তথ্য সেবা বদলে দিয়েছে মাহিলাড়া ইউনিয়নবাসীর জীবন চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদের সকল কর্মকান্ডে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার ও তথ্য প্রযুক্তির সেবা দিয়ে বেশ অল্প দিনেই পুরো দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের তরুন চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু। ফলশ্র“তিতে সম্প্রতি মাহিলাড়া ইউনিয়নের তথ্য সেবা কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন জনপ্রশাসন সচিব আব্দুস সোবাহান সিকদার। পরিদর্শন শেষে জনপ্রশাসন সচিব বলেন, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে শিক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে। এধারা অব্যহত থাকলে অতিশীঘ্রই দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হবে। সচিব মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবার কেন্দ্রের মান দেখে ভূয়শী প্রসংশা করেন। এছাড়াও মাহিলাড়া ইউনিয়নের তথ্য সেবা কেন্দ্র পর্যবেক্ষন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাউথ ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ রুর‌্যাল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ও প্রকল্পের সিনিয়র এ্যাডভাইজার ওয়াল্ডল্যান্ড রিসোর্স সাইন্স জাপানের প্রতিনিধি তশিফুমি সেরিজাওয়া, সাউথ ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ রুর‌্যাল ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের ইন্টরন্যাশনাল বিশেষজ্ঞ ড. এআরএম মমতাজউদ্দিন, বে-সরকারী মানবিক সংস্থা পদক্ষেপের চেয়ারম্যান মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান।

গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদ হবে দেশের মধ্যে প্রথম ডিজিটাল মডেল ইউনিয়ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এ প্রত্যয় ব্যক্ত করে একনিষ্ঠ ভাবে ইউনিয়নবাসীর সেবা করে যাচ্ছেন মাহিলাড়া ইউনিয়নের তরুন উদিয়মান চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু। শুধু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবেই তার সুনাম থেমে থাকেনি। তিনি একই সাথে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের গৌরনদী উপজেলা শাখার আহবায়ক ও ঐতিহ্যবাহী মাহিলাড়া এ.এন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে বেশ সুনাম কুড়িয়েছেন। মুজিব আদর্শের লড়াকু সৈনিক সৈকত গুহ পিকলু মাহিলাড়া ইউনিয়নবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আমি ফেরেস্তা নই-সামান্য একজন মানুষ মাত্র। আমার ভুল ত্রুটি ধরিয়ে দেবেন। আপনাদের পরামর্শ ও সহযোগীতা নিয়েই আমি মাহিলাড়া ইউনিয়নকে দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম একটি ডিজিটাল মডেল ইউনিয়ন হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। তরুন উদিয়মান চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু প্রতি সপ্তাহে ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডের জনগনের সাথে ইউপি চেয়ারম্যানের জবাবদিহীতা মূলক ব্যতিক্রমধর্মী সভার আয়োজন করে ইতোমধ্যে পুরো দক্ষিণাঞ্চলে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। ওইসব সভায় তিনি জনগনের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন ও পরামর্শ নিয়ে ইউনিয়নের সার্বিক অবস্থার আলোচনা করেন। সভার মাধ্যমে চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন সেবার কথা জনগনের মাঝে তুলে ধরেন। স্থানীয় জনগন ব্যাপক আগ্রহ নিয়ে ওইসব সভায় অংশগ্রহন করে তাদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। চেয়ারম্যান পিকলু নিজ উদ্যোগে প্রতি সপ্তাহে ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে এ ব্যতিক্রমধর্মী আয়োজন করেছেন। এছাড়াও তিনি মাহিলাড়া ইউনিয়নকে মাদক মুক্ত ইউনিয়ন ঘোষনা করে যুবক সমাজকে নিয়ে “মাদক নিমূর্ল কমিটি” গঠন করেছেন। ইতোমধ্যে ওই কমিটি ইউনিয়নের বিভিন্নস্থানে থানা পুলিশের সহযোগীতায় ব্যাপক মাদক দ্রব্য উদ্ধার করেছে। মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান সৈকত গুহ পিকলু। তার পিতা গৌরনদী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি, মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা কালিয়া দমন গুহ।
 
গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নের জঙ্গলপট্টি গ্রামের আবুল কালাম জানান, তথ্য সেবা হেইডা আবার কি, আগে বুঝিনায়। তয় এ্যাহন দেহি এহ্যানে সব আছে। মোর পোলায় বিদাশে থায়ে। এই কেন্দ্রে আইসা অর ছবি দেহি আর মোরা অর লগে কথা কই। মোর পোলায়ও নাকি মোগো ছবি দেখতে পায়। এত সুযোগ-সুবিধা আগে কোতায় আছেলে”। মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্রের সেবা পেয়ে আবুল কালাম উল্লেখিত কথাগুলো বলেছেন। এ কথাশুধু তার একারই নয় একইভাবে জানালেন, ওই কেন্দ্রে তথ্য সেবা পাওয়া দাদন আলী শিকদার, মাহিলাড়া গ্রামের রবিন দাস, বেজহার গ্রামের আনোয়ার হোসেন, মিন্টু শিকদার, মনির হোসেন, সোহেল হাওলাদার, মজিবুর রহমান হাওলাদারসহ অনেকেই। সময়ের ব্যবধানে রাতারাতি বদলে গেছে গৌরনদী উপজেলার মাহিলাড়া ইউনিয়নবাসীর জীবন চিত্র। তারা এখন প্রতিদিন ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রে গিয়ে নিচ্ছেন তথ্য প্রযুক্তির সেবা। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পর ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যে ২০১০ সনের ১১ নবেম্বর দেশের ৪ হাজার ৫’শ ১টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয় ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্র। তারই ধারাবাহিকতায় বরিশাল জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে এ সেবাকেন্দ্রের সুযোগ সুবিধা থাকা সত্বেও কোন ইউনিয়নই এখন পর্যন্ত তেমন কোন সাড়াযাগাতে পারেনি। এরইমধ্যে মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের তরুন চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুর প্রচেষ্ঠায় খুব স্বল্প সময়ে তথ্য সেবা কেন্দ্রের সেবা দানের মাধ্যমে মাহিলাড়া ইউনিয়নের তথ্য সেবা কেন্দ্রটি পুরো জেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ফলশ্রুতিতে জেলার ডিজিটাল মেলায় অংশগ্রহন করে চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পদকপ্রাপ্ত হয়েছেন। মাহিলাড়া গ্রামের আবুল মোল্লা জানান, এ তথ্য কেন্দ্রে মানুষের সবচেয়ে বেশি চাহিদা স্বাস্থ্য, কৃষি পরামর্শ, জমির পর্চা-খতিয়ান সংক্রান্ত তথ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ফরমসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারি আবেদন ফরম নিতে আসেন অনেকেই। এছাড়া ই-মেইলে যোগাযোগ, ইন্টারনেটে কথা বলার পাশাপাশি প্রিয়জনের ছবি দেখতে পারছেন প্রবাসীদের স্বজনেরা। কম্পিউটার কম্পোজ, প্রিন্ট প্রশিক্ষণ, ছবি তোলা, ফটোকপি, পরীক্ষার ফলাফল জানা নাগরিক সনদ, জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধন এবং মোবাইল ব্যাংকিং, স্ক্যানার, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের সুবিধা পাচ্ছেন এ তথ্য সেবা কেন্দ্রে।

তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, এখানে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন সেবা নিয়ে থাকেন। সকাল নয়টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ইউনিয়নের মানুষকে সেবা দেয়া হয়। তাছাড়া প্রয়োজন অনুযায়ী ল্যাপটপ নিয়ে পরিষদের বাহিরে গিয়েও মানুষের সেবা দেয়া হয়।

মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের আহবায়ক সৈকত গুহ পিকলু জানান, বাণিজ্যিকভাবে যে সেবা স্থানীয়রা পায় তার চেয়ে ৫০ ভাগ কম খরচে ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য সেবা কেন্দ্র থেকে দেয়া হয়। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জানান, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে অধিকাংশ ইউনিয়নের তথ্য সেবা কেন্দ্র পরিচালনার ক্ষেত্রে কিছুটা ক্রটি বিচ্যুতি থাকলেও কেবলমাত্র মাহিলাড়া ইউনিয়নেই তথ্য সেবাকেন্দ্রের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে। এর কারন হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, প্রথমে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার ফলেই ইউনিয়নবাসী এ সেবা সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। দেশের মধ্যে সর্বপ্রথম মাহিলাড়া ইউনিয়নকে ডিজিটাল মডেল ইউনিয়ন হিসেবে গড়ে তুলতে মুজিব আদর্শের লড়াকু সৈনিক সৈকত গুহ পিকলু সকলের বিশেষ করে মাহিলাড়া ইউনিয়নবাসীর সহযোগীতা কামনা করেছেন।