মমিনুল ইসলাম মোল্লা ॥ ধান, নদী, খাল এই তিনে বরিশাল। হ্যাঁ, নদী মাতৃক বাংলাদেশের নিসর্গ ভূমি বরিশাল। চলুন হাতে দুদিন সময় নিয়ে বরিশাল থেকে বেরিয়ে আসি। ঢাকা থেকে বরিশাল গেলে নৌপথে ভাল হবে। ঢাকা-খুলনা ভায়া বরিশাল রুটে স্টিমার পিএস টার্ন, পিএস মাহমুদ ও পিএস লেপচা চলাচল করে। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন ১টি স্টিমার সন্ধ্যা ৬টায় বরিশাল হয়ে খুলনা যায়। এছাড়া লঞ্চ রাজহংস সন্ধ্যা পৌনে ৮টা অথবা কীর্তনখোলা পৌনে ৯টায় ঢাকা থেকে বরিশাল যায়। ভাড়া ডেকে জনপ্রতি ১১৭ টাকা।
কি কি দেখবেন?
১) মসজিদ (কসবা মসজিদ): গৌরনদীর কসবায় অবস্থিত। মসজিদটি বর্গাকার। চার কোণে চারটি গোলাকার মিনার আছে। দেয়ালগুলো ৬ ফুট পুরু। ৩টি দরজা ও ৩টি মেহরাব আছে। এটি পঞ্চম শতকে নির্মিত বলে অনুমান করা হয়। এছাড়া মির্জাগঞ্জের মসজিদ- বাড়িতে ১৪৬৫ সালে নির্মিত একটি মসজিদ দেখতে পাবেন। এটি বর্গাকার প্রতি বাহু ২র্১ র্র্র্৯র্ তটি অবতল মিহরাব আছে এবং পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণে ৩টি করে খিলান পথ রয়েছে। বরিশাল শহরের প্রাণকেন্দ্রে দেখতে পাবেন ভাটিখানা জোর মসজিদ। দূর থেকে দুটি মসজিদ মনে হয় বলে জোড় মসজিদ বলা হয়। অষ্টাদশ শতাদ্বীর প্রথম দিকে তৈরী মসজিদটিতে মিনার ৮টি মিম্বর ১টি, দরজা তটি ও জানালা ৮টি।
২) মন্দির (মুকুন্দ দাসের কালি মন্দির): বরিশালের নতুল্লাবাদে দেখবেন মুকুন্দ দাসের মন্দির। মন্দিরটি ভগ্ন প্রায়। এখানে তার গান শোনার জন্য নেতাজী সুভাস বসুও এখানে আসতেন। জনগণের মুখে শুনবেন তার গান, ছিল ধান গোলা ভরা শ্বেত ইন্দুরে করল সারা….।
৩) গীর্জা ( পাদ্রী শিবপুর): বরিশাল শহর থেকে ২০ কিঃ মিঃ দূরে অবস্থিত। শ্রীমন্ত নদীর তীরে ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে খৃষ্টানদের বসবাসের স্মৃতি চিহ্ন স্বরুপ গীর্জাটি দেখুন। পর্তুগীজদের ইমারত, স্মৃতিসৌধ ও রোমান ক্যাথলিক গীর্জাটি পর্যটকদের আকর্ষন করে।
৪) মঠ (শংকর মঠ): মসজিদ, মন্দির, গীর্জা দেখার পর এবার একটি মঠ দেখুন। এটি ১৯১২ সালে বরিশাল বিপ্লবী দলের প্রতিষ্ঠা করেন। শত শত বিপ্লবী এখানে এসে দীক্ষা গ্রহন করে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ে।
৫) পুকুর (বিবির পুকুর): বরিশাল শহরেই এটি দেখুন। শান বাঁধানো পাড়, আলোকাজ্জল ফোয়ারা আকৃষ্ট করবে। পুকুরটি খুব একটা বড় না হলেও পুকুর পাড়ে বসে স্থানীয় লোকাদের মুখে শুনবেন-এটি জিনাত বিবির পুকুর। জিনাত বিবিকে ১৮শ শতকের প্রথমদিকে বাংলা সাহিত্যের প্রবাদ পুরুষ উইলিয়াম কেরী পর্তুগীজ জলদস্যুদের নিকট থেকে উদ্ধার করেন। সমাজ তাকে ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করলে তিনি তাকে আশ্রয় দেন এবং তার নামে তালুক ক্রয় করেন। জিনাত করেন। এখানে বরিশালের প্রথম গির্জাাটিও দেখতে পাবেন। গীর্জাটিকে কেন্দ্র করে এলাকাটির নাম হয়েছে গীর্জা মহল্লা।
৬) দিঘি (দুর্গা সাগর): বরিশাল শহরের ১২ কিঃ মিঃ দূরে বাবুগঞ্জের মাদবপাশায় এটি দেখবেন। ২৩০ বছরের প্রাচীন দিঘিটি দেখে মুগ্ধ হবেন। রাজা শিব নারায়ানের স্ত্রী রাজার মৃত্যুর পর সিংহাসনে আরোহন করেন। তিনি প্রজাদের জল কষ্ট নিবারণে জন্য এ দিঘি খনন করেন। এর আয়তন ৪৫ একর ৪২ শতাংশ। কয়েক বছর সময়ে লক্ষাদিক টাকা ব্যয়ে ১৭৮০ সালে এটি নির্মিত হয়।
৭) বাড়ি ( রাজ বাড়ি): রাজবড়িটি দুর্গা সাগর দিঘির সন্নিকটে। এটি চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের (বরিশাল) রাজা কন্দপ নারায়ন এর রাজবাড়ি। সেখানে গিয়ে শুনবেন, এক মুদি দোকানদার ও রাজবাড়ির নিকট আত্মীয়দের ষড়যন্ত্রে চারশ বছরের এ রাজ পরিবারের পতন ঘটে।
৮) নৌবন্দর (বরিশাল): ব্রিটিশ শাসনামলে এটি নির্মিত। বরিশালে স্টিমারঘাট ছিল ৭টি বর্তমানে ২টি স্টিমারঘাট রয়েছে বর্তমানে ২০টি রুটে বরিশাল নদী বন্দর থেকে ঢাকা, চাঁদপুর, ঝালকাঠি, কাউখালী, হুলাহাট, চরখালী, বড় মাছুয়া, খুলনা ও মংলায় রকেট সার্ভিসে যাওয়া যায়। অত্যাধুনিক নৌবন্দরটি ঘুরে-ফিরে দেখা যাবে।
৯) স্মৃতিঃ বরিশালকে বিশ্ববাসির কাছে পরিচিত করে তুলেছেন, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক। তার বাড়িটি দেখুন শহরের আগরপুর রোডে। এছাড়া শহর থেকে ২৩ কিঃ মিঃ দূরে শেরে বাংলার গ্রামের বাড়ি চাখার এ যেতে পারেন। এখানে শেরে বাংলা কলেজ, শেরে বাংলা যাদুঘর, শেরে বাংলার পৈত্রিক বাড়ি দেখবেন। এছাড়া স্টিমারঘাট পেরিয়ে দেখবেন শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ।
১০) দুর্গ (গুজাবাদ দুর্গ): শহর থেকে ৫ মাইল দক্ষিণে-পশ্চিমে নলছিটির গুজাবাদে একটি দুর্গ ছিল। দুর্গের চারকোণে চারটি বরুজ ছিল। সেখানে কামান বসানো হতো। দুর্গের ভেতরে চারটি পুকুর ছিল।মাঝকানে একটি ঘর ছিল যাতে বাঙলার সুবেদার শাহ গুজা বাস করতেন বলে জানা যায়। এখন দুর্গের সামান্য মাত্র টিকে আছে। পর্তুগীজ ও মগ দস্যুদের হাত থেকে প্রজাদের রক্ষা করার জন্য এটি নির্মিত হয়েছিল বলে জানা যায়।
১১) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিএম কলেজ): উপমহাদেশের খ্যাত বিএম কলেজটি দেখুন। ১৮৮৪ সালে মহাতœ অশ্বনী কুমার দত্ত এটি প্রতিষ্ঠা করেন। এ কলেজ পরিদর্শনে এসে প্রফেসর ক্যানিং-হাম পরিদর্শন বইয়ে লিখেছিলেন, বিএম কলেজের মতো উৎকৃষ্ট কলেজ থাকতে বাঙালি ছেলেরা অক্রফেগর্ড যায় আমি বোঝতে পারিনা।
১২) পার্ক (রেলস পার্ক)
নিকোলাস বেলস ১৯০৯ সালে অবসর বিনোদনের জন্য এই পার্ক তৈরী করেন। এর আশেপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ আপনাকে মুগ্ধ করবে।
১৩) স্বাধীনতার স্মৃতি (স্মৃতি স্তম্ভ) বরিশালের মধ্য-ভূমিতে দেখুন স্মৃতিস্তম্ভ। এর মাধ্যমে স্বাধীতা যুদ্ধে নিহত বরিশালের বীর শহীদদের স্মরণ করা হয়েছে।
বিবিধঃ দুর্গাসাগর, কালেক্টরেট ভবন, চাখার প্রত্মতাত্ত্বিক জাদুঘর, রামমোহনের সমাধি মন্দির, সুজাবাদের কেল্লা, সংগ্রাম কেল্লা, শারকলের দুর্গ, গির্জামহল্লা, বেলস পার্ক, এবাদুল্লা মসজিদ, কসাই মসজিদ, অক্সফোর্ড গির্জা, শংকর মঠ, মুকুন্দ দাসের কালীবাড়ি, ভাটিখানার জোড়া মসজিদ, অশ্বিনী কুমার টাউন হল, চরকিল্লা, এক গম্বুজ মসজিদ, সাড়ে তিন মণ ওজনের পিতলের মনসা। বাকেরগঞ্জ নসরত গাজীর মসজিদ, সরকার মঠ, মাহিলারা মঠ, কমলাপুর মসজিদ উত্তর কড়াপুর মিয়া বাড়ী মসজিদ
কোথায় থাকবেন?
হোটেল আলী ইন্টারন্যাশনাল (সদর রোড) হোটেল প্যারাডাইজ (হাসপাতাল রোড) অথবা হোটেল নুপুর (লাইন রোড) থাকতে পারেন। খাওয়ার জন্য হোটেল সাউথ কিং (বন্দর রোড) অথবা হোটেল রয়েল (সদর রোড) খেতে পারেন।
লেখক: প্রভাষক, সাংবাদিক ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের জন্য ক্যাম্পেনার
যোগাযোগ : ০১৭১১-৭১৩২৫৭