মুক্তি সংগ্রামের নেতা আগৈলঝাড়ার মিহির দাশগুপ্তের অন্তেষ্টিক্রীয়া সম্পন্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভাষাসংগ্রামী, গণতান্ত্রিক ও মেহনতি মানুষের মুক্তিসংগ্রামের নেতা, একাত্তরে হেমায়েত বাহিনীর অন্যতম সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা গ্রামের কৃতি সন্তান মিহির দাশ গুপ্ত মন্টু (৮০) আর নেই। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি পরলোকগমন করেছেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ পুত্র, ২ কন্যাসহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন রেখে গেছেন। বুধবার দুপুরে তার মরদেহে ফুলের তোড়া দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস-এমপি, জেলা ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের নেতৃবৃন্দ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নিমূর্ল কমিটির জেলার নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সুশীল সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। এছাড়া তার মৃত্যুতে জনতা ব্যাংকের পরিচালক এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের কেন্দ্রীয় সভাপতি নুরুল আলম বাবুল গভীর শোক ও শোর্কাত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। ওইদিন বিকেলে আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কালাম তালুকদার, গৌরনদীর ইউএনও দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী, ওসি আগৈলঝাড়া মোঃ সাজ্জাদ হোসেন, গৌরনদীর ওসি আবুল কালাম রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করেন। এছাড়া জেলা কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডার মোঃ মহিউদ্দিন মানিক বীর প্রতীক সাত রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। শেষে পারিবারিক শ্মশানে তার অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।

গৌরনদী উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক সৈয়দ মনিরুল ইসলাম বুলেট ছিন্টু জানান, মিহির দাশ গুপ্ত মন্টু মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের পাশাপাশি তিনি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আগৈলঝাড়ার আস্কর এলাকায় একটি হাসপাতাল গড়ে তুলেছিলেন। পাকিস্তান আমলে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয় থাকার দায়ে তাকে একাধিকবার কারাভোগ করতে হয়েছে। আশির দশকে সামরিক শাসনের সময়েও তিনি কারাবরন করেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থাকলেও দলমত নির্বিশেষে তিনি সবার কাছে ছিলেন শ্রদ্ধেয় বড়দা। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিপুলসংখ্যক নাটকের প্রধান চরিত্রে তিনি অভিনয়ের পাশাপাশি নির্দেশনা দিয়েছেন। তবলা বাদক হিসেবে ছিলো তার ব্যাপক সুনাম। তিনি স্ত্রী তপতী দাশগুপ্ত, এক পুত্র ও ২ কন্যা রেখে গেছেন। তার পুত্র অমিত দাশগুপ্ত ঢাকা হাইকোর্টের আইনজীবী। বড় কন্যা শুক্লা দাশগুপ্ত সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের শিক্ষিকা এবং বাচিক শিল্পী। ছোট কন্যা স্বাতী দাশগুপ্ত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকল্যাণে অনার্স ডিগ্রি নিয়ে এমএ পড়ছেন। মিহির দাশগুপ্ত দৈনিক সমকালের সহযোগী সম্পাদক অজয় দাশগুপ্ত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক অসীম দাশগুপ্তের বোন জামাতা।