জম দুয়ারে দিয়া কাঁটা-ভাইকে দিলাম বোনের ফোঁটা

নিম তিতা-দূর্বার মতো আয়ূ পাইও-বছরের দ্বিতীয়ায় ফোঁটা লইও” এভাবেই নানা ছড়ার মাঝে বড় বোন যখন ছোট ভাইয়ের কিংবা ছোট বোন যখন বড় ভাইয়ের কপালে একটি সুন্দর ফোঁটা দেয়, বড় বোন হলে ছোট ভাই তাকে প্রণাম করে তার আর্শীবাদ নিয়ে থাকে। ছোট বোন হলে বড় ভাইও তাকে আর্শীবাদ করে থাকেন। এছাড়া ভাইদের জন্য বোনদের নানা পুরস্কারতো রয়েছেই। ভাই ফোঁটা হিন্দু সম্প্রদায়ের সব ঘরে পালিত হয় না। কালী পূজার পরে প্রতিপদ ও দ্বিতীয়ায় ভাই ফোঁটা শুরু হয়। গত রবিবার (৭ নবেম্বর) রাতে বরিশালের গৌরনদী উপজেলার অধিকাংশ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে পারিবারিক ভাবে এ ভাই ফোঁটার উৎসব পালিত হয়েছে।

রবিবার রাতে গৌরনদী পৌর সদরের দক্ষিণ পালরদী গ্রামের সরকার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, পারিবারিক ভাবে ভাই ফোঁটা উৎসব পালনের লক্ষে সরকার বাড়িসহ ওই পাড়ার প্রায় প্রত্যেকটি হিন্দু পরিবার ভাই ফোঁটা উপলক্ষে পারিবারিক ভাবে নানা উৎসবের আয়োজন করেছেন। সরকার বাড়ির এক ব্যবসায়ীর বড়পুত্র কৌশিক সরকার শোভনকে তার ছোট বোন সঞ্চিতা সরকার ভাই ফোঁটা দিয়েছে। এসময় বড় ভাই শোভন তার ছোট বোনকে আর্শীবাদ করেন। ভাই ফোঁটা উপলক্ষে সরকার বাড়িতে নিকট আত্মীয়দেরও নিমন্ত্রন করা হয়েছিলো। পারিবারিক এ অনুষ্ঠানটিতে কোন ধর্মীয় স্লোক বা ধর্মীয় আবারন নেই। সম্পূর্ণ অনুষ্ঠানটি ভাইদের প্রতি বোনদের ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। ভাই ফোঁটার আবেদনে ভাইয়ের প্রতি বোনদের আন্তরিত ভালবাসার পূর্ণতা লাভ করে।

দেশের বিভিন্ন জেলায় এ ভাই ফোঁটা উৎসবটি পালন করা হয়। কোথাও কোথাও ভাই ফোঁটার ছড়াগুলোর ভিন্নতা থাকলেও এর মূলসুর হচ্ছে ভাইদের রক্ষায় বোনদের আকাঙ্খার প্রতিফলন। ভাই ফোঁটা উপলক্ষে দূরদূরান্ত থেকে ভাইয়েরা কিংবা বোনেরা  এসে তাদের ভাইদের ফোঁটা দিয়ে আর্শীবাদ করে থাকে। ভাই ফোঁটার অনুষ্ঠানটি সম্পূর্ণ পারিবারিক সৌহাদ্য ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ভাইয়ের সকল বাঁধা বিঘœ কেটে যাক, ভাইয়ের জন্য বোনেরা যতদূত (মৃত্যু)’র দুয়ারে কাঁটা বিছিয়ে ভাইদের জন্য সাফল্য কামনা করেন। ঘরে ঘরে ভাইদের রক্ষায় বোনদের এই আকুল কামনা, এই সুন্দর পারিবারিক প্রথার মধ্যে এমন ভাবে গেঁথে আছে যা ভাই ফোঁটা প্রথাটিকে যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রেখেছে।