গৌরনদীর হোসনাবাদ হাই স্কুলের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ

ম্যানেজিং কমিটিসহ স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পায়নি বলে তারা জানান। ছাত্রীদের যৌন হয়রানীকারী শিক্ষকের বিচারের দাবিতে গত ২৬ আগস্ট অভিভাবকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন।

একাধিক ভূক্তভোগী ছাত্রী, অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সরিকল  ইউনিয়নের পূর্ব হোসনাবাদ এস.কে.এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক নিত্যনন্দ করের বিরুদ্ধে (বি.এস.সি) দীর্ঘদিন ধরে  ছাত্রীদের ওপর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করে আসছিল স্কুলের ছাত্রী ও অভিভাবক স্থানীয়রা। যৌন নিপীড়নের শিকার একাধিক ছাত্রীর স্কুল ম্যানেজিং কমিটির কাছে দেয়া লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, সিনিয়র শিক্ষক নিত্য নন্দ কর প্রাইভেট পড়ানোর নামে, নোট খাতা দেয়া ও প্রাকটিক্যাল করার নাম করে বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের বাসায় নিয়ে যৌন নিপীড়ন চালায়। ভূক্তভোগীরা কেউ কেউ মূখ খুললেও অনেকেই সামাজিক মর্যদার কারনে বিষয়টি গোপন রাখে। উপজেলার পূর্ব হোসনাবাদ গ্রামের জনৈক সরোয়ার হাওলাদারের কন্যা নবম শ্রেনীর ছাত্রী গত ২৪ জুন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, সে নিত্যনন্দের কাছে স্কুলে বসে প্রাইভেট পড়ত। তাকে পড়তে বাসায় যেতে বলে স্কুল ছুটির পর বাসায় গেলে শিক্ষক নিত্যনন্দ তাকে জাপটে ধরে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ স্পর্শ করে অসামাজিক কাজের চেস্টা চালায়। এক পর্যায়ে আমাকে অর্থের প্রলোভন দেখায়। পরিশেষে আমি তাকে লাথি মেরে ঘর থেকে বের হয়ে যাই। একই অভিযোগ মোঃ সেরজান আলী হাওলাদারের কন্যা স্কুলের নবম শ্রেনীর ছাত্রী (১৫) ও তার সহপাঠীর (১৬)।অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ১ জুলাই স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও স্থানীয় অভিভাবকদের এক জরুরী সভা অনষ্ঠিত হয়। সভায় মোঃ নুরুল হক মিয়াকে আহবায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি শিক্ষকের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের সত্যতা পান। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে তাকে স্বীয় পদ থেকে পদত্যাগ করে স্কুল ত্যাগ করার জন্য সুপারিশ করেন। পরবর্তি  ম্যানেজিং কমিটির সভায় তদন্ত রির্পোট অনুমোদন করে শিক্ষক নিত্যনন্দ করকে ৭ জুলাইর মধ্যে পদত্যাগ করতে বলা হয়।

এ সিদ্ধান্ত মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের মহা পরিচালক , বরিশাল জেলা শিক্ষা অফিসার, গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়ার জন্য পাঠানো হয়। হোসনাবাদ বন্দরের ব্যাবসায়ী মোঃ আব্দুস সালাম জানান, গত জুলাই মাসে শিক্ষক নিত্যনন্দ কর তার বাসায় অসামাজিক কার্যকলাপের সময় ধরা পরে। স্থানীয় লোকজন তাকে আটক করে সামাজিকভাবে বিচার করেছে। অভিভাবক হোসনাবাদ গ্রামের মোঃ বাবুল কবিরাজ ,মোঃ সেরজান আলী, মোঃ আব্দুস সাত্তার অভিযোগ করেন, শিক্ষক নিত্যনন্দ কর শুধু ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ানের কথা বলে ও প্রাকটিক্যাল করার জন্য বাসায় নিয়ে যৌন নিপীড়রন চালায়। এ ছাড়া সে ছাত্রীদের নোট দেয়ার কথা বলে ও গরীব ছাত্রীদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়। অনেকেই বিষয়টি সামাজিক মান মর্যদার দিকে তাকিয়ে মূখ খোলেন না। পূর্ব হোসনাবাদ গ্রামের মোঃ রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তার স্ত্রী সালমা বেগমকে চাকুরী দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বরিশাল নিয়ে একটি নার্সিং হোমে ভর্তি হয়ে রাত কাটানোর কু প্রস্তাব দেয়। পরে সালমা বিষয়টি স্কুল কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।

এমনকি নীপিড়নের ভয়ে অনেক ছাত্রী স্কুল ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। যৌন নীপিড়ন ও অসাদাচরনের বিষয়টি মান সম্মানের ভয়ে অনেক ছাত্রীই কারো কাছে মুখ খুলতো না। এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ ছাত্রীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও বহিস্কারের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে একাধিকবার বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এত ঘটনার পরেও কেন শিক্ষকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি তা রহস্যজনক। তিনি কি করে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। অভিযোগের ব্যাপারে নিত্যনন্দ করের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়েছে। তিনি নিজেকে একজন দক্ষ শিক্ষক দাবি করে আরও বলেন আমার বিরুদ্ধে ষরযন্ত্র করা হয়েছে।

পূর্ব হোসনাবাদ এস.কে.এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের  প্রধান শিক্ষক এম.এ.জি ওসমানির কাছে এ প্রসংগে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিনিয়র শিক্ষক নিত্যনন্দ করের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের বহু লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও তদন্ত কমিটির আহবায়ক মোঃ নুরুল হক বলেন, শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। তাকে অপসারনের সিদ্ধান্ত নেয়া সত্বেও ক্ষমতাশীন দলের আশ্রয়ে থেকে ও প্রভাব খাটিয়ে ওই শিক্ষক স্বপদে বহাল রয়েছেন।  উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সহিদুল ইসলাম অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমি যোগদানের পর অভিযোগের কথা শুনেছি কিন্তু গত (২৬ আগস্ট) অভিযুক্ত শিক্ষকের  বিচার ও ব্যাবস্থা গ্রহনের দাবিতে অভিভাবকরা আমার কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন।