মন্ত্রীর নামে রাঙ্গাবালিতে সামস বাহিনীর লুটপাট চলছে

আহমেদ জালাল, বরিশাল ॥ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে প্রতিমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহÑসভাপতি আবু সামস উদ্দিনের দেদারছে চাঁদাবাজী বিরাজমান। এই আ’লীগ নেতার চাঁদাবাজীতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে বিশেষ করে ঘের ব্যবসায়ীরা। খোদ দলের মধ্যেই চাঁদাবাজ হিসাবে পরিচিত আ’লীগ নেতাকে বহিস্কারের দাবী উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ১২টির অধিক ঘের লুট শেষে বাধ কেটে দিয়েছে চাঁদাবাজরা। সর্বশেষ গলাচিপা পৌরমেয়রের কয়েকটি মাছের ঘের লুটের ঘটনায় রাজনৈতিক ও প্রশাসনে তোলপাড় চলছে। নানা মহলে সামস উদ্দিন বাহিনীর কালো অধ্যায় নিয়ে আলোচনায় আলোচিত হচ্ছে।

জানা গেছে, আ’লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার আসীনের পর আবু সামস উদ্দিন রাঙ্গাবালির চরমোন্তাজসহ বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলে। সামস উদ্দিনের সেকেন্ড ইন কমান্ড হচ্ছেন ১ নং ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন এবং ২ নং ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি জিয়া খলিফা। অস্ত্র¿ধারী বাহিনী এলাকায় অন্যায় অপকর্মে ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সামস বাহিনীর অত্যাচারে সেখানকার নারী-পুরুষের জীবন কাটে নিরাপত্তাহীনতায়। দিনে দুপুরে অস্ত্র প্রর্দশন করে স্থানীয়দের আতংকিত করে স্ববর্স্ব লুটে নিচ্ছে। এ বাহিনী মাস খানেক আগে চরমোন্তাজের মাছের ঘের ব্যবসায়ীদের কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে। চাঁদার দাবীতে বিভিন্ন সময়ে নির্যাতন করে ঘেরে দ্বায়িত্বরত স্টাফদের। জীবনের নিরাপত্তায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে থেকে ২ লাখ টাকা চাঁদাও দেয়া হয়। কিন্তু শুরু থেকেই সামস উদ্দিন বাহিনীর চাঁদাবাজীর ঘটনার প্রতিবাদী ভূমিকায় অবস্থায় নেয় গলাচিপা উপজেলা আ’লীগের সহ সভাপতি ও পৌরমেয়র আব্দুল ওহাব তালকদার। রাঙ্গাবালীর চরবেষ্টি,চর লক্ষী,চর মার্গেট সহ ৬ টি মাছের ঘের রয়েছে গলাচিপা পৌরমেয়রের। এদের মধ্যে সোমবার ৪টি ঘের লুট করে বাধ কেটে দিয়েছে সামস উদ্দিন বহিনী। বুধবার ওহাব তালুকদারের আরেকটি মাছের ঘের লুট করে বাধ কেটে দিয়েছে ওই চাঁদাবাজ বাহিনী। সন্ত্রাসীদের হামলায় আহত হন ম্যানেজার আবুল কালাম(৪৫), খোকন(২৮), জহির(২২)সহ ৫/৬ জন। গুরুতর আহত অবস্থায় আবুল কালামকে পটুয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আরো দুটি মাছের ঘের লুটপাট ও মারধর করেছে সামস বাহিনী। এ প্রসঙ্গে রাঙ্গাবালি থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করেছে পুলিশ।

গলাচিপা পৌরমেয়র আব্দুল ওহাব তালুকদার বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে প্রতিমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজি করে আসছে চরমোন্তাজ আ’লীগের সভাপতি আবু সামস উদ্দিন। সামস উদ্দিন বাহিনীর চাঁদাবাজী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের জনগন। এদের অত্যাচার থেকে পরিত্রান চায় ব্যবসায়ীরা। পৌরমেয়র আরো বলেন, আমার পাঁচটি মাছের ঘের লুট করেছে সামস উদ্দিন বাহিনী। এতে ক্ষতির পরিমান ৩ কোটি টাকার অধিক। লুটের ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে জানান পৌরমেয়র আব্দুল ওহাব তালুকদার।

ওদিকে স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, আ’লীগ নেতা আবু সামস উদ্দিন সাংগঠনিক রাজনৈতিক’র বিপরীতে অসাংগঠনিক কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছে। স্ব দলের মধ্যে তার বিরুদ্ধে নিরবে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নেতা-কর্মীরা। বিপুল পরিমান বিত্ত বৈভবের মালিক বনে যেতে একের পর এক অন্যায় অপকর্ম করে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে পারছে না। কারন প্রতিবাদ করলেই নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে প্রতিবাদীর ওপর। প্রতিবাদীদের বিভিন্ন ধরনের কুট কৌশলে ফাঁসিয়ে দিতে বেশ পারঙ্গম আ’লীগ নেতা সামস। মানুষকে জিম্মী বা ব্লাক মেইলের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ফায়দা লুটে চলছেন সামস ও তার সহযোগীরা। সূত্র জানায়, প্রতিমন্ত্রীর আর্শিবাদ থাকায় এসব অপকর্ম করে তিনি পাড় পেয়ে যাচ্ছেন। ফলে আরো বেপরোয়ার পথে সামস বাহিনী। সামস উদ্দিন প্রায়ই একটি কথা প্রচার করছেন যে,এটা মন্ত্রীর নির্দেশ। অর্থাৎ  সামস উদ্দি যত অপকর্মই করুক না কেন সব দায়ভার বর্তায় প্রতিমন্ত্রীর। আর প্রতিমন্ত্রীও সামস উদ্দিন বাহিনীর ক্ষেত্রে নিরব। এ কারনে ক্ষুদ্ধ আ’লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। একই সঙ্গে নানা শ্রেনী পেশার মানুষও নিরব ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তারা সামস বাহিনীর প্রধানসহ সহযোগীদের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি কামনা করেছেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

এদিকে, আ’লীগ নেতা সামস বাহিনীর মাছ লুটের ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রভাহিত করার অপচেষ্টাও চলছে। বিএনপি পন্থী চেয়ারম্যানের লোকজন মাছের ঘেরে লুটপাট চালিয়েছে এমন কথাই বলা হচ্ছে। সামস বাহিনীই এরকম কথা বাজারে চাউর ঘটাচ্ছে যাতে বিএনপি পন্থী চেয়ারম্যানের ঘারে যায় অপকর্মের দায়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, চেয়ারম্যান নয় সামস বাহিনীই চাঁদাবাজী ও লূটপাটের সঙ্গে সম্পূক্ত। বরিশাল বিভাগের  দ্বায়িত্বরত আ’লীগের নেতাদের কাছে তুলে ধরেছে সামস বাহিনীর লুটপাটের চিত্র। পটুয়াখালী জেলা আ’লীগে মাছ লুটের বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসার খবর মিলেছে। এহেন ঘটনাটি আ’লীগের শীর্ষ নেতাদেরও অবহিত করা হয়েছে। দলীয় একটি সূত্র বলছে,সামস উদ্দিনকে রক্ষা করতে এক মহল জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অপর সূত্রটি বলছে, আ’লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

সূত্রের ভাষ্য, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহি:স্কারও হতে পারেন সামস উদ্দিন। চরমোন্তাজ ইউপি’র চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের ব্যক্তিগত সেল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে পাওয়া যায়নি। পটুয়াখালী জেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক খান মোশাররফ হোসেন জানান,পৌরমেয়রের ঘেরের মাছ লুটের ঘটনাটি জেনেছি। এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সংগঠনের মধ্যে মাছ লুটের ঘটনায় কেউ জড়িত থাকলে তাকে সাংগঠনিক পন্থায় শাস্তি পেতে হবে বলে জানান তিনি। রাঙ্গাবালি থানার ওসি মাহে আলম জানান, চরমোন্তাজের মাছের ঘের’র বাধ কেটে দেয়ার খবর পেয়েছি। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। । পটুয়াখালী পুলিশ সুপার এম এ আজাদ জানান, মাছের ঘেরে লুটের মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

চরমোন্তাজ ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি আবু সামস উদ্দিন বলেন, সম্প্রতি প্রতিমন্ত্রী মাহাবুবুর রহমান চরবেষ্টিতে এক সভায় লবন পানির ঘের বন্ধের নির্দেশ দেন। এরফলে স্থানীয় বিক্ষুদ্ধ জনতা কয়েকটি মাছের ঘের’র বাধ কেটে দিয়েছে, কিন্তু লুটের কোন ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, স্থানীয় লোকজনকে ইন্ধন কিংবা চাঁদাবাজীর সঙ্গে আমি জড়িত নই। রাঙ্গাবালি উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আহসান কবির চাঁন বলছেন,চরমোন্তাজে আ’লীগ নেতা কর্তৃক মাছ লুটের ঘটনাটি তার জানা নেই। মাছের ঘেরে লুট প্রসঙ্গে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহাবুবুর রহমান এ প্রতিবেদককে প্রশ্ন রেখে বলেন, এটা কোন নিউজ হলো নাকি? এরকম মন্তব্য করার পর ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন প্রতিমন্ত্রী মাহাবুবুর রহমান।