বরিশালের দূর্গা সাগর যে কারনে অতিথি পাখি শুন্য

উম্মে রুমান, বরিশাল ॥ বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মাধবপাশার দূর্গা সাগরের ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। এক সময় অতিথি পাখির অভয়ারন্য মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি হত। এখন আর আগের মত অতিথি পাখি আসে না এখানে।

এক সময় ছিল যখন শীত মৌসুম আসার সাথে সাথে দূর্গা সাগরে অতিথি পাখিরা ভিড় জমাতো। বিনোদন কেন্দ্রটির রূপ ও সৌন্দর্য দিন দিন পাল্টে যাচ্ছে। দূর্গা সাগর ঘেরা পার্ক এখন নেশাখোর ও বখাটেদের দখলে চলে গেছে। গত দুই বছর পূর্বেও নানা প্রজাতির অতিথি পাখি এসেছিলো এ সাগরে। কিন্তু এ বছর মোটেই অতিথি পাখি দেখা যাচ্ছে না। পাখি না আসার অন্যতম কারণ হিসাবে এলাকাবাসী বলেছে পর্যটক ও স্থানীয় উচ্ছৃঙ্খল যুবকদের শিকারের কবলে পরে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও দূর্গা সাগরের পার্শ্ববর্তী বাবুগঞ্জ-বরিশাল-বানারীপাড়া সড়কে গাড়ীর হর্ন বাজানো নিষেধ থাকলেও গাড়ীর চালকরা তার তোয়াক্কা করছে না। তারা তাদের ইচ্ছা মতো হর্ন বাজিয়ে চলাচল করছে। ফলে ওই শব্দে অতিথি পাখিদের না আসার কারণ। আর অতিথি পাখিদের বিচরণ ক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে দূর্গা সাগরের সুনাম ছিল পুরো দেশ ব্যাপী। বিশেষ করে শীত মৌসুম এলে দেশে-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এ পাখিদের বিচরণ দেখার জন্য দূর্গা সাগরে ভীড় জমাতো অসংখ্য পর্যটক ও দশর্নাথীরা। তখন হাজার হাজার অতিথি পাখি এ সাগরে পাখা মেলে ভেসে বেড়াত। সে যেন এক অপরূপ দৃশ্য। ধীরে ধীরে দূর্গা সাগরের সেই ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে।

পাখিদের হারিয়ে যাবার সাথে সাথে দূর-দূরান্ত থেকে আগত বনভোজন পার্টিও দূর্গা সাগর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এখন আর আগের মত কেউ দূর্গা সাগরে বনভোজন করতেও আসে না। যাকে ঘিরে এ দূর্গা সাগরে প্রাকৃতিক সুন্দর্য ফুটে উঠেছে সেই অতিথি পাখি আগের মত না আসায় বনভোজন স্পটটিও বিলুপ্তি হবার পথে। তাছাড়া অসামাজিক কার্যকলাপ এখন নিত্য দিনের ব্যাপার। প্রায় দিনই এখানে এসে প্রেমিক যুগল অসামাজিক কার্যকলাপ করায় এলাকার উচ্ছৃঙ্খল যুবকরা এ নিয়ে হট্টগোল করে।

মাদক ও বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনা করতে এখানে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট গ্র“পও তৈরী হয়েছে। অনেক দর্শনার্থী দিনের বেলাও সেখানে যেতে ভয় পায়। বর্তমানে দূর্গা সাগরের অবস্থা খুবই করুন। পারিবারিক বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে এ সাগরের সুনাম ছিল পুরো বরিশাল জেলা সহ দক্ষিণ অঞ্চলবাসীর কাছে। এখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা অতিথি পাখি দেখার জন্য সাগর পাড়ে আসছে কিন্তু অতিথি পাখির দেখা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে।

স্থানীয় রফিকুল ইসলাম বলেন প্রতিটি সরকারের আমলে দূর্গা সাগরের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য দেয়া হয় প্রতিশ্রুতি। আর এ প্রতিশ্র“তি দেয়াটা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে। তিনি বলেন দক্ষিণ অঞ্চল বাসীর জন্য একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র হিসাবে দূর্গা সাগরের পুরনো সুনাম, ঐতিহ্য ও প্রকৃতির রূপ ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট মহলের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করা প্রয়োজন। তা না হলে আর কখনও আসবে না দূর-দূরান্ত থেকে অতিথি পাখি, যাবেনা কোন পর্যটক ও দর্শনার্থীরা।