স্থানীয় প্রেসক্লাব ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তার ভাড়াটে লোক দিয়ে মিথ্যা মামলা করার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন বলে স্থানীয় সাংবাদিকরা অভিযোগ করেছেন। যাদের নিয়ে ওই কর্মকর্তা সাংবাদিক দমনের মিশন শুরু করেছেন তাদের মধ্য থেকে দ’ুজন এ ঘটনা স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে ফাঁস করে দেয়। এ ঘটনায় নলছিটি প্রেসক্লাবের সকল সাংবাদিকরা ইউএনওর দুর্নীতি ছাড়া সকল সংবাদ বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
নলছিটি প্রেসক্লাবের সদস্যরা অভিযোগ করেন, উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪০ জন শিক্ষকের টাইমস্কেল প্রদানে শিক্ষক প্রতি এক হাজার টাকা ঘুষ দাবির অভিযোগ সংক্রান্ত একটি সংবাদ গত মে মাসে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হলে শুরু হয় নলছিটি ইউএনও’র সাংবাদিক দমনের নানা ষড়যন্ত্র। নলছিটি প্রেসক্লাবের কয়েকজন সদস্যকে ডেকে নিয়ে পাল্টা সংগঠন করার পরামর্শ দেন ওই কর্মকর্তা। প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের মধ্যে অনৈক্যে সৃষ্টির মিশনে ব্যর্থ হয়ে তিনি কয়েক সহযোগীকে অফিস কক্ষে ডেকে একাধিকবার বৈঠক করেন । সেখানে প্রেসক্লাব সভাপতি এনায়েত করিমের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়ার জন্য প্রস্তাব এবং মামলার খরচের অর্থ যোগানের আশ্বাস দেন তিনি। যাদেরকে এ পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল তাদের মধ্যের দু’জন প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের কাছে এ ষড়যন্ত্র ফাঁস করে দেন । বর্তমানে তিনি প্রেসক্লাবের বিকল্প সংগঠন করার জন্য গোলাম মোস্তফা ফিরোজ নামের এক আওয়ামীলীগ নেতাকে ব্যবহার করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ওই নেতা নিজেকে সাংবাদিক দাবী করে সম্প্রতি ইউএনওর এ মিশন নিয়ে কাজ করছেন। তবে এতে কোন সাঁড়া মেলেনি। এ রিপোর্ট পেয়ে ইউএনও আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি সাংবাদিকদের দমনে মরিয়া হয়ে নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছেন।
এব্যাপারে নলছিটি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এইচএম আখতারুজ্জামান বাচ্চু সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউএনও আমাকে পাল্টা সংগঠন দাঁড় করিয়ে তার সভাপতি হওয়ার জন্য বলেছেন। আমি তাঁর এ প্রস্তাবে রাজি হইনি।’ সহ-সভাপতি ইউসুফ আলী তালুকদার বলেন, ‘আমাকে ইউএনও সঞ্জয় চক্রবর্তী তাঁর অফিসে ডেকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জের ধরে নলছিটি প্রেসক্লাব ও সভাপতির বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করতে চেয়েছেন। আমি তাঁর এ ধরণের ষড়যন্ত্রের তীব্র প্রতিবাদ করেছি ।
তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, নলছিটিতে যোগদানের পর থেকে ইউএনও সঞ্জয় চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। জনপ্রতিনিধিসহ ভুক্তভোগীরা তাঁর অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন। তথ্য অনুসন্ধান শুরু হলে তিনি এ ঘটনায় সংবাদ প্রকাশের আঁচ করেন। তিনি তার দূর্নীতির সংবাদ ঠেকাতে প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে এবং সাংবাদিকদের দমনে নানা ষড়যন্ত্র শুরু করেন। এ ঘটনায় নলছিটি প্রেসক্লাবের সাংবাদিকদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে গত সোমবার নলছিটি প্রেসক্লাবে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ইউএনও কর্তৃক স্বাধীন সাংবাদিকতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, প্রেসক্লাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলার পাঁয়তারা চালানোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ওই কর্মকর্তার দুর্নীতি ছাড়া সকল সংবাদ বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। ওই কর্মকর্তার এ ধরণের কর্মকান্ড জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সচিবসহ সংশ্লি¬ষ্ট সকল দপ্তরকে লিখিতভাবে জানানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বরিশাল ও ঝালকাঠি প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাঁর এ ধরণের ষড়যন্ত্র বন্ধ না হলে পরবর্তীতে জনগণকে সম্পৃক্ত করে ‘নতুন কর্মসূচি ’ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নলছিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. এনায়েত করিম সাংবাদিকদের জানান, ‘একটি সংবাদ প্রকাশের জের ধরে এবং ভবিষ্যতে তার দূর্নীতির সংবাদ প্রকাশে বাঁধার সৃষ্টি করতেই সাংবাদিকদের দমাতে প্রেসক্লাব ও আমার বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করছেন ইউএনও। বিষয়টি আমি ঝালকাঠির জেলা প্রশাসক ও নলছিটি উপজেলা চেয়ারম্যানকে মৌখিকভাবে জানিয়েছি।’
এব্যাপারে নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, ‘গোলাম মোস্তফা ফিরোজ নামে আমি কোন সাংবাদিককে চিনি না। পাল্টা সংগঠন করার পরামর্শ দেওয়া কোন প্রশ্নই আসে না। ওনারা (সাংবাদিক) চাঁদাবাজী করে, জমি দখল করে আছেন, এটা ছেড়ে দিতে বলায় বিভিন্ন কথা বলা হচ্ছে।’