ওরা পারে, তবে আমরা কেন নয়? – সিসিপাস

অদৃশ্য সে সীমারেখাকে পাশ কাটিয়ে একে অন্যের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। সেই হাত বাড়ানোর ছোট এক হলিউডীয় কাহিনী নিয়েই চরম ব্যাস্ততার মাঝেই সামান্য এ পোষ্ট।

ইহুদী-নাসারা বা হিন্দু-মালাউন এ শব্দজটের মাঝেই বাংলাদেশী মুসলিম সমাজে আমার বেড়ে উঠা। কথায় কথায় কল্লা নামানো, বেপর্দা পশ্চিমা নারীদের পতিতা-কথন বা বেলেল্লা চলাফেরা এসবই শুনতাম তুলনামূলক ধর্মীয় আলোচনাগুলোতে। পড়ালেখা করা আলেমগণও জুময়ার নামাজের বাংলা খুতবায় সুরে সুরে বয়ান করতেন অনেক ১৮+ কথা-বার্তা; যার সারমর্ম হলো “ওরা ভ্রষ্ট, ওরা খারাপ”। বিশেষণ ব্যাবহারে উনারা বরাবরই যথেষ্ট কৃচ্ছতা সাধণ করতেন; তিন-চারটার বেশী বিশেষণের খরচ দেখিনি সেসব খুতবায় কখনও। মিডিয়ামুখী মুফতি-শায়খুলগণও আজীবনই পশ্চিমা সমাজ ও নারীদের নিয়ে শুনিয়ে যাচ্ছেন তাদের ব্যক্তিস্বত্তায় ধারণ করা সঙ্কীর্ণমনা “তথাকথিত” ধর্মীয় দৃষ্টীভঙ্গী–ওরা কাফের, মুশরিক, বেলেল্লা বা বেহায়া।

এই পশ্চিমা নারীরই একজন “অ্যাঞ্জেলিনা জলি” যিনি এ যাবতকালে একাধিক চলচিত্রে কাপড়-চোপড় খুলে (কাপড়-চোপড় খুলবার দৃশ্য দেখবার ইচ্ছা থাকলে ইউটিউবে ঢু মারুন) অনেকটা দাপটের সঙ্গেই কামিয়ে নিয়েছেন মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার; সম্ভবত আমাদের ‘ফতোয়া’ মতে হারাম দেহ-বিক্রীত সে সব উপার্জিত পয়সা। কিন্তু এই হারাম পয়সার নাসারা-নারীই যদি আমাদের মুসলমানদের ঈমানী-তাকত রক্ষার্থে লাখ-ডলারের সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসে তবে সে সম্পর্কিত ফতোয়া কি হতে পারে, বা সে সময় ওই নাসারা-নারীর পতিতা-কথন বা বেলেল্লা আচরণের মুফতি-শায়খুলীয় বর্ণণা কি হতে পারে তা আমার আজও অজানা। 

পাকিস্থানের সাম্প্রতীক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্যার্থে অ্যাঞ্জেলিনা জলি ইতমধ্যেই দিয়েছেন লাখ-ডলারের সাহায্য (অবশ্যই তা কাপড়-চোপড় খুলে অভিনয় করা ইহুদী-নাসারা পয়সা); হয়তো জলির অঢেল অর্থ, ঢালবার জায়গা নেই তাই দিয়েছে সামান্য কিছু। আমরা মুসলিমরাও এরকম অনেক অর্থ দিয়ে বিভিন্ন দেশের দূর্গতদের সাহায্য করেছি অতীতে (দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া—যেমন ১৯৭০ এর প্রলয়ংকারী ঘূর্নিঝড় পরবর্তী অবস্থা) এবং এখনও করছি। তবে অর্থদানের পাশাপাশি নীচের ছবি গুলো কি আমরা ‘তথাকথিত’ ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা কখনও তৈরী করবার সামর্থ্য রাখি? হলিউডের এ “অর্ধ-নগ্ন” অভিনেত্রী ভালই তার অভিনয়ের জাত চিনিয়েছেন, দূর্দান্ত অভিনয়ে আমার মতন মুসলমানদের পটীয়ে চরম ব্যাস্ততার মাঝ থেকেও ব্লগীয় প্যাচাল পারবার জন্য টেবিল থেকে তুলে এনেছেন! আসলেই কি ছবিগুলো আলাদা কোন কিছু তুলে ধরে? হয়তো। ইহুদী-নাসারা-মালাউনেরা যেখানে সারাদিন ব্যয় করে আমাদের মুসলমানদের ঈমানী-চিত্তে ফাঁটল ধরাতে, সেখানে তাদেরই এক হলিউডীয় প্রতিনিধির এহেন মানবতামুখী পিরিত হয়তো সত্যিই দূরভিসন্ধিমূলক; সম্ভবত ঈমান ধ্বংসের এ এক নতুন পাঁয়তারা।

        

সে যাই হোক, এই ‘অর্ধ-নগ্ন নাসারা’ নারীই কিন্তু পাকিস্থানের বন্যাদুর্গতদের কাছে ত্রাণ পৌছে দিতে গিয়েও স্মরণ রেখেছেন সে সমাজের প্রচলিত ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ। তাইতো তাকে দেখা যায় কখনো বোরখাবৃত হয়ে দূর্গত বৃদ্ধের হাত ধরে সমবেদনা জানাতে, কখনওবা সালোয়ার-কামিজে “গতর” ঢেকে শরণার্থী শিবিরে বাচ্চাদের সাথে খেলায় মেতে উঠতে। আচ্ছা মৃত্যু পথযাত্রী ঐ বৃদ্ধের কি পাপ হচ্ছেনা, বেগানা নারীর (যার কাজই হচ্ছে “গতর” দেখিয়ে পয়সা কামানো) হাত ধরে নিজেদের দুঃখের কিছু অংশ কমানোর সম্ভবত এক ব্যর্থ চেষ্টার জন্য? অথবা, ধর্মের ঝান্ডা নিয়ে দুনিয়ায় জিহাদের কাঁচামাল সরবরাহকারী দেশটির মুফতি-শায়খুলরাই এসব বেগানা নারীদের পুরুষদের সংস্পর্শের যাওয়া মেনে নিয়ে কেনই বা এখনও মুখে তালা মেরে চুপ বসে আছেন? ধর্মের কলটি কেনইবা এখনও সিডড়-আইলার মতন ঝড়েও নড়ে উঠছেনা!

আসলেই কি ধর্ম মানুষ কে এতটা ঘৃণা শেখাতে পারে? উত্তর খুঁজে পাইনা। ছোট ছোট দূর্গত বাচ্চাদের পাশে জলির বসে থাকা দেখে ছেলেবেলা থেকে শুনে আসা মুফতি-শায়খুলদের সকল “তথাকথিত” ধর্মীয় ব্যাখ্যা-বক্তৃতাকেই চরম অশ্লীল মনে হতে থাকে একসময়। ফিকে মনে হতে থাকে ৬০০ কোটি মানুষের মাঝে বিদ্যমান সে অদৃশ্য অথচ অনতিক্রম্য ধর্মীয় বিভেদরেখাটিকে। দুনিয়া চলে দুনিয়ার মতন, আর আমি আম-কাঁডল চলতে থাকি নিজের পথে; জোলির কেচ্ছাটি নীরব-প্রসব শেষে ফিরে যাই চলমান সে একঘেয়ে ব্যাস্ততার মাঝে,

তবুও প্রশ্ন থেকে যায় মনে- ওরা পারে, তবে আমরা কেন নয়?

     


 

Source : Udvranto.AmarBlog