ঈদ ২০১২ – ঈদ গা ময়দান ছাড়িয়ে গৌরনদী-আগৈলঝাড়া

ক্যাচফ্লাই ॥ গৌরনদী বিএনপির সভাপতি ও জাতীয় নির্বাচনে বরিশাল-১ গৌরনদী-আগৈলঝাড়া থেকে পরাজিত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান এসি ছাড়া নাকি ঘুমুতে পারেন না, তাই ঈদের আগের দিন গৌরনদীতে না থেকে বরিশালে এসিওয়ালা বাসায় ঘুমিয়েছেন। আর তারা চ্যালা চামুন্ডারা গৌরনদী বসে রিউমার ছড়াচ্ছে আকন কুদ্দুস পরিবার সহ নাকি সুইজারল্যান্ড পালিয়ে গেছেন। একেই বলে রাজনীতি না একে ভাল রাজনীতি নয় নষ্ট রাজনীতি বলে। খবরে প্রকাশ আকন কুদ্দুস বহাল তবিয়তেই আছেন এবং ঢাকা গৌরনদীতে তার অনুসারী নেতা কর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলছেন। সবাই জানে বর্তমানে কুদ্দুস-সোবহান পরিস্থিতি ভাল নয়। সোবহানের আছে টাকা আর কুদ্দুসের আছে মেধা। মাঝখানে মাঝে মাঝে সাবেক এম.পি স্বপন নিয়ে বিএনপির বিভক্ত এই দুই দলের মাঝে লাগে বিশাল ক্যাচাল। তারা ক্যাচাল করে আর আওয়ামীলীগ বসে বসে নখে নখ টিপে।

এদিকে গৌরনদী কেন্দ্রীয় ঈদ গা ময়দানে আওয়ামীলীগের নেতাদের বক্তব্যের কারনে বিএনপির কোনো নেতা বক্তব্যই দিতে পারেননি। জামাতের কয়েকজন নেতারা পাশে বসে ছিলেন কিন্তু ঈদের দিনেও হিংসে ছাড়েনি আওয়ামী নেতাদের। আওয়ামী নেতারা যতক্ষন বক্তব্য দিয়েছেন সেখানে ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবহান মাত্র ৪০সেকেন্ড বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি দোয়া চেয়েছেন আর সবাই তাকে দোয়া করেছেন! তিনি বলেন- আপনারা আমাকে দোয়া করবেন। এই যদি হয় কোনো নেতার পরিচয়! তিনিতো ভোট চাইতে আসেননি। এমপি ইউনুসের মত বাপের বেটার মত বক্তব্য দিবেন তা না করে আমতা আমতা করে কিসব বলে বললেন, আমি আমার বক্তব্য শেষ করছি।
এমন বক্তব্য দিয়ে উপস্থিত মুসুল্লিদের মাঝে হাসির খোরাক না হওয়াই ভাল।

ঈদগা ময়দানে একজন আদর্শ নেতার মতই বক্তব্য দিয়েছেন বর্তমান এম.পি ইউনুস। কিন্তু গৌরনদীবাসীকে কষ্ট দিয়ে তিনি আগামী নির্বাচন বরিশাল সদর থেকেই করবেন বলে গোপন সূত্রে জানা গেছে। তিনিই একমাত্র সাইলেন্ট এমপি গৌরনদী-আগৈলঝাড়া জনগনের জন্য কি করছেন তা জনগনই জানেন না। কেননা জনগন ব্যস্ত আছে নিজেদের নিয়ে। এসব মন্ত্রী এমপি কি করলো না করলো আসে যায় না। তবে যিনি ক্ষমতার স্বাদ একবার পেলে তিনি কি আর ভুলতে পারেন! তাই বরিশাল-১ আসন (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) দক্ষিন বাংলার সিংহ পুরুষ নামে পরিচিত আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহকে ছেড়ে দিতে হচ্ছে। আরো একটি সুত্রে জানা গেছে এমপি ইউনুস তার ওকালতি ব্যবসার সম্প্রসারনের জন্য গৌরনদী-আগৈলঝাড়া থেকে নিরিহ/অ-নিরিহ জনসাধারনদের গ্রেপ্তার করিয়ে বরিশাল আদালত থেকে তার মাধ্যমে ছাড়িয়ে আনতে হয়। যা গৌরনদী-আগৈলঝাড়ায় এখন ওপেন সিক্রেট। দলের নেতা কর্মীদের কাছ থেকেই জানা গেছে, তারা কোনো কারনে গ্রেপ্তার হলে এম.পি মহোদয়কে টাকা দিয়ে জেল থেকে ছাড়িয়ে আসছেন। তারা ভেবেছিল দলের স্বার্থে তিনি কোনো অর্থ নিবেন না।

তবে এবারের ঈদের নামাজে উপস্থিত হতে পারেননি দক্ষিন বাংলার সিংহ পুরুষ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ। প্রচন্ড শারীরিক অসুস্থতার কারনে ঈদ জামাতে উপস্থিত নেতাদের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন এবং দোয়া চেয়েছেন।

জহির উদ্দিন স্বপনকে এবারও দেখা যায়নি। শোনা যাচ্ছে তিনি নাকি আবার উজ্জবিত হয়ে ফিরে আসবেন। গৌরনদীর রাজনীতিকে আবার গরম করবেন, আওয়ামীলীগ ও তার বিরুদ্ধ বিএনপি নেতা-কর্মীদের ধাওয়াবেন। তবে পরিস্থিতি বলে দিচ্ছে সে আশায় গুড়ে বালি। বুকে ৩টা রিং নিয়ে এসিওয়ালা বাসায় বসেই রাজনীতি সম্ভব, রৌদ্রস্নাত গরম রাজপথে নয়। গৌরনদী-আগৈলঝাড়ায় এই রমজান ও রমজান শেষে ঈদে এক জরিপে দেখা গেছে স্বপনকে কেউ আর গৌরনদীতে দেখতে চায় না। সাধারন জনগন বোকা হলেও এটুকু বুঝে ধান্দাবাজী/দুই নাম্বারী ও বেঈমান নেতাকে সুযোগ দিয়ে খাল কেটে কেউ কুমির আনতে চায় না। দলের সাথে যে বেঈমানি করতে পারে সে জনগনকে লাথি দিতেও কুন্ঠিত বোধ করবে না।

ঈদের জামাতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আকন কুদ্দুসুর রহমানকেও দেখা যায়নি। শারীরিক অসুস্থতার কারনে তিনিও ঈদগা ময়দানে সাধারন মানুষের কাছে আসতে পারেননি। অসুস্থতার কারনে তিনিও বাসায় কাটিয়ে দিয়েছেন ঈদের দিন। গৌরনদী-আগৈলঝাড়াবাসীর অভিযোগ কেন যেন তিনি সবসময় একটু আড়ালেই থাকেন। নাকি তিনি আড়ালে থাকতে পছন্দ করেন? সাধারন জনগন চায় নেতারা তাদের কাছে থাকুক। এটা তাকে অনুধাবন করতে হবে। মানুষের মাঝে মিশতে হবে। তবে ঈদের পঞ্চম দিনে সাংবাদিকদের সম্মানে তার গ্রামের বাড়ি মেদাকুলে অসুস্থ শরীর নিয়ে দেখা করেছেন ও জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা প্রজম্ম বরিশাল জেলা শাখার উদ্যোগে তাকে গনসংবর্ধনা প্রদান করে।

গৌরনদীর আর এক উদীয়মান নেতা কামরুল ইসলাম সজলের ঈদ শুভেচ্ছা পোষ্টারে ছেয়ে গেছে গোটা গৌরনদী-আগৈলঝাড়া। প্রতি ঈদে কোন না কোনো নেতা এসব পোষ্টার ছেপে ঈদ শুভেচ্ছা দিয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করে এরপর যে কোথায় হাওয়া হয়ে যান খবর থাকেনা। আপনাদের মনে থাকবে হয়তো, এর আগে এরকম পোষ্টারে ছেয়ে ফেলছিলেন মাহমুদ ইউ তুহিন নামের আর এক ভদ্রলোক। তিনি এখন কোথায় আছেন তিনিই জানেন। কামরুল ইসলাম সজলের বর্তমান কার্যকলাপে সাধারন জনগন বুঝছে তিনিও আগামী জাতীয় নির্বাচনে যদি মনোনিত হওয়ার জন্য লড়াই করেন তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

 
গৌরনদী-আগৈলঝাড়া ছাত্রলীগের কমিটিও হচ্ছেনা বলে বিস্তর অভিযোগ ছাত্রলীগ কর্মীদের মাঝে। তারা বলেন, যখনই ভাইর কাছে (আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ) কমিটির কথা বলি তার পরের দিনই তিনি অসুস্থ। এরপর আর এ নিয়ে কথা উঠে না। তবে তারা আকারে ইংগিতে বুঝতে পেরেছে সরকারের এই শেষ সময়ে যদি কমিটি গঠন করা হয় তাহলে কর্মীরা কমিটি নিয়েই ক্যাচাল শুরু করে দিয়ে কেউ মান অভিমানে দল ছেড়ে অন্যদলে ভিড়তে পারে। তাই রাজপথ গরম রাখার জন্য এবং বিরোধী দলের কর্মীদের রাস্তায় কোনো প্রকার সভা সমাবেশ ও মিছিল যেন না করতে পারে সেদিকে ব্যস্ত রাখছে। বতর্মানে আওয়ামীলীগের এই ট্রিকস কাজে লাগাচ্ছে।
সবশেষে আমাদের নেতারা সবসময় প্রশংসা শুনতে চায়। প্রশংসায় ফুলে যেতে চায়, যেনো তারা ফেরশতা, মানুষ নন। আমরা গৌরনদী-আগৈলঝাড়াবাসী মানুষ নেতা চাই, ফেরেশতা নয়। যিনি/যারা গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার জন্য কাজ করবেন। জনগনের জন্য নিবেদিত রাজনীতিবিদ চাই। আছেন কেউ?
 
// লেখাটি বর্তমান গৌরনদী-আগৈলঝাড়ার রাজনীতি নিয়ে খুবই সামান্য লেখা। আগামীতে আরো তথ্যবহুল লেখা আসছে। চোখ রাখুন //