যুগী সম্প্রদায়ের দুর্দিন

ওই পাড়ার অপর বাসিন্দা বিবেক হালদার জানান, একসময় আগৈলঝাড়াসহ গৌরনদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নদী-নালা, খাল-বিলে ও পুকুরে প্রচুর পরিমানে শামুক ও ঝিনুক পাওয়া যেতো। ওইসবস্থান থেকে শামুক সংগ্রহ করে চুন তৈরি করা হতো। এখন আর সেই আগের মতো শামুক ও ঝিনুক পাওয়া যায় না। তিনি আরো জানান, ৪০ কেজি শামুকের টোকরা পোড়াতে দেড় মন জ্বালানী কাঠ (লাকড়ি) প্রয়োজন। এ পোড়া শামুক একটি পাঁকা করা গর্তে রেখে বাঁেশর ও কাঠের গাইনের সাহায্যে চুর্ণ করে পরিমান মতো পানি দিয়ে চুন তৈরি করা হয়। এক মন চুন তৈরি করতে দু’জন শ্রমিকের ৬ ঘন্টা সময় লাগে। প্রতিমন চুন বিক্রি করলে তাদের লাভ হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকা। বর্তমানে বিভিন্ন মৎস্য ঘেরে শামুক নেয়ায় যুগীদের শামুক সংকটে পরতে হয়। যা পাওয়া যায় তাও চড়ামূল্যে ক্রয় করতে হয় বলেও তিনি জানান।

যুগীপাড়ার বিজয় কৃষ্ণ হালদার জানান, ৩ কেজি শামুক পোড়ালে ১ কেজি গুড়া চুন ও পানি চুন করা হলে ৫ কেজি হয়। এক কেজি গুড়া চুন ২০ টাকায় ও পানি চুন ১০ টাকায় বিক্রি করা হয়। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, চুন তৈরি কইরা এ্যাহন আর মোগো সোংসার চলে না। মোগো পাড়ার অনেকেই বাপ-দাদার পেশা ছাইরা অন্য কাম (কাজ) করছে। আগে মোগো বিভিন্ন এনজিও থেইক্কা লোন (ঋণ) দেতো। পেশা স্থায়ীত্ব না থাহায় এ্যাহন আর মোগো কোন এনজিও লোন দ্যায়না। তিনি আরো জানান, আগে যত্রতত্র স্থানেও শামুক পাওয়া যেত। আর এখন প্রতিবস্তা শামুক ৪ থেকে সাড়ে ৪ ’শ টাকায় ক্রয় করতে হয়। চড়ামূল্য থাকা সত্বেও অর্থাভাবে তারা শামুক ও ঝিনুকের টোকরা ক্রয় করতে না পারায় চুন তৈরি করতে পারছেন না। তাই যুগী পল্লীর বাসিন্দারা তাদের এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য সরকারি সহযোগীতা কামনা করেছেন।