আগৈলঝাড়ায় উৎসাহ উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে রথযাত্রা পালিত

ধর্মের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব রথযাত্রা বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যর মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে।  উপজেলা সদরে শ্রী শ্রী বিষ্ণুমন্দির থেকে হাজার হাজার হিন্দু ধর্মাবলম্বী রথটেনে ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমী মাঠে এসে জড়ো হয়। এসময় পাবলিক একাডেমী মাঠে মেলায় বিভিন্ন ধর্ম ও মতের লোকজন কেনাকাটা করে। দূর-দূরান্ত থেকে এসে ভক্তরা রথ টানেন পুণ্যের আশায়। এছাড়াও উপজেলার রথবাড়ি নামক স্থানে রথযাত্রা উৎসব পালন হয়েছে। অন্যদিকে রথখোলা নামক স্থানে রাজনৈতিক ভূমিদস্যুরা রথের জায়গা জবর দখল করে ব্যবসা বানিজ্য করার ফলে ওই স্থানে রথযাত্রা উৎসব পালিত  হয়নি। দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে বছরের পর বছর ক্ষোভের সৃষ্টি হলেও স্থানীয় প্রশাসন রথখোলার জায়গা দীর্ঘদিনেও অবমুক্ত করেনি।

পৌরানিক মতে, বিষ্ণু ভক্ত রাজা ইন্দ্র দ্যুু ভগবান শ্রী কৃষ্ণের সাক্ষাত লাভের জন্য অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। তিনি ভগবানের দর্শণ না পেয়ে অনশন করতঃ প্রাণ বিসর্জনের সংকল্প করেন। তখন জগন্নাথ স্বপ্নে তাকে বলেন, “তুমি চিন্তা করিও না, সমুদ্রে ‘বাঙ্কমুহান’ নামক স্থানে দারুব্রহ্মরূপে ভাসতে ভাসতে আমি তোমার দ্বারে উপস্থিত হব।” রাজা সৈন্য সামন্ত নিয়ে ওই স্থানে গেলেন এবং যথাসময়ে শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্মাকৃত শ্রী দারুব্রহ্মকে দেখলেন। সেই কাঠখন্ড (দারুব্রহ্ম) কে রাজা অনেক বলবান লোক, হাতি প্রভৃতি দ্বারা উঠালেন এবং ২১ দিন তিনি যে কক্ষে বিগ্রহ তৈরির কাজ করবেন সেই দ্বার খোলা যাবেনা এই শর্তে এক ভাস্কর জগন্নাথ দেবের মূর্তি তৈরিতে সম্মত হলেন।  কিন্তু গৃহাভ্যান্তর থেকে বিগ্রহ নির্মানের কোন আওয়াজ শুনতে না পেয়ে ১৬ দিন পর অধৈর্য হয়ে রুদ্ধ দ্বার খুলে দেখেন সেখানে পরিপুর্ণ কোন ভাস্কর্য  নেই। পরে আছে শুধু শ্রী শ্রী জগন্নাথ, শ্রী বলরাম এবং সুভদ্রাদেবীর অসম্পন্ন বিগ্রহ, যে বিগ্রহ আজ আমরা দেখেথাকি। অন্যদিকে বৃন্দাবন ত্যাগ করে শ্রীকৃষ্ণ দ্বারকার রাজা হলেন। ব্রজবাসীরা কৃষ্ণ দর্শনে পাগল প্রায়। সূর্যগ্রহণ উপলক্ষে শ্রীকৃষ্ণ, বলরাম, সুভদ্রা সহ দ্বারকার অনেকেই কুরুক্ষেত্রে গিয়েছিলেন। সেখানে ব্রজবাসীরাও ছিলেন, শ্রীকৃষ্ণকে তার বাল্যলীলাস্থান বৃন্দাবনে নিয়ে আসতে চাইলেন। কৃষ্ণ ভক্তরা তাদের প্রাণের কৃষ্ণকে রাজবেশে নয় ব্রজবেসে দেখে তার সহচর্য্য পেতে  উন্মুখ হলেন। ব্রজবাসীগণ কৃষ্ণ বলরাম ও সুভদ্রাকে রথের ঘোড়া ছেরে দিয়ে নিজেরাই রথ টেনে বৃন্দাবসে নিয়ে এলেন। এই লীলাকে স্মরণ করে ভক্তরা আজও পুরির জগন্নাথ মন্দির থেকে  বৃন্দাবনে রথ টেনে নিয়ে আসেন। সারা ভারতবর্ষে সেই থেকে রথযাত্রার প্রচলন আজ অবদি ধর্মীয় ভাবগাম্ভির্যর মধ্যে দিয়ে পালন করে আসছে।