খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল থেকে ॥ বরিশাল নগরীতে গত ৬ মাসের ব্যবধানে জবর দখল করে বেশ কয়েকটি পুকুর ভরাটের পর এখন প্রভাবশালীদের নজর পরেছে শতবর্ষী ছয়টি পুকুরের ওপর। এ যেন পুকুর দখলের পর ভরাট করার মহাউৎসব। সরকারের জলাশয় রক্ষা আইনসহ নানা আইনে পুকুর ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তির বিধান থাকলেও খোদ সরকারি দলের লোকজনই নগরীর বেশ কয়েকটি পুকুর হজম করে ফেলেছে। বর্তমানে দখল প্রক্রিয়ায় রয়েছে মল্লিক রোডের পুলিশ ক্লাবের মধ্যবর্তী একটি, ঝাউতলার প্রথম গলির দু’টি, শ্রীনাথ চ্যাটার্জী লেনের দু’টি ও ঝাউতলার দ্বিতীয় গলির ঐতিহ্যবাহী একটি পুকুর। ঝাউতলার দ্বিতীয় গলির পুকুরটি ভরাট করতে গেলে এখানকার পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো আন্দোলনে নামেন। তারা ইতোমধ্যে “পুকুর বাঁচাও-পরিবেশ বাঁচাও” শ্লোগান নিয়ে একাধিকবার মানববন্ধনও করেছেন।
পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা জানান, ‘ধান-নদী-খাল এই তিনে বরিশাল’ শ্লোগান নিয়ে প্রাচ্যের ভেনিস হিসেবে যে বরিশালের যাত্রা শুরু হয়েছিল, তার সকল ঐতিহ্য হারিয়ে খাল ভরাটের পর এখন পুকুর ভরাটের কাজ চলছে। ইতোমধ্যেই নগরীর শতবর্ষের পুরনো ঐতিহ্যবাহী অসংখ্য পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। ঐতিহ্যবাহী এসব পুকুরের মধ্যে সম্প্রতি রাতের আঁধারে ভরাট করা হয়েছে ব্রাঞ্চরোডের দ্বিতীয় পুকুরটি। শতবর্ষের পুরনো ওই পুকুরটি এক রাতেই ভরাট করার পর নতুন নতুন পুকুর ভরাট ও দখলের প্রতি চোখ পড়েছে স্থানীয় প্রভাবশালীদের।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৫৩ সালে ঝাউতলার দ্বিতীয় গলির পুকুরের জমিসহ বেশ কিছু সম্পত্তি ক্রয় করেছিলেন বিজন বালা রায়। তিনি ১৯৬২ সালে সুধীর কুমার সরকারের কাছে বিক্রি করেন। স্বাধীনতার পর জমির মালিক হয়ে যান জনৈক শিরিন রহমান। এরপর জনৈক আকবর ওই পুকুরটি ২০০৭ সালে শিরিন রহমানের কাছ থেকে ক্রয় সূত্রে মালিক দাবি করে নগরীর কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সহায়তায় দখল প্রক্রিয়া শুরু করেন। মল্লিক রোডের সদর গার্লস স্কুল ও পুলিশ ক্লাবের মধ্যবর্তী ঐতিহ্যবাহী পুকুরটির অর্ধেকেরও বেশি দখল করেছেন শাসক দলের লোকজন। চ্যাটার্জী লেনের দু’টি পুকুর দখলের অভিযোগ সরকারি দলের লোকজনের বিরুদ্ধে। নগরীর আদালত প্রাঙ্গণের পুকুরটিও ভরাটের জন্য অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন একটি মহল। পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি পুকুর রক্ষার জন্য আদালতে রিট করলেও আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বা কখনো আদালতের আদেশ উপেক্ষা করেই চলছে পুকুর ভরাটের কাজ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এসব পুকুরগুলো রাতের আঁধারে ভরাট করা হয়েছে।
পুকুর ভরাটের ব্যাপারে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শওকত হোসেন হিরন বলেন, পৈত্রিক সূত্রে পুকুরের মালিক হওয়া পরিবারের সদস্যরা পুকুর ভরাট করলে আমার কিছুই করার নেই। তথাকথিত ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুরের বাইরে এখানে সরকারি পুকুর দখলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় সিটি মেয়র ও জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক রিট দায়ের করার পরেও থেমে নেই পুকুর ভরাট প্রক্রিয়া।