জহুরুল হক হত্যা মামলার আসামী কে সেই মিলন

হাজতবাস সহ কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছে এক মিলনকে। পুলিশের দেয়া ভুল চার্জশীটের বিচারের রায়ের ভয়ে পরিবার ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে কথিত আসামী মিলন। সম্প্রতি চাঞ্চল্যকর কীর্ত্তিপাশার  পাঞ্জিপুথি পাড়ার জহুরুল হক হত্যা মামলার রায়ে তৎকালীন পুলিশ সুপার ও তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালত আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার রায়ে পুলিশের দায়িত্বহীনতায় হত্যা মামলাটির বিচার সম্পন্ন করতে না পারার কারনে আদালত পুলিশের আইজি ও বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি বরাবরে চাকরি বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পাঠানো হয়েছে। পক্ষান্তরে পুলিশ কর্তৃক দাখিলকৃত চার্জশীটভুক্ত আসামী মিলনের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমানিত না হওয়ায় তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে। ঝালকাঠির অতিরিক্ত দায়রা ও জজ আদালতের বিচারক মো: সিদ্দিকুল আরেফিন চৌধুরী সম্প্রতি এ আদেশ দেন।

মামলা সুত্রে প্রকাশ, ২০০৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জহুরুল হক বাউকাঠি বাজার এলাকা থেকে বাড়ি যাবার পথে বাউকাঠি হাট সমিতির সভাপতি  আতাহার তালুকদারের পুত্র মিলন তালুকদার ও তার সঙ্গীরা গুলি করে তাকে  হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহতের ভাই মো: আব্দুস ছালাম ২রা অক্টোবর বাদী হয়ে ঝালকাঠি সদর থানায় এজাহার দায়ের করে। পুলিশ মামলাটি (জিআর ২১৬/০৫) রেকর্ড করে তদন্তে মাঠে নামে। সদর থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক আনিছুর রহমান দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে গোয়ালকান্দা গ্রামের আলাউদ্দিন ওরফে আলমগীরের পুত্র মিলনকে আসামী করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা বলে পুলিশ আসামী মিলনকে আদালতে সোপর্দ করে।

আদালতের বিচারক (সেশন মামলা নং ২৭/২০০৬) এজাহারকারী বাদীসহ ৮ জন স্বাক্ষির স্বাক্ষ্য গ্রহন করেন এবং স্বাক্ষি তদন্তকারী কর্মকর্তা আনিছুর রহমানের অকাল মৃত্যুর ফলে তার স্বাক্ষ্য গ্রহন সম্ভব হয়নি। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক আদেশে উল্লেখ করেন যে, পুলিশ আসল আসামী তথা এজাহারভূক্ত আসামীকে আদালতে সোপর্দ না করিয়া তদস্থলে চার্জশীটভূক্ত আসামীকে গ্রেপ্তারপূর্বক আদালতে সোপর্দ করায় আদালতের বিচারে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ পুলিশ আসল আসামী পাঞ্জিপুঁথি পাড়া গ্রামের আতাহার তালুকদারের পুত্র  মিলন তালুকদার এর স্থলে তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়ালকান্দা গ্রামের আলাউদ্দিন ওরফে আলমগীর হাওলাদার এর পুত্র মিলনকে হত্যাকারী হিসেবে গ্রেপ্তার করে বিচারের জন্য আদালতে সোপর্দ করেন। বিচারক আরও উল্লেখ করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্তের সময় সঠিকভাবে ন্যায় নিষ্ঠার সাথে হত্যাকান্ডের তদন্ত না করিয়া বরং দায়সারা তদন্ত করিয়া ত্রুটিপূর্ন ভিন্ন ব্যক্তির নামে অভিযোগ দাখিল করিয়াছেন। পরিণতিতে এরুপ ত্র“টিপূর্ণ তদন্ত প্রতিবেদন দ্বারা আসল আসামীকে এড়াইয়া নিরাপরাধ ব্যক্তিকে চরম শাস্তি দেওয়া হইলে ন্যায় বিচারের পরিপন্থি হইবে বলিয়া আদালত মনে করেন। গত ১৯ জুন এ চাঞ্চল্যকর মামলাটিতে রায় ঘোষনা করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত পিপি এ্যাড. এম আলম খান কামাল ও আসামী পক্ষে এ্যাড. আলামিন পলাশ মামলা পরিচালনা করেন।

একটি সূত্র জানিয়েছে, মিলনের বিরুদ্ধে এলাকায় নানা অভিযোগ রয়েছে। প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা। প্রশাসনের প্রতি এলাকাবাসি তদন্তের দাবী করে মিলন তালুকদারের নানা কুকৃতি উদঘাটনের দাবী জানিয়েছেন।