হুইপের নির্দেশে রগ কাটা রোগীর চিকিৎসা বন্ধ

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন যুবদল নেতা শফিকুল ইসলাম শফির চিকিৎসা বন্ধ করে দিয়েছে কর্তব্যরত চিকিৎসক। কেবল চিকিৎসা বন্ধই নয়, শফির নাম কেটে দেয়াসহ ছাড়পত্র প্রদানের পরপরই হাসপাতাল ত্যাগের নির্দেশও দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এমতাবস্থায় শফির গোটা পরিবার এখন চরম হতাশা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

যুবদল নেতা শফিকুল ইসলাম শফির পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে শফির চলাফেরার শক্তি নেই। রগ কেটে দেয়ায় দুই পা আর হাতসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে রয়েছে ব্যান্ডেজ। সিলিং করে বাম হাত ঝোলানো গলায়। হাতুড়ি পেটায় থেঁতলানো পা আর শরীরে দগদগে ক্ষত চিহ্ন। বন্ধ স্বাভাবিক খাওয়া দাওয়া। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই মলমূত্র ত্যাগ করছে শফি। পরিবারের অভিযোগ, এমন গুরুতর অসুস্থ রোগীকে কেমন করে চিকিৎসক সুস্থ ঘোষণা করে নাম কেটে দেয় সেটা তাদের অজানা। তারা আরও জানান, চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকাল ১১টায় শফিকুলের নাম কেটে দেন অর্থোপেডিক্স বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ মুসাহিদ উদ্দিন এবং নাম কাটার পর পরই দুপুর ২টার মধ্যে ধরিয়ে দেয়া হয় ছাড়পত্র। সেই সঙ্গে হাপসাতাল ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। হাপসাতাল কর্তৃপক্ষের এমন আচারনে তারা রীতিমতো হতাশ। পরে যদিও রোগীর আত্মীয়-স্বজনের আকুতি-মিনতিতে আরও দুই দিন তাকে হাসপাতালে থাকার মৌখিক অনুমতি দেন অর্থোপেডিক্স বিভাগের সহকারী রেজিস্টার ডাঃ জাহিদুল ইসলাম। তবে এর কোনো রেকর্ড থাকবে না হাসপাতালের কাগজপত্রে। হয়তো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কোনো সহযোগিতাও পাবে না শফি।

শফিকুলের বোন কানিজ ফাতেমা জানান, কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের কোনো কথারই পাত্তা দেননি। উল্টো তাদেরকে ধমক দিয়েছেন। এরপর কয়েক ঘণ্টা ধরে চিকিৎসকদের কাছে কাকুতি-মিনতি করলে ২ দিন থাকার অনুমতি দেন সহকারী রেজিস্টার ডাঃ জাহিদুল। শফিকের ভাই আবদুল হক বলেন, শফিক এখনও নড়াচড়া করতে পারে না। পায়খানা-প্রসাব বিছানায় করে। এরকম পরিস্থিতিতে তার নাম কাটার পেছনে ক্ষমতাসীন দলের শক্তি কাজ করছে বলে তিনি জানান। তার  অভিযোগ, হুইপ আ.স.ম ফিরোজের ইশারায়ই শফিকের নাম কেটে দেয়া হয়েছে। হঠাৎ ছাড়পত্র দেয়ার কারণ জানতে ডাঃ মোসাহিদ উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 

অর্থোপেডিক্স বিভাগের সহকারী রেজিস্টার জাহিদুল ইসলাম বলেন, সার্জারি বিভাগ থেকে শফিকে তাদের কাছে পাঠানো হয়। হাত-পাসহ শরীরের কয়েকটি স্থানে হাড়ে ডিজলোকেশন ছিল। তারা সেগুলো ঠিক করে দিয়েছে। বর্তমানে তার তেমন কোনো সমস্যা নেই। সার্জারির কোনো সমস্যা আছে কি না তা তিনি বলতে পারেন না। মোসাহিদ সাহেবের সিদ্ধান্তের সাথে তার কোনো দ্বিমত নেই বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ আব্দুর রশিদ জানান, গুরুতর অসুস্থ রোগীর নাম কাটার বিষয়টি তার জানা নেই। তবে তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে উল্লেখ করেন। এদিকে হুইপ আ.স.ম ফিরোজ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে যুবদল নেতা শফিকুল ইসলাম শফিকে উদ্দেশ করে বলেন, ওরা বিএনপি করে। শফি এলাকায় চাঁদাবাজিসহ নানাবিধ অপকর্ম করে আসছিল। এজন্য এলাকার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারধর করেছে। অপকর্ম যারা করবে তাদেরকে শায়েস্তা করা তার কাজ নয়, এজন্য প্রশাসনই যথেষ্ট। শেবাচিম হাসপাতাল থেকে শফির নাম কাটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শফির নাম কাটার বিষয়টি তো একটা তুচ্ছ ব্যাপার। এত ছোট কাজের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

উল্লেখ্য, বাউফলের বগা ইউনিয়নের শাফলাখালী গ্রামের কালু মৃধার ছেলে ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম-সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিকে গত ৩০ অক্টোবর বিকেলে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোতালেব হাওলাদারের নির্দেশে তার কতিপয় অনুসারীরা বাড়ির সামনে থেকে ধরে নিয়ে হালিম মোল্লা নামের এক ব্যক্তির ঘরের মধ্যে আটকে রেখে কুপিয়ে ও পিটিয়ে ডান হাত ও দু’ পায়ের রগ কেটে দেয়। এছাড়া হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তার পাসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ থেঁতলে দেয়। খবর পেয়ে ওইদিন রাত ৯টায় বাউফল থানা পুলিশ হালিম মোল্লার ঘর থেকে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করে বাউফল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে।