কালকিনিতে যোগাযোগমন্ত্রীর নামের সম্প্রসারণ!

পূর্ণ হয়েছে। ২০০৯সালের এই দিনে মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহন করেছিল। ২বছর অতিক্রমে সবচেয়ে বেশী আশাহত হয়েছে আ’লীগের শক্ত ঘাটি হিসেবে পরিচিত মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সাধারণ মানুষ। মহাজোট সরকারের ২বছরে মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের চাকা না ঘুরলেও স্থানীয় সাংসদ সৈয়দ আবুল হোসেন যোগাযোগমন্ত্রী হওয়ার পরেও কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নামের সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছেন। নামের খ্যাতি বৃদ্ধিতে তার চিন্তা-চেতনার যেন শেষ নেই। ১টাকার কোনো কিছু মানুষকে দেয়া থেকে শুরু করে সর্বত্রই তার নাম ও ছবি দেখা যাচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দিয়েছেন যা তা নেই কিন্তু আছে তার নাম, প্রচার হচ্ছে, হবে অনেক বছর। তিনি মানুষকে সাহায্য বা সহযোগীতা না কি নামের বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন? আগন্তুকদের এমন প্রশ্নের জবাব দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।

জানা গেছে, যে কোনো ধরনের নির্বাচনই হোক না কেন তাতে প্রার্থী নয় আ’লীগকেই ভোট বা সমর্থণ দিয়ে থাকে উপজেলার সাধারণ মানুষ। ১৯৯২সালের পর থেকে প্রত্যেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ’লীগের প্রার্থী হিসেবে সৈয়দ আবুল হোসেন নির্বাচিত হয়ে আসছেন। সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সৈয়দ আবুল হোসেন নির্বাচিত হলে মহাজোট সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রণালায়ের দায়িত্ব পান। বছরের পর বছর ধরে উন্নয়ন বঞ্চিত উপজেলাবাসী আশায় বুক বাঁধে উন্নয়নের। কিন্তু তাতে গুড়ে বালি। ২বছর পার হলেও দূর্ভাগা উপজেলাবাসীর ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারেন নি। উপজেলার রাস্তা-ঘাটগুলোতে যাতায়াত করতে হলে বাড়ি থেকে ওযু করে বের হতে হয়। মহাজোট সরকারের ২বছরের মুল্যায়নে নির্বাচনী এলাকা কালকিনিতে তিনি উন্নয়নে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন বলে সাধারণ মানুষের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে। তবে তিনি স্বার্থক হয়েছেন নিজের নাম প্রচার কাজ সম্প্রসারণে। গত বছর পৌর এলাকার উন্নয়নে ২৫কোটি টাকার প্রতিশ্র“তি দিলে পৌরসভার বাজেটে অন্তভূক্ত হয়ে ব্যাপক প্রচারিত হয়।

কিন্তু তা আজ অবধি বাস্তবায়ন তো দুরের কথা তা কোন অবস্থায় আছে জানা যায়নি। যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দিন দিন আরো চরম দূর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। তিনি উপজেলা আ’লীগের ব্যানারে গত বছর নিজেই কোটি টাকা ব্যয় করে সংবর্ধনা নিতে এসে সারা দেশে আলোচিত হয়েছিলেন। তার পরও ক্ষ্যান্ত দেননি। মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষদের মধ্যে তিনি হাজার হাজার গাছের চারার সাথে কয়েক গুন টাকা বেশী ব্যয় করে নিজের নাম সম্বোলিত সাইনবোর্ড বিতরণ করেছেন যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কৌতুহলের অন্ত নেই। এমনকি জনবহুল স্থানের প্রতিষ্ঠানগুলোতে তার গাছের চারাসহ সাইনবোর্ড পুঁতে রাখা হয়েছে। তার গাছের চারা না থাকলেও নামের সাইনবোর্ড বিভিন্ন এলাকায় আজো দেখা যাচ্ছে। ঈদুল ফিতরের সময় দারিদ্র মানুষের মাঝে তিনি গেঞ্জি বিতরণ করেছেন। প্রত্যেকটি গেঞ্জির মূল্য অল্প কিছু টাকা হলেও নাম ও ছবি দিতে তিনি কার্পণ্য করেন নি। তার নাম ও ছবি সম্বোলিত গেঞ্জি হাট-বাজারগুলোতে এখনো দেখা যাচ্ছে।

বিগত দিনে ৭/৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করায় তার নিজের নামে নামকরণ করেছেন। কিছু দিন আগে তার নামের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এমপিও ভূক্ত হওয়ায় তার নাম ও ছবি সম্বোলিত পোষ্টারে ছেয়ে গেছে সর্বত্র। এমনকি স্থানীয়দের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয়ে প্রতিষ্ঠিত এবিসি কলেজও তিনি নিজের নামে নামকরণ করেছেন। সম্প্রতি তিনি উপজেলার সর্বত্র তার প্রতিষ্ঠিত কোম্পানীর নামের হাজার হাজার কপি ক্যালেন্ডার নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে বিতরণ করেছেন। এমনকি তার এ ক্যালেন্ডার বিতরণে পৌরসভা নির্বাচনের কিছু কাউন্সিলর প্রার্থী যোগাযোগমন্ত্রীর সমর্থণ বলে প্রচার করছে। শুধু কালকিনিতেই নয় যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে তিনি বিভিন্ন সময়ে নানা ঘটনার জন্ম দিয়ে সারা দেশে আলোচিত হয়েছেন। তবে কালকিনি উপজেলার উন্নয়নে তার উদ্যোগে নেয়া বড় বড় প্রকল্প বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে।