জুমলা ডেভেলপারদের জন্য – জুমল্যান্সার্স – জাকারিয়া চৌধুরী

জুমলা পরিচিতি:
জুমলা (Joomla) হচ্ছে একটি Content Management System বা CMS যা দিয়ে অনায়াসে যেকোন ধরনের ওয়েবসাইট, কোন ধরনের প্রোগ্রামিং বা টেকনিক্যাল জ্ঞান ছাড়াই তৈরি করা সম্ভব। সহজ ইন্টারফেস এবং নিজের ইচ্ছেমত এটিকে পরিবর্তন করে নেবার ক্ষমতা জুমলাকে একটি শক্তিশালী ওয়েবসাইট তৈরির সফটওয়্যারে পরিণত করেছে। সর্বোপরি জুমলা একটি উন্মুক্তসোর্স সফটওয়্যার যা জুমলার ওয়েবসাইট থেকে বিনামূল্যে সংগ্রহ করা যায়। জুমলার সাইটের ঠিকানা হচ্ছে – www.joomla.org । জুমলা PHP এবং MySQL দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। তাই জুমলা ইন্সটল করতে প্রথমে কম্পিউটারে এপাচি ওয়েব সার্ভার ইন্সটল করে নিতে হবে।

জুমলা দিয়ে প্রতিনিয়ত অসংখ্য ওয়েবসাইট তৈরি হচ্ছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে –

  • কর্পোরেট ওয়েবসাইট বা পোর্টাল
  • কর্পোরেট ইন্ট্রানেট এবং এক্ট্রানেট
  • অনলাইন ম্যাগাজিন, সংবাদপত্র এবং বিভিন্ন ধরনের প্রকাশনা
  • ই-কমার্স সাইট এবং অনলাইন রিজার্ভেশন
  • সরকারী বিভিন্ন সাইট
  • মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসার জন্য ওয়েবসাইট
  • অলাভজনক এবং বিভিন্ন সংস্থার ওয়েবসাইট
  • কমিউনিটি নির্ভর পোর্টাল
  • বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট
  • ব্যক্তিগত বা পারিবারিক হোমপেইজ

জুমল্যান্সার্স সাইট পরিচিতি:
জুমলা দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করে যারা অনলাইনে আয় করতে আগ্রহী, তাদের জন্য চমৎকার একটি ফ্রিল্যান্স আউটসোর্সিং সাইট হচ্ছে – জুমল্যান্সার্স। সাইটটির ঠিকানা হচ্ছে – www.joomlancers.com । প্রতিদিন সাইটটিতে প্রায় ১২৫ থেকে ১৫০ টি প্রজেক্ট পাওয়া যায়। সাইটে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার বায়ার বা ক্লায়েন্ট এবং প্রায় ৭ হাজার জুমলা ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপার রেজিষ্ট্রেশন করেছে। এই সাইটে কমিশন হিসেবে প্রতিটি প্রজেক্টের ২০% অর্থ কোডারকে পরিশোধ করতে হয়। সাইটের গোল্ড মেম্বারদেরকে কোন ফি পরিশোধ করতে হয় না। একজন সাধারণ ব্যবহারকারী মাসে ১৫ টি বিড করতে পারবে, অন্যদিকে একজন গোল্ড মেম্বার মাসে ১৫০ টি বিড করতে পারে। গোল্ড মেম্বার হতে হলে প্রতি মাসে ৩০ ডলার করে পরিশোধ করতে হয়। তবে ৯৫ ডলার দিয়ে এক বছরের জন্য গোল্ড মেম্বার হওয়া যায়। সাইটিতে রেজিষ্ট্রেশন করার জন্য কোন ফি দিতে হয় না, উপরন্তু রেজিষ্ট্রেশন করার পর প্রত্যেক ফ্রিল্যান্সারকে ২ ডলার বোনাস প্রদান করা হয়।

জুমল্যান্সার্স যেভাবে কাজ করে:
জুমল্যান্সার্স সাইটটি অন্যান্য সাধারণ ফ্রিল্যান্সিং সাইটের মতই কাজ করে –
১) প্রথমে বায়ার/ক্লায়েন্ট একটি নতুন প্রজেক্ট পোষ্ট করে।
২) ফ্রিল্যান্সারা ওই প্রজেক্টে বিড বা আবেদন করে।
৩) তাদের মধ্য থেকে বায়ার একজন ফ্রিল্যান্সারকে নির্বাচিত করে।
৪) এরপর বায়ার সাইটির Escrow একাউন্টে প্রজেক্টের সম্পূর্ণ টাকা জমা রাখে, যা কাজ সম্পন্ন হবার পর ফ্রিল্যান্সারকে টাকা পাবার নিশ্চয়তা প্রদান করে।
৫) ফ্রিল্যান্সার তার কাজ শুরু করে এবং সম্পন্ন হবার পর বায়ারের কাছে পাঠিয়ে দেয়।
৬) প্রজেক্ট সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে বায়ার কাজটি গ্রহণ করে এবং পরিশেষে Escrow থেকে টাকা ফ্রিল্যান্সারের একাউন্টে চলে আসে।

প্রজেক্টের প্রকারভেদ:
সাইটিতে Joomla ছাড়াও Drupal, osCommerce, WordPress এর অল্প সংখ্যক কাজ পাওয়া যায়। সাইটের প্রথম পৃষ্ঠায় সর্বশেষ প্রজেক্টগুলো প্রদর্শন করা হয়। একটি প্রজেক্টে বায়ার তার চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য যোগ করতে পারে। বৈশিষ্ট্যগুলো হচ্ছে –

  • Featured Project: এই ধরনের প্রজেক্টে একজন ফ্রিল্যান্সার তার ব্যক্তিগত তথ্য যেমন ইমেইল ঠিকানা, ইন্সন্ট্যান্ট ম্যাসেঞ্জার আইডি, ফোন নাম্বার ইত্যাদি বায়ারকে প্রদান করতে পারে। ফলে বায়ার প্রয়োজনে ফ্রিল্যান্সারদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারবে।
  • Gold Member Project: শুধুমাত্র গোল্ড মেম্বাররা এই ধরনের প্রজেক্টে বিড করতে পারে।
  • Sponsored Project: এই ধরনের প্রজেক্টে বায়ার নিজের ব্যক্তিগত যোগাযোগের তথ্য প্রদান করতে পারে।
  • Hide Bidding Project: এই ধরনের প্রজেক্টে একজন ফ্রিল্যান্সারের বিডের মূল্য অন্যরা দেখতে পায় না।
  • Nonpublic Project: এই ধরনের প্রজেক্টগুলোকে সার্চ ইঞ্জিনের স্পাইডার থেকে লুকিয়ে রাখা হয় এবং শুধুমাত্র লগইন করার পর প্রথম পৃষ্ঠায় দেখা যায়।
  • Private Project: এই ধরনের প্রজেক্টে কেবলমাত্র আমন্ত্রিত ফ্রিল্যান্সারাই বিড করতে পারে।
  • Location Project: বায়ারের ঠিক করে দেয়া দেশের ফ্রিল্যান্সাররাই এই ধরনের প্রজেক্টে বিড করতে পারে।
  • Urgent Project: এই ধরনের প্রজেক্টে বিড করার সময়সীমা হচ্ছে ৩ দিন।

একটি প্রজেক্টে বিড করার পদ্ধতি:
এই সাইটে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে বিড করতে হয়। অর্থাৎ একজন ফ্রিল্যান্সারের বিডে উল্লেখিত মূল্য, সময় এবং মন্তব্য যে কেউ দেখতে পায়। তবে বায়ার ইচ্ছে করলে তথ্যগুলো গোপন রাখতে পারে। বিড উন্মুক্ত থাকলেও PM বা প্রাইভেট ম্যাসেজ অপশনের মাধ্যমে বায়ারের সাথে একান্তভাবে যোগাযোগ করা যায়। বিড করার জন্য প্রথমে সাইটে রেজিষ্ট্রেশন এবং লগইন করে নিতে হবে। একটি প্রজেক্ট পৃষ্ঠার নিচের অংশে বিড করার ফরম পাওয়া যায় যাতে আপনার বিডের মূল্য, প্রজেক্ট সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাব্য সময়, নিজের সম্পর্কে বর্ণনা, বায়ারের সাথে একান্তভাবে যোগাযোগ করার জন্য PM ইত্যাদি তথ্য দিতে হয়।

অর্থ উত্তোলনের উপায়সমূহ:
জুমল্যান্সার্স সাইট থেকে তিনটি পদ্ধতিতে অর্থ উত্তোলন করা যায়। প্রথম পদ্ধতি হচ্ছে Paypal – যা আমাদের দেশে সাপোর্ট করে না। দ্বিতীয় পদ্ধতি হচ্ছে MoneyBookers – এটি দিয়ে অর্থ উত্তোলন করতে জুমল্যান্সার্স সাইটকে ১ ডলার চার্জ দিতে হয়। পরবর্তীতে www.MoneyBookers.com সাইট থেকে আরেকটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিয়ে আপনার মাস্টার্ড কার্ড বা ব্যাংকে টাকা স্থানান্তর করতে পারবেন। তৃতীয় পদ্ধতি হচ্ছে Wire Transfer – যা দিয়ে সরাসরি আপনার ব্যাংক একাউন্টে টাকা নিয়ে আসতে পারবেন। এর জন্য খরচ পড়বে ৩৫ ডলার।

পরিশেষে:
জুমলা দিয়ে কোন রকম প্রোগ্রামিং ছাড়াই ওয়েবসাইট তৈরি করা সম্ভব হলেও নতুন কোন মডিউল বা ফিচার তৈরি করতে অবশ্যই আপনাকে প্রোগ্রামিং জানতে হবে। জুমল্যান্সার্স সাইটে জুমলা সেটাপ করা থেকে শুরু করে, টেম্পলেট ডিজাইন করা, মডিউল/প্লাগইনস তৈরি করা, কোড পরিবর্তন করা, অন্য একটি ওয়েবসাইটকে ক্লোন করা, জুমলার কনফিগারেশন পরিবর্তন করা ইত্যাদি কাজ পাওয়া যায়। অর্থাৎ জুমলার প্রোগ্রামার, ডিজাইনার, ওয়েবমাস্টার – সবার জন্যই জুমল্যান্সার্স হতে পারে আদর্শ অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস।