বিএনপি-জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে পারবে না -এ দেশের মাটিতেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে -শেখ হাসিনা

খোকন আহম্মেদ হীরা, কোটালীপাড়া থেকে ॥ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এ দেশের মাটিতেই হবে। বিএনপি-জামায়াত যতোই চেষ্টা করুক না কেন শেখ হাসিনাযুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। বুধবার বিকেলে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান সরকারি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখিত কথাগুলো বলেছেন।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিএনপি-জামায়াত বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাঁচাতে চেয়েছিলো। কিন্তু পারেনি। বঙ্গন্ধুর খুনিদের ফাঁসির রায় দেশের মাটিতে কার্যকর হয়েছে। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে ২ হাজার ৪শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। আওয়ামীলীগ সরকার উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরনের ব্যবস্থা করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আমাকে ১১ মাস কারাগারে রাখা হয়েছে। আমাকে বারবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। কোটালীপাড়ার এই কলেজ মাঠেও আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু মারতে পারেনি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিলো। কিন্তু আল্লাহতালার অশেষ রহমতে নেতা-কর্মীদের সহায়তায় আমি বেঁচে গেছি। প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে কোটালীপাড়া পৌঁছেন। এরপর তিনি কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ ভবনের ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন। পরে তিনি কোটালীপাড়া পৌর ভবনের উদ্বোধন এবং  বঙ্গবন্ধু দারিদ্র বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এ সময় তিনি তার নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়ার শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সড়ক ব্যবস্থার পশ্চাদপদতার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে ব্যাপক উন্নয়নের প্রতিশ্র“তি দেন। জনসভা শেষে বিকেল চারটার দিকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকার উদ্দেশে তিনি রওয়ানা হন। উল্লেখ্য, মহাজোট সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী এই প্রথম তার নির্বাচনী এলাকা কোটালীপাড়া সফর করেন।

ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করুক চান না খালেদা
বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে শিক্ষাবিমুখ আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া করুক এটা বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া চান না। তিনি নিজের দু’ছেলেকে লেখাপড়া শেখাননি। তারা শিক্ষার জন্য সরকারি টাকা নিলেও এক ছেলে ডিগ্রি নিয়েছে ড্রাগ খাওয়ায়, অন্যজন নিয়েছে দুর্নীতি ও অর্থপাচারের ডিগ্রী। গতকাল বুধবার বিকেলে কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষনে তিনি উল্লেখিত কথাগুলো বলেন। খালেদা জিয়া নিজে এতিমদের টাকা চুরি ও কালো টাকা সাদা করেছেন বলে অভিযোগ তোলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি পরিসংখ্যান টেনে বলেন, ১৯৯৬ সনে ক্ষমতায় গিয়ে ৪৫ শতাংশ স্বাক্ষরতার হার পেয়েছিলাম। ৫ বছরের মধ্যে আমরা তা ৬৫.৫ শতাংশে উন্নীত করেছিলাম। এরপর বিএনপি ক্ষমতায় ছিলো। এবার আমরা ক্ষমতায় গিয়ে স্বাক্ষরতার হার পেলাম ৫০ শতাংশ। বিএনপি চাইলে এ হার আরো বাড়তে পারতো বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। এ সময় তিনি আরো বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকা মানেই লুটপাট দুর্নীতি, দেশের টাকা বিদেশে পাচার। আর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলে দেশের মানুষ সেবা পায়। এরআগে আমরা মোবাইল সহজলভ্য করেছিলাম। এবার সস্তায় ল্যাপটপের ব্যবস্থা করেছি। চাকরি না পেলে মানুষ যাতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সেজন্য আওয়ামীলীগ সরকার ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার ব্যবস্থা করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী কোটালীপাড়ায়
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে হেলিকপ্টার যোগে তার নিজ নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া পৌঁছেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে কোটালীপাড়া উপজেলা পরিষদ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উম্মোচন শেষে দোয়া-মোনাজাত করেন। পরে তিনি কোটালীপাড়া পৌর ভবনের শুভ উদ্বোধন ও বঙ্গবন্ধু দারিদ্র বিমোচন ও পল্লী উন্নয়ন একাডেমীরর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এসময় এলজিইআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য ও জাতীয় সংসদের সাবেক চীফ হুইপ আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, এলজিইআরডি প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, আফম বাহাউদ্দিন নাসিম-সহ আওয়ামীলীগ ও তার সহযোগী সংগঠেনের র্শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। দুপুর সোয়া ২ টায় জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগ আয়োজিত কোটালীপাড়ার শেখ লুৎফর রহমান সরকারি কলেজ মাঠের জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষন দেন।

সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়েছে পুলিশ কর্মকর্তা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার ছবি তুলতে গিয়ে এক পুলিশ অফিসারের রোষানলে পরেছেন বরিশাল থেকে প্রকাশিত দৈনিক শাহনামার ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি দেলোয়ার হোসেন সেরনিয়াবাত। সাংবাদিক দেলোয়ার হোসেন জানান, জনসভাস্থলে আইন শৃংখলা নিয়ন্ত্রনের কাজে নিয়োজিত পুলিশ অফিসার রোকন তাকে নাজেহাল করে তার কাছ থেকে জোড়পূর্বক ক্যামেরা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। বিষয়টি তাৎক্ষনিক ভাবে তিনি (সাংবাদিক দেলোয়ার) জনসভাস্থলে উপস্থিত আওয়ামীলীগ নেতাদের অবহিত করেও কোন সুফল পাননি।