বানারীপাড়ায় ছাত্রদলের গ্রুপের সংঘর্ষে এএসআই আহত – ৩৪ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা

রাহাদ সুমন, বানারীপাড়া ॥ বানারীপাড়ায় ছাত্রদলের দু’পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলাকালে হামলায় ডিএসবির এএসআই সিদ্দিকুর রহমান আহত হওয়ার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সাবেক এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর সহ ছাত্রদল ও শ্রমিকদলের ৯ নেতাকর্মী এবং অজ্ঞাত ২০/২৫ জন ক্যাডারকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছে।

মঙ্গলবার রাতে থানার এস আই আসাদুজ্জামান হাওলাদার বাদী হয়ে পুলিশের কর্তব্যপালনে বাধা দান ও হামলার ঘটনা সহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে ১৪৩, ৩৩২, ৩৩৩, ৩৫৩ ও ৩০৭ ধারায় ওই মামলা দায়ের করেন। আসামীরা হলেন ছাত্রদল কর্মী ইমরান হাওলাদার(২৮), মোঃ সাগর মাঝী(২২), ইলিয়াস মাহমুদ ফকির(২৫), পৌর ছাত্রদল সভাপতি তুহিন মৃধা(৩৪), শ্রমিকদল নেতা জহিরুল ইসলাম জকু(৪২) পৌর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস(২৮), সাবেক কাউন্সিলর তরিকুল ইসলাম মিল্টন(৪০), চাখার ইউনিয়ন ছাত্রদল নেতা সুমন সরদার(২৮) ও ছাত্রদল কর্মী সাইদুর রহমান সাঈদ (২৮)। এদের মধ্যে ইমরান হাওলাদার, জহিরুল ইসলাম জকু, তরিকুল ইসলাম মিল্টন, সজল দাস ও সুমন সরদার পুলিশের তালিকা ভূক্ত সন্ত্রাসী বলে জানা গেছে। এছাড়া ইমরান হাওলাদার একটি অস্ত্র মামলায় ১৭ বছর সাজা প্রাপ্ত আসামী। বর্তমানে সে হাইকোর্ট থেকে জামিনে রয়েছে। ২০০৮ সালের ২৯ অক্টোবর বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে দিয়ে আওয়ামীলীগের মিছিল অতিক্রমকালে ভিতর থেকে মিছিলে গুলি করার পর অস্ত্র সহ র‌্যাব ইমরান সহ বিএনপির ১৯ নেতাকর্মী ও ক্যাডারকে আটক করে। র‌্যাবের ওই মামলায় আদালত ৫ জনকে ১৭ বছরের সাজা প্রদান করে। সজল দাস ঝালকাঠী থানার একটি ডাকাতি মামলার আসামী। পরে তারা হাইকোর্ট থেকে জামিনে বেরিয়ে আসে।

প্রসঙ্গত বরিশালে ১৯ নভেম্বর বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বানারীপাড়ায় ছাত্রদলের দুই গ্র“পের পাল্টাপাল্টি প্রস্তুত্তি সভাকে কেন্দ্র করে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপে ডিএসবি পুলিশের এক এএসআই সহ কমপক্ষে ১০জন আহত হয়। এসময় ৩ ছাত্রদল ক্যাডারকে আটক করে পুলিশ।

বরিশালে দলীয় চেয়ারপার্সনের আগমন উপলক্ষে বানারীপাড়া কমিউনিটি সেন্টার ও উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে ছাত্রদলের দুই গ্রুপ পৃথক প্রস্তুতি সভার আয়োজন করে।ওই সভায় পৌর ছাত্রদলের সভাপতি তুহিন মৃধা ও সম্পাদক মিজান ফকিরের নেতৃত্বাধীন দুই গ্রুপের পক্ষ থেকেই জেলা ছাত্রদল নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রন জানানো হয়। পরে দু’গ্রুপই জেলা ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দকে তাদের সভায় উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। সে অনুযায়ী ওইদিন সন্ধ্যায় জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক মাসুদ হাসান মামুন, যুগ্ম আহবায়ক এইচএম তছলিম উদ্দিন, বাবলু, মাওলা রাব্বি সাকিল, খন্দকার মামুন, শামসুদ্দোহা আজাদ, রাশেদুল ইসলাম, হাবিবউল্লাহ ও মাফুজুল আলম মিঠু সহ নেতৃবৃন্দ বানারীপাড়ায় টেম্পু ট্যান্ডে পৌঁছলে তুহিন মৃধা ও মিজান ফকিরের নেতৃত্বাধীন ছাত্রদলের দুই গ্রুপ তাদেরকে রিসিভ করতে গেলে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে ধারালো অস্ত্র ও লাঠি সোঠা নিয়ে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। ফলে সদর রোড রনক্ষেত্রে পরিণত হয়। এসময় বানারীপাড়ায় কর্মরত ডিএসবির এএসআই সিদ্দিকুর রহমান সহ ছাত্রদলের অন্তত ১০ নেতাকর্মী ও পথচারী আহত হয়। হামলায় সিদ্দিকুর রহমানের একটি দাঁত পড়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। পরে সেখান থেকে তাকে বুধবার সকালে পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় থানা পুলিশ ছাত্রদল নেতা মিজান ফকির গ্রুপের সাগর মাঝী, এমরান হাওলাদার ও ইলিয়াস ফকিরকে আটক করে। বুধবার সকালে তাদেরকে ওই মামলার আসামী হিসেবে কোর্টহাজতে প্রেরণ করা হয়।

এদিকে ছাত্রদলের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের গাড়িতে হামলার প্রতিবাদে  প্রতিবাদে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে আওয়ামীলীগ।

অপরদিকে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পুলিশের এএস আই আহত হওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের হওয়ার পর থেকে ছাত্রদল নেতাকর্মীরা গাডাকা দিয়েছে।