরাহ করা হয়। তাই বর্তমানে পাখা পল্লীর শিল্পীদের মহাব্যস্ত সময় পাড় করতে হচ্ছে।

গৌরনদী উপজেলার উত্তর চাঁদশী গ্রামের পাখা পল্লীর তালপাখা বিক্রি হয় বিভিন্ন মেলা, হাট-বাজার, বাসষ্ঠ্যান্ডসহ বিভিন্ন দোকানে-দোকানে। গ্রীষ্ণমাসে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের ফলে প্রচন্ড তাপদাহ থেকে একটু স্বত্বি পেতে সকলের হাতেই দেখা যায় তালের হাত পাখা। আর এসব পাখা তৈরি করে জিবীকা নির্বাহ করছেন চাঁদশী গ্রামের শতাধিক পরিবার। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে ওইসব পরিবারের সদস্যরা তালপাতা দিয়ে হাত পাখা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এরইমধ্যে উপকরনের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় অর্থাভাবে এখানকার অনেকেই পেশা পরিবর্তন করেছেন। যারা এখনো এ ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের পৃষ্ঠপোষকতা চেয়েছেন। সুদমুক্ত ঋণ দিয়ে হস্ত শিল্পটিতে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সর্বস্তরে এখন জোড় দাবি উঠেছে। গ্রামটির নাম চাঁদশী হলেও পাখা তৈরির এলাকাটি ‘পাখা পল্লী’ নামেই সবার কাছে পরিচিত। ওই পল্লীর হাসেম খলিফা (৬২) জানান, গত ২২ বছর ধরে তিনি পাখা বানানোর কাজ করছেন। তার পরিবারের সদস্যদের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফলে তিনি এখনো এ পেশায় টিকে আছেন। বর্তমানে পাখা তৈরির প্রধান উপকরন তাল পাতার তীব্র সংকট চলছে। গৌরনদীসহ পাশ্ববর্তী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে অধিক মূল্যে তাদের তালপাতা ও বাঁশ ক্রয় করতে হচ্ছে। বছরের নয় মাসই তারা এ কাজ করে থাকেন। হাসেমের পরিবারের সাত সদস্য এ কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন। তার কন্যা সিমু আক্তার ও কাজল স্কুল থেকে ফিরেই বাবার সাথে একত্রিত ভাবে পাখা বানানোর কাজ করছে। রোগাক্রান্ত হাসেমের সাত সদস্যর সংসার চলছে হাত পাখা বানিয়েই। তার পরিবারের সকলে মিলে একদিন দুই’শ পিচ করে পাখা তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি পাখা তৈরি করতে তাদের খরচ হয় দু’টাকা আর পাইকারি হিসেবে বিক্রি করছেন চার টাকায়। ওই পল্লীর আরেক হস্ত শিল্পী, কাসেম খলিফা বলেন, সপ্তাহে একদিন পাইকার এসে বাড়ি থেকে হাত পাখা ক্রয় করে নিয়ে যায়। পাখা তৈরি করাই হচ্ছে আমাদের গ্রামের প্রধান আয়ের উৎস। আমাদের হাত পাখা পল্লীর তৈরিকৃত পাখা বিক্রি হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন মেলা, হাট-বাজার, বাসষ্ঠ্যান্ডসহ বিভিন্ন দোকানে-দোকানে। তিনি আরো বলেন, উপকরনের মূল্য বৃদ্ধির পর অর্থাভাবে এ পেশার সাথে জড়ির আরো প্রায় পঞ্চাশটি পরিবার পেশা পরিবর্তন করেছেন। বাকি পরিবারগুলোকে টিকিয়ে রাখতে হলে সহজ শর্তে সূদ মুক্ত ঋণ দেয়ার জন্য তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আশু হস্তেক্ষেপ কামনা করেছেন। একইভাবে জানান, ওই পল্লীর হস্তশিল্পী আবুল হোসেন, শাহজাহান খলিফা, স্বপন খলিফাসহ একাধিক হস্ত শিল্পীরা।