শোকাবহ ১৫ আগস্ট – ছয় বছরের শিশু সুকান্ত বাবু হত্যার বিচার ৩৭ বছরেও হয়নি

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট ভয়াল কালো রাতে ঢাকার মিন্টু রোডের তৎকালীন পানি সম্পদ মন্ত্রীর বাসায় বসে ঘাতকদের নির্মম বুলেটে নিহত ছয় বছরের শিশু পুত্র সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাত হত্যার বিচার হয়নি দীর্ঘ ৩৭ বছরেও। হয়নি সাবেক পানি সম্পদ মন্ত্রী ও কৃষক কুলের নয়ন মনি শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত হত্যার বিচারও। আর কতোদিন এ বিচারের বানী নিরবে নিভৃতে কাঁদবে, তা জানতে চায় বরিশালবাসী। মুক্তিযুদ্ধচলাকালীন এতদাঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু সাবেক মন্ত্রী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও তার নাতী ছয় বছরের শিশু সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাতের হত্যা মামলাটি পূণরুজ্জীবিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে জোর দাবি করেছেন।

সূত্রমতে, ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ যারা ইতিহাসের নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন তাদের মধ্যে বরিশালের ছয়জনের মধ্যে একজন হচ্ছে-সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাত। বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি ও সাবেক মন্ত্রী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের পুত্র বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইফ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর বড় পুত্র সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাত।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ননায় জানা গেছে, ১৫ আগস্টের সেই ভয়াল কালো রাতে মিন্টু রোডের কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাসা থেকে ঘাতকেরা যখন অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পরিবারের সবাইকে বাড়ির দোতালা থেকে নিচতলায় নিয়ে আসে, তখন বাবুকেও হেঁটে আসতে হয় নিচে। এরপর পরিবারের সবাইকে সারিবদ্ধ করে দাঁড় করানো হয় নিচতলার ড্রয়িং রুমে। এমন সময় সুকান্ত বাবু তার মা কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী শাহানারা আব্দুল্লাহর কোলে ওঠার আবদার করে কান্নাজুড়ে দেয়। কিন্তু ঘাতকের বন্দুকের সামনে আর তাকে কোলে নিতে পারেননি তার হতভাগ্য মা শাহানারা আব্দুল্লাহ। হঠাৎ করে ঘাতকেরা গুলি ছুঁড়তে থাকলে পরিবারের অনেকেই মাটিতে শুয়ে পড়েন। ঘাতকেরা চলে যাওয়ার পর শহীদ সেরনিয়াবাতের মৃতদেহের নিচেই চাঁপা পড়া অবস্থায় সুকান্ত বাবুর লাশ খুঁজে পাওয়া যায়। অবুঝ বাবুর পিতা-মাতা ঘাতকদের বুলেটের মুখ থেকে ফিরে আসলেও তাদের আদরের সন্তান বাবু আর ফিরে আসতে পারেনি। সেই ভয়াল কালো রাতে তৎকালীন পানিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের মিন্টু রোডের বাড়িতে বরিশালের ছয়জন নারী-পুরুষ নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন। তারা হলেন-সাবেক মন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি কৃষককুলের নয়নমনি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ভাইয়ের ছেলে সাংবাদিক শহীদ সেরনিয়াবাত, মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতী সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাত, বরিশালের ক্রিডেন্স শিল্পগোষ্ঠির সদস্য আব্দুর নঈম খান রিন্টু। আহত হয়েছিলেন নয়জন। তারা হলেন-বেগম আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, শাহানারা আব্দুল্লাহ, বিউটি সেরনিয়াবাত, হেনা সেরনিয়াবাত, আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ, রফিকুল ইসলাম, খ.ম জিল্লুর রহমান, ললিত দাস ও সৈয়দ মাহমুদ।