জালনোট থেকে সাবধান

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পণ্য লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে টাকার ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই টাকা প্রধানতই কাগজে ছাপা নোট। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিবিড় তত্ত্বাবধানে নোট মুদ্রণ ও বাজারজাত করা হয়। ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক চ্যানেলের মাধ্যমে এই টাকা সারাদেশের মানুষের হাতে পৌঁছে যায়। জনসাধারণ এই টাকার বিনিময়ে নিত্যপণ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় করে। নগদ টাকা ছাড়াও চেক এবং ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও কিছু লেনদেন হয়, কিন্তু ব্যাপক জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন কেনাকাটার জন্য নগদ টাকাই ভরসা। প্রযুক্তির, বিশেষ করে কম্পিউটার প্রযুক্তির বিস্ময়কর অগ্রগতির ফলে মানব-সভ্যতার নানা ক্ষেত্রে যেমন অভাবনীয় ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তেমনি তাকে নেতিবাচকভাবে ব্যবহার করে মানুষের ক্ষতিকারক অনেক কাজও করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জালনোট মুদ্রণ ও বাজারজাত করার কথা উল্লেখ করা যায়।

কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসল টাকার আদলে দেশে জাল টাকা তৈরি হচ্ছে দেদার। এ টাকার ডিজাইন, রং বিন্যাস ও সার্বিক উপস্থাপনা এতটাই নিখুঁত যে, সাধারণভাবে আসল-নকল শনাক্ত করা খুবই কঠিন। এক শ্রেণীর অসাধু মানুষ ছোট্ট সাধারণ পরিসরে প্রতিনিয়ত জাল টাকা তৈরি করে বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে। এতে সাধারণ মানুষ যেমন প্রতারিত হচ্ছেন, তেমনি দেশের স্বাভাবিক ও অনুকূল অর্থ প্রবাহের ক্ষেত্রেও তা ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।

পত্র-পত্রিকার পাতায় জাল টাকা তৈরির বিষয়ে এত সংবাদ ছাপা হয় যে, তা রীতিমতো উদ্বেগজনক। প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, রাজধানী ঢাকার উত্তরা থেকে সম্প্রতি ২৩ লাখ টাকার জালনোট আটক করা হয়েছে। এ চক্রটি ইতোমধ্যে ২০ কোটি টাকার জাল নোট বাজারে ছেড়ে দিয়েছে। আরেকটি রিপোর্টে প্রকাশ, ঈদকে সামনে নিয়ে ২০ থেকে ৩০ কোটি টাকার জাল নোট বাজারে এসেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার হাতে মাঝে মাঝে বিপুল পরিমাণ জাল টাকা, জাল টাকা তৈরির উপকরণ ও যন্ত্রপাতি আটক এবং এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, কিন্তু এ অপতৎপরতা থামছেই না, বরং ক্রমশ বেড়ে চলেছে। সরকারের পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেয়া হয়েছে জালনোট শনাক্তকারী মেশিন, বিভিন্ন ব্যাংকেও তা আছে। কিন্তু জালনোট প্রস্তুতকারী ও এর সঙ্গে জড়িত শক্তিশালী সিন্ডিকেট এতটাই বেপরোয়া যে, তারা জাল টাকা তৈরির জন্য সর্বোচ্চ ঝুঁকি গ্রহণেও পিছপা হচ্ছে না। তারা হাট-বাজার, শহর-বন্দর ইত্যাদি বৃহত্তর পরিসরে ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের তৈরি জাল টাকা। ব্যাংক থেকে টাকা তোলার সময় হয়ত আসল টাকা পাওয়া গেল। কিন্তু সাধারণভাবে হাট-বাজারে টাকা লেনদেনের সময় আসল নকল শনাক্ত করা খুবই কষ্টসাধ্য। এ কারণে মেশিনের পাশাপাশি সাধারণের বোঝার জন্য আসল নোটের অপরিবর্তনীয় যে বৈশিষ্ট্যগুলো আছে সে সম্পর্কে আরো ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু উদ্যোগ নিলেও তা ব্যাপক ও বিস্তৃত পরিসরে এখনও পৌঁছায়নি।

সূত্রমতে, আসল নোটের অপরিবর্তনীয় বৈশিষ্ট্য আছে ১৪টি। এই বৈশিষ্ট্যগুলো ব্যাপকভাবে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত সচিত্র লিফলেটের মাধ্যমে প্রচার অব্যাহত রাখতে হবে। শুধু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়, সরকারের প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকল সংস্থাকে এই সচেতনতা কার্যক্রমে সস্পৃক্ত করতে হবে। আসল নোটের বৈশিষ্ট্যগুলো যখন জনগণের একেবারে রপ্ত হয়ে যাবে, তখন তাদের পক্ষে নকল টাকা শনাক্ত করা সহজ হবে বলে আশা করা যায়। আর এভাবেই জাল টাকা তৈরি ও বাজারজাত করার এই সর্বনাশা কার্যক্রম ক্রমান্বয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।