স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গত রবি ও সোমবারের দু’দিনের বরিশাল সফর উপলক্ষ্যে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা দিয়েছেন ক্ষমতাসিন দল আ’লীগের নেতা-কর্মীরা। এরপূর্বে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বরিশাল সফরের সময় দু’বার তার গাড়ি বহরে হামলা চালিয়েছিলো বিএনপির নেতা-কর্মীরা। দলের হাই কমান্ডের নির্দেশে এবার খালেদা জিয়ার সফর উপলক্ষ্যে কেউ যেন কোনপ্রকার সমস্যরা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য প্রশাসনের সাথে নিরাপত্তা পাহারা বসিয়েছিলো আ’লীগের নেতা-কর্মীরা। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্রমতে, এককালের সন্ত্রাসের রক্তাক্ত জনপথ বলেখ্যাত বরিশাল ও গৌরনদীতে স্বাধীনতার পরবর্তী ৪১ বছরের সকল রাজনৈতিক কৃষ্টি কালচার, বিদ্ধেষপূর্ন ও প্রতিহিংসা পরায়ন রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে এবার অন্যান্য দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করছে ক্ষমতাসিন দল আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। বিএনপির চেয়ারপার্সন ও বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া রবিবার (১৮ নবেম্বর) বরিশালে দু’দিনের সফরে এসেছিলেন। ১৯ নবেম্বর তিনি বরিশাল বেলসপার্কের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে ভাষন দিয়েছেন। নিবিঘ্নে এ কর্মসূচী পালন করতে বরিশাল নগরীসহ গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ায় আওয়ামলীগ নেতা-কর্মীরা দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে গত শুক্রবার থেকে স্ব-স্ব এলাকার বিএনপি নেতা-কর্মীদের সহায়তা ও বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে পুলিশ প্রশাসনের সাথে একত্রিত হয়ে নিরাপত্তা পাহারা বসিয়েছিলেন। যা ছিল বিগত ৪১ বছরের ইতিহাসে সর্বপ্রথম রেকর্ড। যে কারনে ক্ষমতাসীন দলের এ মহতি উদ্যোগটি সর্বমহলের বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। অথচ ২০০১ সনে এবং এরপূর্বে নব্বইয়ের দশকে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষিণাঞ্চল সফরের সময় তার গাড়ি বহরে গৌরনদীতে বসে দু’বারই হামলা চালিয়েছিলো বিএনপির নেতা-কর্মীরা। ওইসময় আহত করা হয়েছিলো বর্তমান সংসদের অনেক মন্ত্রী, এমপি ও স্থানীয় আ’লীগের নেতা-কর্মীদের।
সে সময়ে বিএনপির হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন প্রবীণ আ’লীগ নেতা কালিয়া দমন গুহ। তিনি বলেন, প্রতিহিংসা পরায়ন রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে এতদাঞ্চলের আ’লীগের একমাত্র অভিভাবক কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক চীফ হুইপ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর নির্দেশে গত শুক্রবার থেকে দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার গৌরনদীর ভুরঘাটা থেকে ইচলাদী পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়কে আইন শৃংখলা বাহিনীর সাথে যুব ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নিরাপত্তা পাহারা দিয়েছে। তিনি আরো জানান, জামায়াত শিবিরের যেকোন নাশকতামূলক কর্মকান্ড ঠেঁকাতেই এ পাহারা বসানো হয়েছিলো। জনসভা শেষে সোমবার রাতে বেগম খালেদা জিয়া মহাসড়ক দিয়ে পূর্ণরায় চলে যাওয়া পর্যন্ত এ নিরাপত্তা পাহারা অব্যাহত ছিলো বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার বরিশালে আগমনের এক সপ্তাহ পূর্ব থেকেই সর্বত্র ছিলো বিএনপির দখলে। বোঝার কোন উপায়ই ছিলো না বিএনপি বিরোধী দল। সর্বত্রই উৎসব মুখর আনন্দময় পরিবেশ ছিলো বিদ্যমান। এ সৌহার্দপূর্ন রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি জন্য সাবেক চীফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল¬াহ, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শওকত হোসেন হিরন, বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস এর অগ্রনী ভূমিকা ছিলো।
বিএনপির একাধিক নেতারা জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বরিশাল সফর ও বেলস পার্ক ময়দানে সোমবারের জনসভা উপলক্ষ্যে গত শুক্রবার থেকে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়ায় তারা নির্ভয়ে ও প্রাণচাঞ্চল্য নিয়েই প্রত্যন্ত পল্লী থেকে শুরু করে সর্বত্রই পোষ্টারিং, লিফলেট বিতরন, ব্যানার, ফেষ্টুন, বিলবোর্ড লাগানোসহ ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে খালেদা জিয়াকে শুভেচ্ছা জানিয়ে নির্মান করা হয়েছিলো শতাধিক তোরণ। এসব কর্মকান্ডে স্থানীয় থানা পুলিশের পাশাপাশি তারা ক্ষমতাসিন দলের নেতা-কর্মীদের যথেষ্ঠ সহযোগী পেয়েছেন। যা সত্যিই প্রশংসনিয় বলেও তারা মন্তব্য করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সরকারি দল হিসেবে ও অতীতে দু’বার বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ওপর গৌরনদীতে হামলার পরেও গৌরনদী, আগৈলঝাড়াসহ পুরো বরিশাল নগরীতে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীরা যে দায়িত্ববোধ থেকে রাজনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা করছে, যেমনি ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিএনপিকে শিক্ষা দিয়েছে তা সত্যিই প্রংশার দাবি রাখে। এ কর্তব্যবোধ থেকেই বিএনপির নেতাদের অনেক কিছু শিক্ষা নেয়া উচিৎ বলেও তারা মনে করেছেন।