হরতাল এখন মিডিয়া নির্ভর

দুপুর ১২টায় শেষ হওয়া ইসলামী দলগুলোর হরতালেও  তা পরিষ্কার হয়ে গেছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি কিংবা তাদের রাজনৈতিক মিত্র জামাত বা ৪ দলের ডাকা হরতালেও এ বিষয়টি ষ্পষ্ট।

গতকাল সোমবারসহ ইতিপূর্বে অনুষ্ঠিত সবকটি হরতালে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন রাজপথ ঘুরে কোথাও হরতালকারীদের পিকেটিং বা অস্তিত্ব চোঁখে পড়েনি। কিন্তু সংবাদপত্রের পাতায় প্রকাশিত ছবি ও টেলিভিশণ চ্যানেলগুলোতে প্রদর্শিত ফুটেজে হরতালকারীদের অস্তিত্ব বহাল তবিয়তেই রয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। মিডিয়ার এসব সংবাদ ও ছবি যারা দেখেছেন তাদের কাছে সফল হরতালের একটি স্বচ্ছ চিত্র ফুটে ওঠেছে। কিন্ত বাস্তবতা ছিলো ভিন্ন।

সচরাচর হরতালের যে চিত্র জনমনে রয়েছে, সেখানে হরতাল মানে গাড়ীর চাকা ঘুরবেনা, দোকানপাট খুলবেনা। রাস্তায় থাকবে পিকেটাররা, তারা পিকেটিংয়ের পাশাপাশি মিছিল ও সমাবেশ করবে। কিন্তু গত কয়েকটি হরতালে ঢাকার রাজপথে গাড়ী যেমন চলেছে, তেমনি তুলনামূলকভাবে দোকানপাটও খোলা ছিলো, রাস্তায় ছিলোনা কোনো পিকেটাররা। পিকেটিং ও মিছিলতো দুরের কথা। কিন্তু মিডিয়ার ফুটেজে পিকেটারদের মিছিল সমাবেশ ও পিকেটিংয়ের চিত্র সুন্দরভাবে ফুটে ওঠেছে। পুলিশের সঙ্গে তাদের যুদ্ধের ছবিও এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হরতালে পুলিশের ব্যাপক একশনের কারণে হরতাল আহ্বানকারী রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতাকর্মী হরতালে নিজেদের অবস্থান দলের ও দেশবাসীর কাছে তুলে ধরার জন্য প্রিণ্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার কতিপয় রিপোর্টার ও ক্যামেরাপারসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের ফুটেজ নেয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট স্পটে আসার আহ্বান জানান। এসব রিপোর্টার ও ক্যামেরা পারসনরা স্পটে গেলেই দুএক মিনিটের জন্য একটি মিছিল করে তারা সটকে পড়েন। এমনও শোনা যায়, দুএক মিনিটের এ মিছিল করার জন্য পুলিশের সঙ্গে তাদের সমঝোতাও হয়। আঁতাত করেই মিছিলে পুলিশের আক্রমনের দৃশ্যও ধারন করা হয়। মিডিয়া কর্মীদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলের নেতাদের এ পাতানো খেলার কথা অবলীলায় স্বীকার করেন কোনো কোনো মিডিয়াকর্মী। একজনের ধারন করা ফুটেজ কপি করে অন্যদের সরবরাহের কথা ও জানান তারা।

হরতাল মানেই কয়েকদিনের ধারাবাহিক মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচারনা, দেয়ালে পোষ্টার লাগানো, লিফলেট বিতরন, পাড়া মহল্লায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সমাবেশ ও মিছিল করে হরতালের খবর জনগনকে অবহিত ও সম্পৃক্ত করার এ সংষ্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে দেশের রাজনীতি ও হরতাল এখন সম্পূর্ণ মিডিয়া নির্ভর হয়ে পরেছে। যারাই হরতাল আহ্বান করেন তাদের ভরসাই এখন মিডিয়া।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, মাইকিং করতে নামালে পুলিশ মাইকসহ প্রচারককেও ধরে নিয়ে যায়। মহল্লায় মিছিল সমাবেশ করলে হামলা করে ভেঙ্গে দেয়, নেতাকর্মীদের নাজেহাল করে নির্যাতন করে গ্রেপ্তার করে। পিকেটিং করতে নামলে পুলিশের বর্বরতা তো আপনারা নিজেরাই দেখেন। তবে তিনি বলেন, গত ২৮ বছরে বিএনপি হরতাল পালনের জন্য কোনো পোষ্টার করেনি। তবে বাম দলগুলো করেছে। তিনি বলেন, হরতাল পালনের জন্য আমরা এখনও লিফলেট বিতরন করি।

নিজে হরতাল ঘোষণা করলেও হরতালের বিপক্ষে নিজের অবস্থানের কথা অকপটে স্বীকার করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ৬ জুলাই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তার কক্ষে কেন্দ্রীয় নেতা ও সাংবাদিকদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় তিনি তার এ অভিমত জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, হরতাল করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করার চাইতে রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত টেলিভিশণ চ্যানেলগুলোর নিকট থেকে শ্লট ভাড়া নিয়ে নিজেদের বক্তব্য জাতির সামনে তুলে ধরা। এতে একটি নির্দিষ্ট এলাকার লোকজনই নয় দেশবাসীর পাশাপাশি বহিঃবিশ্বের লোকজনও জানতে পারবে।

ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এ অভিমত ব্যক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে উপস্থিত ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুস সালাম মন্তব্য করেন কোনো টেলিভিশন চ্যালেন সরকার বিরোধী বক্তব্য প্রচারের জন্য শ্লট ভাড়া দিতে রাজি হবেনা। যদি কেই রাজি হয় সরকার তা প্রচার করতে দিবেনা। আব্দুস সালামের এ মন্তব্যের সঙ্গে একমত পোষন করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিবও।

তাদের এ মন্তব্যে মির্জা ফখরুলের তাৎক্ষনিক জবাব, ঢাকা শহরের রাস্তায় জানজটের যে অবস্থা তাতে রাস্তায় কোনো কর্মসূচি না করে টেলিভিশনেই করা উচিত। সরকারের ও উচিত সমালোচনা সহ্য করার মতো মানষিকতা পোষন করা। তার মতে রাজপথ নয় রাজনৈতিক কর্মসূচি মিডিয়া নির্ভর হওয়া উচিত।