বন্যা মোকাবেলায় আট দফা সুপারিশ আজও ফাইল বন্দি

মোকাবেলায় ৮ দফা সুপারিশ  আজও বাস্তবায়িত হয়নি। এসব উপজেলার কৃষক ও মৎস্যজীবিদের ভাগ্য দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনার সুপারিশের ফাইল আজো বন্দি রয়েছে। ফলে এবারো আগাম বন্যার আশংকা করছেন সচেতন মহল। বর্ষার পানিতে ইতোমধ্যে এসব উপজেলার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কৃত্রিম বন্যায় রূপ নিয়েছে। এসব উপজেলার নিন্মাঞ্চলের রোপা আমন ধান, সবজি ক্ষেত, পানের বরজ, মৎস্য ঘের তলিয়ে কৃষদের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে।

সূত্রমতে, স্থায়ী বন্যা মোকাবেলায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ২০০৭ সনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৮ দফা সুপারিশ প্রেরন করা হয়েছিলো তৎকালীন তত্বাবধায়ক সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক, গৃহায়ন গণপুর্ত, ভূমি এবং তথ্য মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন এবং সাবেক প্রধান উপদেষ্টার পরামর্শক মৎস ও পশুসম্পদ, বিজ্ঞান এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মানিক লাল সমদ্দার কাছে।

গত ৫ বছরে এসব উপজেলার বন্যা মোকাবেলার ফাইলটি বন্দি রয়ে গেছে। এ প্রকল্পের ব্যপারে কোন কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করেনি সরকারের সংশ্লি¬ষ্ট বিভাগ। আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাবুল ভাট্টি জানান, মাদারীপুর ও ফরিদপুর থেকে নেমে আসা উজানের পানি দ্রুত অপসারণ না হওয়া ও বর্ষা মৌসুমে নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে কৃত্রিম বন্যায় রূপান্তরিত হওয়াসহ শুস্ক মৌসুমে চাষাবাদে জন্য পানির অভাবের কথা উল্লেখ করে ২০০৭ সনের ১৩ আগষ্ট বরিশাল জেলা পরিষদ ডাকবাংলোর সম্মেলন কক্ষে সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার মাইনুল হোসেনের কাছে আট দফা সুপারিশ সমূহ প্রেরন করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে ওই বছরের ১০মার্চ দ্বিতীয় দফার তৎকালীর তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ উপদেষ্টা মানিক লাল সমদ্দারের কাছে অনুরূপ সুপারিশের কপি দেয়া হয়। তিনি আরো জানান, সুপারিশের ভিত্তিতে ওই সময় জেলা প্রশাসক মঞ্জুর-ই-এলাহী ও জেলা যৌথ বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ আলী আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্নস্থান পরিদর্শন শেষে সুপারিশগুলোর সত্যতা পেয়ে দ্রুত বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন। প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষে উপজেলা এলজিইডি বিভাগ জেলা প্রকৌশল বিভাগকে বিভিন্ন স্থানে কালভার্ট স্লুইচগেট নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইসহ প্রজেক্ট প্রোপোজালের মানচিত্র প্রেরণ করেছিল। রহস্যজনক কারনে ওইসব সুপারিশ ও কাগজপত্র এখনো ফাইলবন্দিই রয়ে গেছে। ভূক্তভোগীরা সুপারিশগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

তিন উপজেলার বন্যা মোকাবেলার সুপারিশগুলো ছিল-বাকাল থেকে রাজিহার-মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে ১ নং ব্রীজ সংলগ্ন খালের মুখ উন্মুক্ত করে নৌ-চলাচলের সুবিধাসহ ব্রীজ নির্মাণ। ২. বাকাল-রাজিহার-মাগুরা বেরিবাঁধের রাজিহার ব্রীজ সংলগ্ন রাজিহার খালের মুখ উন্মুক্ত করে নৌ-চলাচলের সুবিধাসহ একটি ব্রীজ নির্মাণ। ৩. বাশাইল-মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের মাঝামাঝি স্থানে একটি বড় কালভার্ট নির্মাণ। ৪. পয়সারহাট-ত্রিমূখী বাজারের সুবিধাজনক স্থানে ৮-১০ দরজা বিশিষ্ট স্লুইজ গেট নির্মাণ। ৫. পয়সারহাট-কালুরপাড়-রত্নপুর বেরীবাঁধের রামের বাজার খালের মুখে স্লুইজ গেট অথবা ব্রীজ নির্মাণ। ৬. পয়সারহাট-কালুপাড়-রত্নপুর বেরীবাঁধে কাঠিরা খালের মুখে কালভার্ট নির্মাণ। ৭. পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক গোপালগঞ্জের রামশীল স্লুইজ গেট, ছয়গ্রাম (মিশ্রীপাড়া) স্লুইজ গেটসহ ইনলেট, আউটলেটগুলো জরুরী ভিত্তিতে সংস্কার। ৮. উপজেলার বিভিন্নখাল বিশেষত যে সকল খালের মুখে বাঁধ রয়েছে এবং ব্রীজ নির্মাণের সুপারিশ করা হয়েছে সে খালগুলো পুণঃ খনন করা। উল্লেখিত সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হলেই বন্যার কবল থেকে রেহাই পাবে আগৈলঝাড়া, উজিরপুর ও গৌরনদী উপজেলাবাসী।