গৌরনদীর ৩০ টি স্পটে ধনীর দুলালীদের বাবার ঘাঁটি

নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ বরিশালের গৌরনদী উপজেলার পাশ্ববর্তী আগৈলঝাড়া, উজিরপুর ও কালকিনি উপজেলার ধনীর দুলালীদের বাবার ঘাঁটি গৌরনদীর ৩০ টি স্পটে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে মরন নেশা ইয়াবা (স্থানীয় ভাষায় বাবা)-সহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। মাদক সেবীরা স্পটগুলোতে হাত বাড়ালে সহজেই মিলে যাচ্ছে এসব মাদক দ্রব্য। আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা মাঝে মধ্যে ঝটিকা অভিযান চালিয়ে মাদক দ্রব্যসহ ক্রেতা-বিক্রেতাদের গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরন করার কয়েক ঘন্টা পরেই আইনের ফাঁকফোঁকর দিয়ে তারা (ক্রেতা-বিক্রেতারা) সহজেই বেড়িয়ে পূর্ণরায় এ ব্যবসার চালিয়ে যাচ্ছে। তাই মদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইন প্রয়োগ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গৌরনদীতে মদ্যপানে গত ১৪ সেপ্টেম্বর এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে মাদারীপুরের ডিবি পুলিশ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান ইয়াবাসহ গ্রেফতার করেছে গৌরনদীর বেজগাতি গ্রামের ইয়াবা সম্রাজ্ঞী ঝুমা বেগমকে। এরপূর্বে গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ নুরুর ইসলাম-পিপিএম বিভিন্নসময় অভিযান চালিয়ে ¯প্রীট বোর্ড বোঝাই ফেনসিডিল ও মটরসাইকেলে ফেনসিডিল পাচারের সময় ও গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে উপজেলার বিভিন্নস্থান থেকে বিপুল পরিমান মাদকদ্রব্যসহ প্রায় অর্ধশত মাদক বিক্রেতাদের গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃতদের বরিশাল আদালতে পাঠানোর কিছু সময় পরেই তারা (মাদকদ্রব্য আমদানিকারী ও বিক্রেতারা) জামিনে বেরিয়ে যাচ্ছে।

সূত্রে আরো জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার দক্ষিন পালরদী, ভূরঘাটা, ইল্লা, বার্থী, কটকস্থল, গৌরনদী ও টরকী বাসষ্ট্যান্ড, গৌরনদী ও টরকী বন্দর, টরকীরচর, কসবা, দক্ষিণ বিজয়পুর, মাহিলাড়া, বাটাজোর, বিল্লগ্রাম, চন্দ্রহার, নলচিড়া, সরিকল, পিঙ্গলাকাঠি, সাকোকাঠী, শাহজিরা, ঘোষেরহাট, হোসনাবাদ, দোনারকান্দি, ধানডোবা, রামসিদ্ধিসহ উপজেলার ৩০ টি স্পটে মরন নেশা ইয়াবা, প্যাথেডিন, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ মাদকদ্রব্য দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। সূত্রটি আরো জানিয়েছে, উপজেলার ৪/৫ জন মাদক সম্রাট সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে মাদক দ্রব্য আমদানী করে পাইকারী দামে উপজেলার ওইসব মাদক বিক্রির স্পটে সরবরাহ করে আসছে। ইয়াবাএদের সাথে রয়েছে একাধিক মাদক সম্রাজ্ঞী (মহিলা সদস্যরা)। প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় প্রত্যেক স্পটের খুচরা মাদক বিক্রেতারা দাপটের সাথে স্পট গুলোতে মদ, গাঁজা, প্যাথেডিন, ফেনসিডিল ও ইয়াবা (বাবা) সহ মাদক দ্রব্যের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মাদক সেবীরা স্পটগুলোতে হাত বাড়ালেই মাদক কিনতে পারছে। ফলে এখানে মাদক সেবীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় যুব সমাজ মাদক সেবন করে দিন দিন নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে।

এ ব্যাপারে গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ নুরুল ইসলাম-পিপিএম’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে ইতোমধ্যে বিপুল পরিমান মাদকদ্রব্য উদ্ধারসহ প্রায় অর্ধশত মাদক আমদানিকারক ও বিক্রেতাদের গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত থেকে ওইসব বিক্রেতা ও আমদানিকারকেরা সহজেই জামিনে বেরিয়ে আসার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি আরো বলেন, আদালতে ওইসব মাদক সম্রাটদের পক্ষে কতিপয় ভাড়া করা আইনজীবিরা কিছু টাকার লোভে নিজেদের পেশার প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হয়ে শুধু পুলিশের ওপর দোষ চাপিয়ে মাদক সম্রাটদের পক্ষালম্বন করার কারনেই মাদক সম্রাটরা খুব সহজেই জামিন পেয়ে যাচ্ছেন। অথচ এতে দেশ ও জাতির অপূরনীয় ক্ষতি হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

মাদক সম্রাটদের নিমূর্ল করতে গৌরনদী উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সাধারন সম্পাদক মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, গ্রেফতারের পর শুধু আদালতের মাধ্যমে নয়, ওইসব মাদক সম্রাটদের ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজা প্রদান করলে কিছুটা হলেও মাদক সম্রাটদের নিমূর্ল করা সম্ভব হবে।