আসন পূর্ণ বিন্যাসের খবরে খুশি দক্ষিনাঞ্চলের মানুষ – রাজনৈতিক নেতাদের দাবী আরো আসন বৃদ্ধি করার

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ সংসদীয় আসনের সীমানা পুর্নবিন্যাস করার খবরে দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। বিশেষ করে পটুয়াখালীর নদী বেষ্টিত রাঙ্গাবালির ৫ ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মানুষের মানুষ খুবই খুশী হয়েছে এ আসন পুর্নবিন্যাসের খবরে। রাঙ্গাবালির মতই খুশী জিয়া নগর উপজেলার ৩ ইউনিয়ন ও ভান্ডারিয়ার দু’টি ইউনিয়নের বাসিন্দারা। দক্ষিনাঞ্চলের রাজনৈতিক নেতারাও এ আসন পুর্নবিন্যাসকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন এতে প্রশাসনিক জটিলতা নিরসনের পাশাপাশি উন্নয়ন সম্বনয় করা সম্ভব সহজ হবে। তবে রাজনৈতিক নেতাদের  দাবী এ বিভাগের আসন সংখ্যা আরো দু’টি বৃদ্ধি করে পূর্বের ন্যায় ২৩টিতে ফিরিয়ে আনা।

বরিশাল বিভাগে ইতিপূর্বে ২৩ টি নির্বাচনী আসন ছিল। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জনসংখ্যা কমে যাওয়ার  অজুহাত তুলে তৎকালিন নির্বাচন কমিশন এ বিভাগের দু’টি আসন কমিয়ে ২১টিতে এলাকা নির্ধারন করে দেন। নতুন করে আসন কমিয়ে যে সীমানা পুর্নবিন্যাস করা হয়েছে তাতে শুধু জেলা – উপজেলা নয়, ইউনিয়ন পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন করে অপর উপজেলার নির্বাচনী আসনের সংগে যুক্ত করে দেওয়া হয়। এতে জনদূর্ভোগ চরম আকার ধারন করে বিশেষ করে প্রশাসনিক কাজে  জটিলতার পাশাপাশি উন্নয়ন বৈষম্য সৃষ্টি হয়। ২০০৭ সালেই এ আসন বিন্যাস নিয়ে উন্নয়ন বঞ্চিত দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এ অঞ্চলের আসন কমিয়ে রাজধানী ঢাকায় আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করায় এ অঞ্চলের মনোয়ন বঞ্চিত নেতারা ঢাকার নির্বাচনী আসনে গিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। বিশেষ করে ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের মত শীর্ষ নেতাদের আসন সংকটের কারনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাধ্য হয়ে প্রার্থী হতে হয়েছিল। শীর্ষ নেতাদের ঢাকার নির্বাচনী আসন গুলো থেকে মনোনয়ন দেওয়া হলেও মাঝারী সারির অনেক নেতা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন হিরন ইত্তেফাককে জানান- আসন সংকুচিত হওয়ার কারনে এ অঞ্চলের নেতারা ঢাকায় গিয়ে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর মন্ত্রী হলেও দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের জন্য তাদের কাজ করার তেমন সুযোগ থাকে না। কারন নির্বাচিত  এমপিরা সংসদের গিয়ে তার নির্বাচনী এলাকার সমস্যার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি মন্ত্রনালয় থেকে নিজের নির্বাচনী এলাকার জন্য কাজ করার চেষ্টা করেন। বরিশাল সদর আসনের সংসদ সদস্য বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন  এমপিদের  কোঠার বরাদ্দ স্ব- স্ব নির্বাচনী এলাকা খরচ করার বিধান থাকায় বরিশালের নেতারা ঢাকায় গিয়ে এমপি হওয়ার কারনে ইচ্ছা থাকলেও তারা বরিশালের উন্নয়নে ব্যায় করতে পারেন না। এ অঞ্চলের অধিকাংশ রাজনৈতিক নেতা মনে করছেন এ বিভাগের আসন সংকুচিত করার কারনে দু’জন এমপি’র বরাদ্ধ কমে গেছে। বরিশাল চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন জনসংখ্যা বৃদ্ধির অজুহাত তুলে যে ভাবে সীমানা নির্ধারন করা হয়েছিল তাতে উন্নয়ন বৈষম্যের শিকার এ অঞ্চলের দরিদ্রতার হার আরো বেড়েছে।

সর্বশেষ আসন পুর্নবিন্যাসে পটুয়াখালীর জেলার নবগঠিত রাঙ্গাবালী উপজেলার বড় বাইশদিয়া, ছোট বাইশদিয়া , চালিতা বুনিয়া, চরমোন্তাজ ও রাঙ্গাবালি সদর ইউনিয়নকে কলাপাড়ার সাথে যুক্ত করে পটুয়াখালী -৪ নির্বাচনী আসন পুন:গঠন করা হয়েছে। ঐ ৫ ইউনিয়নের অধিকাংশই চরাঞ্চল। উন্নয়নের ছোয়া সেখানে লাগেনি। সকল কাজ ছিল গলাচিপা উপজেলা সদরে কিন্ত ভোট দিতে হতো কলাপাড়ার প্রার্থীদের। ফলে গলাচিতার এমপিরা কখনোই ঐ ৫ ইউনিয়নের উন্নয়নে কোন সুদৃষ্ঠি দিতেন না বলে অভিযোগ সেখানকার বাসিন্দাদের। আসন পুর্নবিন্যাসকে স্বাগত জানিয়ে কলাপাড়ার উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ইত্তেফাককে জানান, গলাচিপা থেকে সকল সরকারী দপ্তর গুলো নবগঠিত রাঙ্গাবালী উপজেলা সদরে স্থাপন করা হলে কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালি উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনের এমপিদের কাজ করতে সুবিধা হবে। একই মত ব্যক্ত করে চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুন্সী মোস্তাফিজুর রহমান ইত্তেফাক বলেন কলাপাড়ার সাথে রাঙ্গাবালী উপজেলা যুক্ত করার পর এখন সরকারী দপ্তর গুলো সব রাঙ্গাবালীতে স্থাপন করা হলে এ ৫ ইউনিয়নের মানুষকে আর আগুন মুখা নদীর উত্তাল তড়ঙ্গ পারি দিয়ে গলাচিপায় যেতে হবে না। সহজ যোগাযোগ মাধ্যমের নতুন সেতু বন্ধন হওয়া কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীর উন্নয়ন কাজের অগ্রগতি হবে বলে তিনি মনে করেন।   ভান্ডারিয়া উপজেলার তেলিখালী ইউনিয়নটি ২০০৭ সালে পাশ্ববর্তী উপজেলা মঠবাড়িয়ার সাথে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছিন। ঐ ইউনিয়নের মানুষকে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হতো বলে জানিয়েছে সেখানকার বাসিন্দারা। সংসদ নির্বাচনে পিরোজপুর -৩ আসনের প্রার্থীকে ভোট দিলেও তাদের প্রশাসনিক কাজে আসতে হতো পিরোজপুর-২ আসনের অধীনে থাকা ভান্ডারিয়া উপজেলায়। এতে প্রশাসনিক জটিলতার কথা স্বীকার করে নতুন আসন বিন্যাসকে স্বাগত জানিয়েছেন দু’ উপজেলা প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা।

পুর্ন আসন বিন্যাসকে স্বাগত জানিয়েছেন জিয়া নগর উপজেলার ৩ ইউনিয়নের উন্নয়ন বঞ্চিত মানুষ। সেখানকার মাত্র ৩ টি ইউনিয়ন পাড়ের হাট, পত্তাশী, বালিপাড়া ইউনিয়ন নিয়ে জিয়া নগর উপজেলা ঘোষনা করা হয় বিগত জোট সরকারের আমলে। পিরোজপুর সদর ও নাজিরপুর সাথে যুক্ত করে ঐ উপজেলাকে নিয়ে পিরোজপুর-১ আসন গঠন করা হলেও ভোটার ও প্রার্থী বৈষম্যর কারনে ৩ ইউনিয়নের মানুষ দীর্ঘদিন যাবত বঞ্চনার শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বিশেষ করে পাড়ের হাট ইউনিয়নটি পিরোজপুরের সদরের কাছাকাছি থাকায় সেখানে সামান্য উন্নয়ন হলেও বিশাল কচা নদীর বিভাজনে পূর্বতীরের পত্তাশী ও বালিপাড়া এত দিন ছিল চরম অবহেলিত। সেখানকার উপজেলা সদর ও থানা পুলিশের স্টেশন  ভান্ডারিয়া-কাউখালী প্রান্তে হওয়ার কারনে তাদের সুবিধা হয়েছে এ আসন পুর্নবিন্যাসে। এমন তথ্য জানিয়েছেন পত্তাশী ও বালিপাড়া ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা।